ঘর,প্রেম ও মানবতার গান
===================
🖊️হায়দার খালীদ
মাটির ঘরে সকাল আসে, ধোঁয়া ওঠে চুলোর ধারে,
মায়ের গলায় ঘুমপাড়ানি গান, শিশুরা ঘুম ভাঙে কারে?
খেজুর পাতার খড়ের ছাওয়া, পুকুরঘাটে ভেজা জল,
গৃহস্থালীর মায়া-গন্ধে বেঁচে ওঠে প্রাণের দল।
চাষার ঘামে সোনার দানা, মাঠে জন্মে ফসলের গান,
স্ত্রীর চোখে নীল দিগন্তে স্বপ্ন রাখে সারা প্রাণ।
কিশোর কিশোরী প্রেমে ভেসে নদীর তীরে বাঁধে আশা,
চিঠির পাতায় অক্ষর হয়ে ফুটে ওঠে ভালবাসা।
কিন্তু সমাজ! হায় সমাজ! আঁধার মাখা দেয়াল ঘেরা,
সত্যকে করে তুচ্ছ তারা, মিথ্যা পায় সোনার সেরা।
অসঙ্গতির বিষাক্ত শ্বাসে নষ্ট হয় কত হৃদয়,
অন্যায়ের রুদ্র ঝড়ে কেঁদে ওঠে দিগন্তময়।
তবুও প্রেম থামে না কিছুতেই—
হাতে হাত রেখে দু’জন মানুষ
বলে যায় ধ্বনি—আহবান,
“মানুষের আগে ধর্ম নয়,
মানবতার আগুনে জ্বলে সব আলোর নিশান।”
পাহাড় ডাক দেয় শক্তির মতো,
তাদের বুকে দাঁড়িয়ে থাকে শত সহস্র বছর,
নদী গেয়ে যায় চিরন্তন স্রোতের সুরে—
কখনো শান্ত, কখনো প্রলয় ভরা মহাস্বর।
যখন বন্যা নেমে আসে—
চোখের জলে ভেসে যায় ঘর,
শিশুরা হারায় নৌকার খোঁজে,
ধানের খেতে জমে শুধু শোকের ঘোর।
আবার কখনো খরা এসে,
পুড়িয়ে দেয় ধানের স্বপ্ন,
ফেটে যায় মাটির বুক,
শুকিয়ে যায় নদীর কণ্ঠ।
তবু এই অন্ধকার ভেদ করে
মানুষ দাঁড়ায় মানুষের পাশে,
ভাঙা ঘরে, ক্ষুধার রাতে
এক মুঠো ভাতও ভাগ হয় ভালোবাসায়।
প্রেম তখন শুধু দেহের নয়,
প্রেম তখন মানুষ বাঁচানোর হাত,
মানবতার গান হয়ে ওঠে
দুর্ভিক্ষের বুক ভেদ করা শক্তির বাতাস।
যতই আঁধার নামুক সমাজে,
যতই অন্যায় ছড়াক বিষ,
ঘরের আলো, প্রেমের গান,
পাহাড়-নদীর ডাক, আর মানবতা—
সবাই মিলে হয়ে ওঠে এক মহাকাব্য,
জীবনকে শেখায়—
“মানুষের জন্য মানুষই আশ্রয়,
মানবতার আগুনেই বাঁচে আগামী।”