রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২
রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে ১৫ হাজার পরিবার

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪, ৬:১৭ পিএম | 75 বার পড়া হয়েছে
রূপগঞ্জে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে ১৫ হাজার পরিবার

টানা কয়েক দিনের বর্ষণে রূপগঞ্জের ৩০ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। তাদের দুর্ভোগ চরমে। ভেসে গেছে মাছের খামার। গত কয়েক দিনের অতি বৃষ্টিতে ও অপরিকল্পিতভাবে সেচ প্রকল্প নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ও মাঠে এবং রূপগঞ্জ থানার সামনের সড়কে হাঁটু সমান পানি। নির্মাণাধীন ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ চরমে। উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে মানুষ। আকাশে মেঘ জমলেই নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের ভেতরে বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়।
১৯৮৪ সালে ৯০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্বপারের পাঁচ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেচ প্রকল্প নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছর পরেই এখানে শুরু হয় জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার তারাবো পৌরসভার গন্ধর্বপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের নিচ তলার সকল শ্রেণিকক্ষ ও মাঠে হাঁটু সমান পানি। তাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এছাড়া গোলাকান্দাইল, মধ্যপাড়া, তারাবো, বৌবাজার, বরপা, ভুলতা, দক্ষিণপাড়া, খালপাড়, নাগেরবাগ, মদিনানগর, বাকমোর্চা, তারাবো পৌরসভার তেঁতলাবো, ইসলামবাগ, নতুন বাজার, কান্দাপাড়া, বলাইখা, বিজয়নগর, পশ্চিম কান্দাপাড়া, উত্তর মাসাবো, যাত্রামুড়া, রূপসী ও ভুলতা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, সোনাবো, পাঁচাইখা, ইসলামপুরসহ আশপাশের এলাকায় এখন জলাবদ্ধতা। বাড়ির উঠানে পানি। অনেকের ঘরেই হাঁটু থেকে কোমরপানি। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। জমির ফসল হলদে হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বাঁশের মাচার ওপর বসবাস করছে। কয়েকটি শিল্পকারখানায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। কোন কোন রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। রূপগঞ্জ থানার সামনের সড়কে হাঁটু সমান পানি। নির্মাণাধীন ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশায় জনদুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এ সড়কের নির্মাণ কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছে না। তাছাড়া শিল্পকারখানার নির্গত কেমিক্যাল ও দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানিতে দূষণ হয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়।
এদিকে চোরাবো-সমু মার্কেট সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বালু ও শীতলক্ষ্যাসহ নদ নদীর পানীও বেড়েছে। তারাবো পৌরসভার নিন্মাঞ্চলের বসতঘরে হাঁটু সমান পানি। টানা ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নিন্মাঞ্চলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা স্থায়ীরূপ নিয়েছে। কোন কোন স্থানে অব্যাহত বৃষ্টিতে সেতুর সংযোগ সড়ক ডুবে গেছে।
দেবৈই গ্রামের রানা মন্ডল বলেন, সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অতিকষ্টে চলছে নিম্ন আয়ের মানুষের সংসার। দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। শিল্পকারখানার নির্গত বর্জ্যে পানি নিষ্কাশন খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্পকারখানার নির্গত পানি কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে। এই পানিতে হাঁটাচলা করতে গিয়ে মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানির কীট-পতঙ্গসহ মাছ মরে যাচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বরপা শান্তিনগর গ্রামের রওশন আলী বলেন, ১০-১২ বছর ধরে এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে হাঁটু সমান পানি হয়। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের বাঁচতে হচ্ছে। কায়েতপাড়ার কামশাইর গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, তার ঘরে হাঁটুপানি। চুলায় আগুন জ্বালাতে পারেন না। ঘরে খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। শুকনো খাবার খেয়ে বাঁচতে হচ্ছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।
গোলাকান্দাইল এলাকার যুবদল নেতা রাজিব ভুঁইয়া বলেন, রূপগঞ্জ শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। সে কারণে জমির দাম বেশি। তুলনামূলকভাবে নিচু জমির দাম কম। তাই অনেকেই নিচু অঞ্চলে কম দামে জমি কিনে ঘরবাড়ি নির্মাণ করছেন। আর সে কারণেই নির্মিত ঘরবাড়িতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
মুড়াপাড়া দড়িকান্দী এলাকার বিএনপি নেতা মজিদ ভুঁইয়া বলেন, দড়িকান্দী, গঙ্গানগর, কুলীনপাড়া, সরকারপাড়া এলাকার নিন্মাঞ্চলের ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে কৃষকদের ফসলি জমি। বানিয়াদী এলাকার যুবদল নেতা কামাল হোসেন বলেন, স্থানীয় শিল্প কারখানা অপরিকল্পিভাবে স্থানে স্থানে বাঁধ নির্মাণ করায় ও বর্জ্য ফেলে পানি নি:ষ্কাশনের খাল বন্ধ করে দেওয়ায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আফরোজা সুলতানা বলেন, শতাধিক বিঘা জমির শাক-সবজি ও ১৫/২০ বিঘা জমির রোপা আমনের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকোশলী মেহমুদ মোর্শেদ উল আল-আমিন, অতি বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় চলাচলে কিছুটা বিঘœ ঘটছে। রাস্তা ঘাটের ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি নি:ষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রকিবুল আলম রাজিব বলেন, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প বøক-১ এর চারটি পাম্প ও অগ্রণী সেচ প্রকল্পে তিনটি সেচ পাম্প দিয়ে সার্বক্ষণিক পানি নি:ষ্কাশন করা হচ্ছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে। বেদখল খাল উদ্ধার, ভরাট হয়ে যওয়া সেচ খাল সংস্কার করা হলে, শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নির্গত করা হলে ও গণমানুষ সচেতন হলেই জলবদ্ধতা নিরসন সহজ হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও তারাবো পৌরসভা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ভেতরে পানি নি:ষ্কাশনের জন্য ৩১ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। এ খাল দিয়ে যাত্রামুড়ার পাম্পহাউজের ৩টি ও রূপসী পাম্পহাউজের ৪টি পাম্প দিয়ে দিনরাত পানি নি:ষ্কাশন করা হচ্ছে। রূপগঞ্জের তিনটি সেচ প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গার সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে তবে এক মাসের মধ্যে জলবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

অপি মুন্সী : শিবচর ( মাদারীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২:৪০ পিএম
ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

 

মাদারীপুরে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ইতালি প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারের আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।
রোববার দুপুরে মাদারীপুর শহরের একটি সাংবাদিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুমাইয়ার মা রুমি বেগম অভিযোগ করে বলেন, বছরখানেক আগে সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ভরুয়াপাড়া গ্রামের সরোয়ার হাওলাদারের ছেলে ইতালি প্রবাসী জহিরুল হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয় রাজৈর উপজেলার কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের।
বিয়ের পর স্ত্রীকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলেও জহিরুলের পরিবার এতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ নিয়ে দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় কলহ। একপর্যায়ে বিয়ের সময় দেওয়া স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামীর পরিবার। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুমাইয়া বাবার বাড়ি ফিরে আসেন।

গত মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাকাটাকাটির পর সুমাইয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন সন্ধ্যায় নিহতের মরদেহ বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার গত ৫ নভেম্বর রাজৈর থানায় জহিরুল হাওলাদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে, মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে জহিরুলের বাবা সরোয়ার হাওলাদার ৬ নভেম্বর মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুমাইয়ার বাবাসহ আটজনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

এই অবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান নিহতের স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার, মা রুমি বেগম, চাচা কালাম হাওলাদার ও মামা হিরু তালুকদারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান বলেন, “এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযানও চলছে।

বিএনপিতে অনৈক্য

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছিল ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয়ে বিএনপির জন্ম হয়। “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ছিল দলের মূল আদর্শ, যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, ইসলামি মূল্যবোধ, এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
দলের লক্ষ্য ছিল একটি স্বনির্ভর, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ১৯৯১, ২০০১ ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বিএনপি প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও, সমালোচনার মুখে পড়ে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি এক জটিল সঙ্কটে আবদ্ধ। একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার অভাব, অন্যদিকে দলীয় ঐক্যের ঘাটতি ক্রমে রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। দলীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতি বিশেষ করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রবাসবাস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সিদ্ধান্তহীনতা সৃষ্টি করেছে।
এই শূন্যতায় আভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্টত দৃশ্যমান। মনোনয়ন বণ্টনে অসন্তোষ, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা এবং দলীয় পদবণ্টনে বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ আজ বিএনপিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যেসব নেতা “তারেক-ঘনিষ্ঠ” বা “বদরুদ্দোজা ঘরানার” ট্যাগে বিভক্ত হচ্ছেন, তারা মাঠে একে অপরের বিপক্ষে কাজ করছেন—যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
কেন্দ্র ও তৃণমূলে সম্পর্কহীনতা এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। অনেক সময় স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহী নন, কারণ তাদের মনে হয়, কেন্দ্র মাঠের বাস্তবতা বোঝে না। দলীয় কাউন্সিল বা নিয়মিত আলোচনা না থাকায় এই দূরত্ব আরও বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের দুর্ভোগ বা আন্দোলনের ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করেন না।
এমন পরিস্থিতিতে দলের ভিতরে “কাদা ছড়াছড়ি” রীতিমতো জনসমক্ষে চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতাদের পরস্পরের প্রতি তীর্যক মন্তব্য ও দোষারোপ বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্রমশ ক্ষয় করছে। যে ঐক্যের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা এখন ব্যক্তিগত ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি আগামী জাতীয় নির্বাচনে। বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ কৌশল তৈরি না করে, তাহলে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী একাধিক হওয়া, ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা, ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত এজেন্টের অভাব এবং প্রচারে সমন্বয়হীনতা দলের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। তৃণমূলের হতাশা ও বিভক্তির কারণে ভোটারদের আস্থাও ক্ষুণ্ণ হবে—যা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা এনে দেবে।
তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় এখনো আছে, যদি বিএনপি দলীয় আত্মসমালোচনা ও গবেষণাভিত্তিক সংস্কারের পথে হাঁটে। নিচে কয়েকটি গবেষণামূলক পরামর্শ উল্লেখ করা হলো—
১. দলীয় কাঠামোর পুনর্গঠন: কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগ স্থাপন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
২. মনোনয়ন নীতির সংস্কার: ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, যোগ্যতা ও জনআস্থাভিত্তিক প্রার্থী নির্ধারণের মানদণ্ড প্রবর্তন।
৩. প্রবাসী নেতৃত্বের কার্যকর সম্পৃক্ততা: বিদেশে থাকা নেতৃত্বের অনলাইন কাউন্সিল বা ভার্চুয়াল নীতিনির্ধারণী সভার নিয়মিত আয়োজন।
৪. রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সেল: তরুণ কর্মীদের জন্য রাজনৈতিক শিক্ষাক্রম চালু করা।
৫. দলীয় গণতন্ত্র জোরদার: নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ও মতবিনিময় সভা আয়োজন।
৬. ডিজিটাল যোগাযোগ কাঠামো: কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে দলীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রচার।
৭. নারী ও তরুণ নেতৃত্বের উত্থান: নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে সংরক্ষিত পদ ও সুযোগ।
৮. গণআন্দোলন পুনর্গঠন: দলীয় কর্মসূচিকে জনগণের মৌলিক সমস্যা—মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্নীতি—এর সঙ্গে যুক্ত করা।
৯. মিডিয়া ব্যবস্থাপনা: নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় তথ্যভিত্তিক ও গবেষণামূলক প্রতিক্রিয়া টিম গঠন।
১০. ঐক্যের জন্য ‘সংলাপ ফোরাম’: দলের প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
বিএনপির সামনে এখন সময় অল্প, কিন্তু সুযোগ যথেষ্ট। যদি তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একক লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের আস্থা পুনরায় অর্জনের—তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু তাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এক নতুন সূচনা হতে পারে।

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক)

রূপগঞ্জ আসনে ধানের শীষে মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজু রহমান ভূঁইয়া দিপুর পক্ষে দাউদপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
রূপগঞ্জ আসনে ধানের শীষে মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজু রহমান ভূঁইয়া দিপুর পক্ষে দাউদপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত

নারায়ণগঞ্জ ১ রূপগঞ্জ আসনে বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর পক্ষে দাউদপুর ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত।উক্ত নির্বাচনী প্রস্তুতি সভায় দাউদ পুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এডভোকেট হেলাল উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও দাউদ পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ সুলতান মাহমুদ সিনিয়র সহ সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দল,শফিক সরকার সাবেক সহ সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দল, মোঃ আহসান উল্লাহ মাস্টার সিনিয়র সহ সভাপতি দাউদ পুর ইউনিয়ন বিএনপি,রিয়াদ ভূইয়া কিরন সিনিয় যুগ্ম সম্পাদক দাউদ পুর ইউনিয়ন বিএনপি,আবুল কালাম সাংগঠনিক সম্পাদক দাউদ পুর ইউনিয়ন বিএনপি,সিপন সাংগঠনিক সম্পাদক দাউদ পুর ইউনিয়ন বিএনপি,মেহেদী হাসান মিঠু সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল,আশিকুর রহমান রুবেল সাধারণ সম্পাদক দাউদ পুর ইউনিয়ন যুবদল,ইসাক সরকার সাবেক সভাপতি দাউদ পুর ইউনিয়ন ছাত্রদল সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।