রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২
রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

কোন দেশ কার পক্ষে?

ইউ বি টিভি ডেস্ক প্রকাশিত: শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪, ৮:৫৮ পিএম | 99 বার পড়া হয়েছে
কোন দেশ কার পক্ষে?

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিধি প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে। পহেলা অক্টোবর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা চালিয়েছে ইরান।

হামলার পর প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত এক বছর ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এর ফলে গাজা ও পশ্চিম তীরে প্রাণ হারিয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েল হেজবুল্লাহকে নিশানা করা শুরু করেছে। হিজবুল্লাহর ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে স্থলপথে লেবাননেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

ক্রমাগত বেড়ে চলা এই সংঘর্ষ কেন্দ্র করে আরব দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশই স্পষ্টতই বিভক্ত।

প্রায় দুই মাস আগে ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়েকে হত্যা করা হয়। ১৯৮০-র দশক থেকে হামাসের নেতা ছিলেন তিনি।

গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি হামলায় হেজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে।

লেবাননে হেজবুল্লাহর আস্তানাগুলোতে আকাশপথে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এরই মাঝে হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে স্থলপথেও সামরিক অভিযান শুরু করেছে তারা।

ইসমাইল হানিয়ের মৃত্যুর পর ইরানের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে কোনওরকম সামরিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও পহেলা অক্টোবর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা যা মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলমান প্রধান দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাইছে ইরান। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করার জন্য আগেই মুসলমান প্রধান দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে ইরান।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো দেশগুলো ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধে তাদের সাহায্যও করছে।

ইসরায়েলে সাম্প্রতিক হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) সোচ্চার হতে দেখা গিয়েছে নেদারল্যান্ডের রাজনীতিবিদ ও সাংসদদের।

কার পক্ষে আরব দেশগুলো?
আরব বিশ্বের সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ইসরায়েলি হামলায় হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রকাশ্য নিন্দা না করলেও, তারা লেবাননের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কথা বলেছে।

এই সংঘর্ষের বিষয়ে কোনও কোনও আরব দেশ যেমন নীরব থেকেছে, কেউ কেউ আবার লেবানন-ইসারেলের সীমান্তে অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

কোন দেশ কী বলছে দেখে নেওয়া যাক।

সৌদি আরব
প্রায় চার মাস আগে রাফাহ শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলার পর সৌদি আরব বলেছিল, ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব মেনে নিতে হবে ইসরায়েলকে।

সেই সময় সৌদি আরবের এই বিবৃতিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়েছিল।

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর গত সপ্তাহে সুন্নি নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব একটা বিবৃতি জারি করে জানিয়েছিল, লেবাননে যা ঘটছে তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। ওই বিবৃতিতে সৌদি আরব লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়েও উল্লেখ করেছিল। তবে সেখানে কোথাও হাসান নাসরাল্লাহর উল্লেখ করেনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সৌদি নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছে যে তারা যদি ফিলিস্তিনিদের লড়াই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তা মধ্যপ্রাচ্যে তো বটেই এবং বিশ্বব্যাপীও তাদের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলবে।

মক্কা ও মদিনার জন্য সৌদি আরব মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মুসলিম হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান।

মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ‘অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন’ বা ওআইসি-র সদর দফতরও সৌদি আরবে অবস্থিত। ওআইসি-কে সৌদি নেতৃত্বাধীন সংগঠন হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের নমনীয় মনোভাব সে দেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে পারে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত
হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যু এবং তারপরের পরিস্থিতি নিয়ে সুন্নি নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত আরব আমিরাত একেবারে নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।

ইউএই-র পাশাপাশি কিন্তু কাতার এবং বাহরাইনও এই প্রসঙ্গে নীরব।

তবে বাহরাইন, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত- এই ছয়টা উপসাগরীয় রাষ্ট্রের সমন্বয়ে তৈরি ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’ বা জিসিসি কিন্তু লেবাননের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটা বিবৃতি জারি করেছে।

লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জিসিসি।

লেবানন সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনও অস্ত্র না রাখার কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে। একইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে লেবাননে যেন অন্য কোনও দেশের প্রশাসন না থাকে।

কাতার

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কাতার এই সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে।

তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সে দেশের কোনও রকম আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।

মিশর

হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন।

সেই আলোচনার সময় হাসান নাসরাল্লাহর নাম উল্লেখ না করে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছিলেন লেবাননের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করার বিরুদ্ধে মিশর।

ইরানের প্রক্সি ও নীতিকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান মিশরের। তবে ইরানের সঙ্গে ‘অনানুষ্ঠানিক’ আলাপ চালাতে দেখা যায় তাদের।

হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি জানিয়েছিলেন, সংঘর্ষের কারণে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। মিশরের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, মিশর যে কোনও মূল্যে ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।

জর্ডান

জর্ডানের সঙ্গে আরবের সীমান্ত রয়েছে পশ্চিম তীরে এবং সেখানে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে।

যখন ইসরায়েল গঠন হয়েছিল সেই সময় জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ জর্ডানে পালিয়ে আসে। জর্ডান এই ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে ‘দ্বি রাষ্ট্র’ নীতির পক্ষে কথা বলেছিল।

১৯৯৪ সালে জর্ডান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়, যার মাধ্যমে জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।

গত এপ্রিলে ইরানের ড্রোন ও মিসাইল থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করার জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেনের পাশাপাশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে দেখা যায় জর্ডানকে।

যদিও এক বিবৃতিতে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তারা নিজের দেশকে রক্ষা করার অংশ হিসেবে ইরানের ড্রোন ভূপাতিত করেছে, ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য নয়।

তুরস্ক

তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ১৯৪৯ সাল থেকে। তুরস্কই প্রথম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যারা ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়।

তবে ২০০২ সাল থেকে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের উত্থান-পতন দেখা গিয়েছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে তুরস্ক বরাবরই ইসরাইলের বিরোধিতা করে তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখিয়ে এসেছে।

ভারত কার পক্ষে?
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের মধ্যেই ভারত এই দুই দেশে বসবাসরত তাদের নাগরিকদের জন্য পরামর্শমূলক বিবৃতি জারি করেছে। এই সংঘাতের ইস্যুতে ভারত শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে রয়েছে।

প্রসঙ্গত ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে স্পষ্টভাবে কোনও একটা দেশের দিকে ভারতকে ঝুঁকতে দেখা যায়নি।

গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে একটা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত অর্থাৎ আইসিজে-র পরামর্শে এই প্রস্তাব আনা হয়েছিল। ১৯৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১২৪টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল।

১৪টি দেশ এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। ভারতসহ ৪৩টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস-এর মধ্যে ভারতই একমাত্র দেশ যারা এই ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

অন্যদিকে, এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া ও রাশিয়া।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিকে ‘স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে’ জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা মোড় ঘোরানো মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এই ভোটকে ‘লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর পাকিস্তানের জনগণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

প্রসঙ্গত, ভারতের কাশ্মীর ও লক্ষ্ণৌওতেও বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে।

২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে বড় আকারের পরিকল্পিত হামলা চালায়।

ওই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়।

এরপরই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজা ও পশ্চিম তীরে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।

হেজবুল্লাহর ঠিকানাকে লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলাতেও নিহতের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। এই সংঘর্ষের বিস্তৃতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি প্রতিনিয়তই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

ভূঞাপুরে ‘এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

খঃ আউয়াল ভাসানী (টাঙ্গাইল ) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:২৭ পিএম
ভূঞাপুরে ‘এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বামনহাটা গ্রামে বামনহাটা প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট”-এর ফাইনাল খেলা।

খেলার দিনই তেঘরী দারুল আরকাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, সভাপতি ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি; সেলিমুজ্জামান তরফদার সেলু, সাধারণ সম্পাদক ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি; এবং মোঃ মহিউদ্দিন, প্রধান শিক্ষক ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রমুখ।

খেলা শেষে বিজয়ী ও রানারআপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

অপি মুন্সী : শিবচর ( মাদারীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২:৪০ পিএম
ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

 

মাদারীপুরে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ইতালি প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারের আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।
রোববার দুপুরে মাদারীপুর শহরের একটি সাংবাদিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুমাইয়ার মা রুমি বেগম অভিযোগ করে বলেন, বছরখানেক আগে সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ভরুয়াপাড়া গ্রামের সরোয়ার হাওলাদারের ছেলে ইতালি প্রবাসী জহিরুল হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয় রাজৈর উপজেলার কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের।
বিয়ের পর স্ত্রীকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলেও জহিরুলের পরিবার এতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ নিয়ে দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় কলহ। একপর্যায়ে বিয়ের সময় দেওয়া স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামীর পরিবার। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুমাইয়া বাবার বাড়ি ফিরে আসেন।

গত মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাকাটাকাটির পর সুমাইয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন সন্ধ্যায় নিহতের মরদেহ বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার গত ৫ নভেম্বর রাজৈর থানায় জহিরুল হাওলাদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে, মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে জহিরুলের বাবা সরোয়ার হাওলাদার ৬ নভেম্বর মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুমাইয়ার বাবাসহ আটজনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

এই অবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান নিহতের স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার, মা রুমি বেগম, চাচা কালাম হাওলাদার ও মামা হিরু তালুকদারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান বলেন, “এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযানও চলছে।

বিএনপিতে অনৈক্য

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছিল ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয়ে বিএনপির জন্ম হয়। “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ছিল দলের মূল আদর্শ, যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, ইসলামি মূল্যবোধ, এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
দলের লক্ষ্য ছিল একটি স্বনির্ভর, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ১৯৯১, ২০০১ ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বিএনপি প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও, সমালোচনার মুখে পড়ে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি এক জটিল সঙ্কটে আবদ্ধ। একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার অভাব, অন্যদিকে দলীয় ঐক্যের ঘাটতি ক্রমে রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। দলীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতি বিশেষ করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রবাসবাস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সিদ্ধান্তহীনতা সৃষ্টি করেছে।
এই শূন্যতায় আভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্টত দৃশ্যমান। মনোনয়ন বণ্টনে অসন্তোষ, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা এবং দলীয় পদবণ্টনে বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ আজ বিএনপিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যেসব নেতা “তারেক-ঘনিষ্ঠ” বা “বদরুদ্দোজা ঘরানার” ট্যাগে বিভক্ত হচ্ছেন, তারা মাঠে একে অপরের বিপক্ষে কাজ করছেন—যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
কেন্দ্র ও তৃণমূলে সম্পর্কহীনতা এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। অনেক সময় স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহী নন, কারণ তাদের মনে হয়, কেন্দ্র মাঠের বাস্তবতা বোঝে না। দলীয় কাউন্সিল বা নিয়মিত আলোচনা না থাকায় এই দূরত্ব আরও বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের দুর্ভোগ বা আন্দোলনের ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করেন না।
এমন পরিস্থিতিতে দলের ভিতরে “কাদা ছড়াছড়ি” রীতিমতো জনসমক্ষে চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতাদের পরস্পরের প্রতি তীর্যক মন্তব্য ও দোষারোপ বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্রমশ ক্ষয় করছে। যে ঐক্যের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা এখন ব্যক্তিগত ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি আগামী জাতীয় নির্বাচনে। বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ কৌশল তৈরি না করে, তাহলে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী একাধিক হওয়া, ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা, ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত এজেন্টের অভাব এবং প্রচারে সমন্বয়হীনতা দলের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। তৃণমূলের হতাশা ও বিভক্তির কারণে ভোটারদের আস্থাও ক্ষুণ্ণ হবে—যা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা এনে দেবে।
তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় এখনো আছে, যদি বিএনপি দলীয় আত্মসমালোচনা ও গবেষণাভিত্তিক সংস্কারের পথে হাঁটে। নিচে কয়েকটি গবেষণামূলক পরামর্শ উল্লেখ করা হলো—
১. দলীয় কাঠামোর পুনর্গঠন: কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগ স্থাপন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
২. মনোনয়ন নীতির সংস্কার: ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, যোগ্যতা ও জনআস্থাভিত্তিক প্রার্থী নির্ধারণের মানদণ্ড প্রবর্তন।
৩. প্রবাসী নেতৃত্বের কার্যকর সম্পৃক্ততা: বিদেশে থাকা নেতৃত্বের অনলাইন কাউন্সিল বা ভার্চুয়াল নীতিনির্ধারণী সভার নিয়মিত আয়োজন।
৪. রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সেল: তরুণ কর্মীদের জন্য রাজনৈতিক শিক্ষাক্রম চালু করা।
৫. দলীয় গণতন্ত্র জোরদার: নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ও মতবিনিময় সভা আয়োজন।
৬. ডিজিটাল যোগাযোগ কাঠামো: কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে দলীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রচার।
৭. নারী ও তরুণ নেতৃত্বের উত্থান: নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে সংরক্ষিত পদ ও সুযোগ।
৮. গণআন্দোলন পুনর্গঠন: দলীয় কর্মসূচিকে জনগণের মৌলিক সমস্যা—মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্নীতি—এর সঙ্গে যুক্ত করা।
৯. মিডিয়া ব্যবস্থাপনা: নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় তথ্যভিত্তিক ও গবেষণামূলক প্রতিক্রিয়া টিম গঠন।
১০. ঐক্যের জন্য ‘সংলাপ ফোরাম’: দলের প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
বিএনপির সামনে এখন সময় অল্প, কিন্তু সুযোগ যথেষ্ট। যদি তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একক লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের আস্থা পুনরায় অর্জনের—তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু তাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এক নতুন সূচনা হতে পারে।

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক)