বাংলা ভাষা,সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার প্রত্যয়ে Bengali International Literary Society (BILS) আয়োজিত ৩য় বার্ষিক Rockland Retreat and Book Fair নিউইয়র্কের রকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা Threefold Community-তে অনুষ্ঠিত দুই দিনের এ উৎসব রূপ নেয় বাংলা সাহিত্য,সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার এক প্রাণবন্ত উৎসবে।
এবারের উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘পিঠা’।বাংলা সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে পিঠার রূপ,রস ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নানা আয়োজন। সন্ধ্যায় উৎসবের সূচনা হয় স্বেচ্ছাসেবক পৃষ্ঠপোষকদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজের মাধ্যমে।
সকাল থেকে শুরু হয় মূল কর্মসূচি। প্রকৃতিনির্ভর সেশনের মধ্যে ছিল ফিটনেস ও যোগচর্চা,বনভ্রমণ ও সাঁতার। বিকেল ৩টা থেকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন BILS সভাপতি ধনঞ্জয় সাহা। উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন Das Family Foundation-এর চেয়ারম্যান শান্তনু দাস।প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুবাদক ও সাহিত্যিক ক্যারোলিন রাইট। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিদ্যা মুরালিধর, মাদালসা মোবিলি, ফকির ইলিয়াস,ফারহানা ইলিয়াস তুলি,ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ফেরদৈস খান।
উৎসবের এক অনন্য পরিবেশনায় আমেরিকান সংগীতদল ‘Meow’ পরিবেশন করে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং বাংলা ও ইংরেজিতে রবীন্দ্রসংগীত। অংশ নেয় Rockland Poets এবং Endeavor 21+ এর অটিস্টিক তরুণ-তরুণীরা, যারা পরিবেশন করে নিজেদের লেখা, সংগীত ও শিল্পকর্ম।পিঠা বিষয়ে আলোচনায় বঙ্গীয় ও আমেরিকান খাদ্য-সংস্কৃতির মিল-অমিল তুলে ধরেন টিটানিয়া গুপ্তা ও ড্যানিয়েল কার্টার। আর্ট থেরাপি ও মন্ডলা তৈরির মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি এবং সৃষ্টিশীলতার চর্চা দেখান জেনেট রদ্রিগাস ও দাফনা স্টার্ন।
নৈশভোজের পর পরিবেশিত হয় সংগীত, নৃত্য, কবিতা ও শ্রুতি-নাটক। সংগীত পরিবেশন করেন অনামিকা সাহা ও আমেরিকান গ্রুপ ডীপ পিস মিউজিক। শ্রুতি নাটক পরিবেশন করে অনুপ্রাস গ্রুপ।লেখালেখি ও প্রকাশনা বিষয়ক সেশনে দক্ষিণ ক্যারোলিনা থেকে জুমে যুক্ত হন হাওয়ার্ড র্যাঙ্কিন। আলোচনা করেন রকল্যান্ডের কবি লরেট হুয়ান পাবলো মোবিলি। তিনি কবিতা ও পিঠা প্রস্তুতকারকের মানসিক সৃজনশীলতার মিল নিয়ে বক্তব্য রাখেন।জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিষয়ক সেশনে যুক্ত হন স্টিফেন ওয়াটস ও ডেভিড লি মরগান। তাঁরা লন্ডন থেকে জুমে অংশ নিয়ে নজরুলের বিদ্রোহী ও নারী কবিতার ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করেন।
দুপুরে শুরু হয় সৃজনশীল লেখালেখি প্রতিযোগিতা,যেখানে অংশ নেয় ২৪ জন কবি ও লেখক। ইংরেজি বিভাগে প্রথম হন বন্নিএ মানাচাস, সম্মানজনক স্বীকৃতি পান বনেশা মুখার্জি। বাংলা বিভাগে প্রথম বিজয়ীর নাম তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
এরপর ছোটদের নৃত্য পরিবেশন করে আড্ডা ডান্স একাডেমির শিশুশিল্পীরা। পরিচালনায় ছিলেন আলপনা গুহ ও সুমিত্রা সেন।কোরাস সংগীত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বহ্নিশিখা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও সঙ্গীত পরিচালক সবিতা দাস।আবৃত্তি করেন তাপস সাহা,বনানী সিনহা ও সুমিত্রা সেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট শিতাংশু গুহ, ডেমোক্রেটিক দলের ডিস্ট্রিক্ট লিডার ও লেখক দিলীপ নাথ, লেখিকা দীপা নাথ, সঙ্গীতশিল্পী গোপা পাল মুক্তা, সাপ্তাহিক সন্ধান সম্পাদক সনজীবন সরকার, প্রথম আলো সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন লিটন, উদীচী যুক্তরাষ্ট্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কল্লোল দাশ, জ্যামাইকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিরো চৌধুরী, প্রজ্ঞা ফাউন্ডেশনের সিইও ও সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, ফটোগ্রাফার সৌমেন বিশ্বাসসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি।Endeavor 21+ এবং Music for Life-এর তরুণরাও পরিবেশন করে গান ও কবিতা। গত বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বনী মুখার্জি।সমাপনী পর্বে জীবনব্যাপী বাংলা সাহিত্যচর্চায় অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয় ক্যারোলিন রাইটকে। উৎসব শেষ হয় বারবিকিউ পার্টি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রাত ১১টায়।
সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিল SEEN Foundation, প্রজ্ঞা ফাউন্ডেশন ও প্রজ্ঞা নিউজ। এই উৎসবকে প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের সঙ্গে শিকড়ের সংযোগ তৈরির এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এ উৎসব ঘিরে ১৩ জুলাই নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এক সাংবাদিক সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লাবলু আনসার, কৌশিক আহমেদ, রতন তালুকদার, ইব্রাহীম চৌধুরী,সঞ্জীবন সরকার, কানু দত্ত, সুজন আহমদ, তোফাজ্জল লিটন, উত্তম কুমার সাহা, দীপক আচার্য, অজিত ভৌমিক, হাকিকুল ইসলাম খোকন, সাগর লোহানী ও তাপস সাহা।সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উদীচী যুক্তরাষ্ট্র সংসদের সভাপতি ক্ল্যারা রোজারিও, সাধারণ সম্পাদক কল্লোল দাশ, মনিকা রায় চৌধুরী, সুব্রত তালুকদার, খান শওকত, রফিকুল ইসলাম, হেনা বেগম, কাজী মোস্তফা, মোল্লা মনিরুজ্জামান, অপরাজিতা চৌধুরী ও ইসরাত বোখারী।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উত্তম কুমার সাহা ও বনানী সিনহা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন তাপস সাহা, গোপা পাল মুক্তা, রফিকুল ইসলাম, সনজীবন সরকার, খান শওকত, বনানী সিনহা, সুমা রোজারিও, রুনা রায় এবং সমবেত সংগীতে অংশ নেন মনিকা রায় চৌধুরী, রুনা রায়, গোপা পাল মুক্তা ও সুমা রোজারিও।২৭ জুলাই সকালে ধনঞ্জয় সাহা ও অনিমিতা সাহার উদ্বোধনের মাধ্যমে দ্বিতীয় দিনের সূচনা হয়। আলোচনা পর্ব শেষে ধনঞ্জয় সাহা উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।