মোঃ শাহিন (সাংবাদিক)
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে কিছু কথা কলমে
আজ ৫ অক্টোবর, বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিনটি বিশ্বজুড়ে শিক্ষকদের সম্মান জানানোর এবং তাদের অসামান্য অবদানকে স্মরণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। শিক্ষকেরা আমাদের সমাজের মূল ভিত্তি, যারা জাতি গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু এই মহান পেশার সম্মান ও মর্যাদা অনেক সময় তার প্রাপ্য অনুযায়ী হয় না, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্রটি বেশ জটিল ও দুঃখজনক।
বাংলাদেশে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার প্রাথমিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন, অথচ তাদের বেতন-ভাতা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়েছে, তা শিক্ষক সমাজের মধ্যে হতাশা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এ কারণে ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবি শিক্ষকদের মধ্যে একটি প্রধান দাবি হিসেবে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজ শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা শিশুদের মানসিক বিকাশ, নৈতিক শিক্ষা, এবং দেশপ্রেমের বীজ বপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্তু এর পরেও তারা পর্যাপ্ত সম্মান ও আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। একদিকে, অষ্টম শ্রেণি পাস ড্রাইভারের বেতন গ্রেড ১২তম, অন্যদিকে স্নাতক সমমানের যোগ্যতা সম্পন্ন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেড ১৩তম। এই বৈষম্যের কারণে শিক্ষকদের মধ্যে যেমন হতাশা বাড়ছে, তেমনি নতুন প্রজন্মও শিক্ষাকতা পেশায় অনাগ্রহী হচ্ছে।
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা
—————————————————–
১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকদের আর্থিক এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না, যার প্রভাব পড়বে শিক্ষার মানের ওপর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ, তারা যেন এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণে উদ্যোগী হন। ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের যে মানসিক শক্তি এবং উৎসাহ প্রদান করা যাবে, তা শিক্ষার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।
শিক্ষকদের জন্য যথাযথ সম্মান ও মূল্যায়ন: সময়ের দাবি
———————————————————
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমরা কেবল শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই না, তাদের ন্যায্য অধিকারের বিষয়গুলোও স্মরণ করি। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের সম্মানজনক জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈষম্যমুক্ত একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে হলে শিক্ষকদের পূর্ণ মর্যাদা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি হলো ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন। এই দাবি শুধুমাত্র তাদের আয়ের মানোন্নয়নের জন্য নয়, বরং শিক্ষকদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্যও প্রয়োজন। সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা এবং সম্মান বৃদ্ধি পেলে শিক্ষাক্ষেত্রেও উন্নয়ন আসবে। তাই আজকের এই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমাদের প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিত, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য এবং বৈষম্যহীন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করা।