পাহাড়ে শুরু বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা


তখনও চৈত্রের ভোরের আলো ফোটেনি। ফুটে ওঠেনি সূর্যের পরিপূর্ণ রূপ। এরমধ্যে ঐহিত্যবাহী পোশাকে সেজে নানা রঙের ফুল হতে নদীর পাড়ে আসতে শুরু করেছে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষ। ছোটরা এসেছে বাবা-মার হাত ধরে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতাসহ নানা রকমের ফুল নদীর জলের পূজা করে। নদীতে ফুল ভাসিয়ে দেবী গঙ্গার পূজার করার মাধ্যমে শুরু হয়েছে চাকমা সম্প্রদায়ের বিঝু উৎসব।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে ফুল ভাসিয়ে পূজা শুরু করেন চাকমা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এসময় চেঙ্গী ও মাইনী এলাকা মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। পাহাড়ের উৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
মূলত জলের দেবী গঙ্গার প্রতি আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি নতুন বছরে সুখ আর সমৃদ্ধির আশায় প্রার্থনা করা হয়। ফুল, নিম পাতা, মোমবাতি জ্বালিয়ে দেবী গঙ্গাকে তুষ্ট করার জন্য পূজা করা হয়। এক বছরের অপেক্ষা শেষে ফুল বিজুর উৎসব মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। কেউ একা, আবার অনেকে দলবদ্ধ হয়ে নানা রঙের ফুল গঙ্গা দেবির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে পাহাড়ের জলাধার। পুরোনো বছরের সব দু:খ, গ্লানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করতেই দেবী গঙ্গার পূজার আয়োজন করে চাকমারা।
তখনও চৈত্রের ভোরের আলো ফোটেনি। ফুটে ওঠেনি সূর্যের পরিপূর্ণ রূপ। এরমধ্যে ঐহিত্যবাহী পোশাকে
বাবা ও মায়ের সঙ্গে ফুল বিজুতে অংশ নেওয়া বর্নিতা চাকমা বলেন, আমরা গঙ্গা মায়ের উদ্দেশে ফুল দিয়ে পূজা করেছি। রাতেই ফুল সংগ্রহ করেছি। আজকে আমাদের মূল বিজু। অর্পিতা চাকমা বলেন, প্রতিবছর আমরা ফুল বিজু উদযাপন করি। এবার আমরা মা গঙ্গাকে প্রমাণ করে উদযাপন করছি। পরিবারের মঙ্গল কামনা করি। ভবিষ্যতেও যেন আমরা এভাবে উদযাপন করতে পারি।
শুভা রানী চাকমা বলেন, আমরা এখানে প্রতিবছর আসি। বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে পূজা করি। আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে এখানে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে। ফুল বিজুতে অংশ নেওয়া ডেসটিনি চাকমা বলেন, আমরা কাল রাতে ফুল সংগ্রহ করেছি। আজকে ভোরে এখানে এসে নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করেছি।
এর আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু উদযাপন কমিটি। হর্টিকালচার সংলগ্ন এলাকা থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি মাইনী নদীতে শেষ হয়। এতে শত শত মানুষ যোগ দেয় শোভাযাত্রায় অংশ নেয় সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল ওমর ফারুক ও উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদি হাসান। এসময় উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তখনও চৈত্রের ভোরের আলো ফোটেনি। ফুটে ওঠেনি সূর্যের পরিপূর্ণ রূপ। এরমধ্যে ঐহিত্যবাহী পোশাকে
বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু উদযাপন কমিটি উপদেষ্টা সমির চাকমা বলেন, নদীতে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে ফুল বিঝুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আজকের দিনে নদীতে ফুল ভাসিয়ে আমরা দেশের মঙ্গল কামনা করি। দেশের মানুষ এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে পুরাতন বছরের অতীত ভুলে নতুন বছর আরো সুখ ও সমৃদ্ধির হোক।
এছাড়াও ফেনী নদীসহ বিভিন্ন জলাধারে ফুল দিয়ে গঙ্গা দেবির অর্চনা করেছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত চাকমা জনগোষ্ঠীর নানা বয়সী লোকজন। ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে ফুল বিজু উৎসব শুরু, আগামীকাল মূল বিজু এবং শেষ দিন নতুন বছর বা গজ্জ্যাপজ্জ্যা পালন করা হবে।