রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হাকিকুল ইসলাম খোকন

যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীকে গুলি করে বাংলাদেশির আত্মহত্যা

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৪:০০ পিএম | 77 বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীকে গুলি করে বাংলাদেশির আত্মহত্যা

আবুল আহসান হাবিব ও সৈয়দা সোহেলি আক্তার আট বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার লভেন শহরে এক বাংলাদেশি দম্পতির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যা করে আবুল আহসান হাবিব (৫২) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। 

সৈয়দা সোহেলি আক্তার (৪২) নামে ওই গৃহবধূ ৯১১ জরুরি সেবায় ফোন করে তাকে বাঁচানোর জন্য পুলিশআকুতি জানান। পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় তার স্বামী তাকে গুলি করেন। রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে বলে প্রতিবেশিরা জানান।

স্বামী-স্ত্রী দুজনের বাড়িই বাংলাদেশের মাগুরায়। আবুল আহসান হাবিব নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার স্ত্রী সৈয়দা সোহেলি আক্তারের দীর্ঘদিন সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। সেখানে একটি পার্লার চালাতেন সোহেলি আর আহসান কাজ করতেন দোকানে। লভেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির একাধিক প্রবাসী বাপসনিউজকে জানান, স্ত্রীকে নিয়ে আহসান সারাক্ষণ অভিযোগ করতেন। দুই ছেলের দিকে খেয়াল রাখতেন না। কিন্তু স্ত্রী এসব অভিযোগ কখনোই পাত্তা দেননি।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর (রোববার) রাতে স্ত্রীর সঙ্গে আহসান হাবিবের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় দুজনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। পরে স্ত্রী পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানানোর সময় গুলি করেন আজসান হাবিব। স্ত্রীকে হত্যার পর তিনিও আত্মহত্যা করেন।

আরিজোনার সর্ব বৃহৎ পারিবারিক সহিংসতা শিকারদের আশ্রয়কেন্দ্রের সিইও মারিয়া মহোন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। এ কারণে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে।বাংলাদেশি দম্পতির প্রাণহাণির ঘটনা তাই প্রমান করে।

জাবিতে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি-সম্পাদক তাড়াশের মাসুদ ও মোন্নাফ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৬ এএম
জাবিতে সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি-সম্পাদক তাড়াশের মাসুদ ও মোন্নাফ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধ্যয়নরত সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সদ্য গঠিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০তম আবর্তনের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের কৃতী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আব্দুল মোন্নাফ। একই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী, তাড়াশের নাদোসৈয়দপুর গ্রামের মাসুদ রানা।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দায়িত্বগ্রহণের পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে বলে জানান নবনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদক।

সংগঠনের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সভাপতি শাহরিয়ার আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও সিরাজগঞ্জ থেকে আগত শিক্ষার্থী ও ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, সংগঠনের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করে আমরা আরও নতুনত্বের প্রকাশ ঘটাবো।”

নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আমার জন্য এক বিশেষ সম্মান। এই বিশ্বাস ও ভালোবাসাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে আমরা সমিতিকে আরও সংগঠিত, কার্যকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলব। আগামী দিনে সিরাজগঞ্জের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের ক্যাম্পাসের সম্পর্ক জোরদার করাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাব।”

নতুন কমিটি ঘোষণায় জাবির সিরাজগঞ্জের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

মোঃ আব্দুল আজিজ ব্যবস্থাপনার সম্পাদক

ভাঙ্গুড়া পৌর ছাত্রদলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

মোঃ আব্দুল আজিজ ব্যবস্থাপনার সম্পাদক প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
ভাঙ্গুড়া পৌর ছাত্রদলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা, দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে পৌরসভার উত্তর সারুটিয়া বালুর মাঠে ভাঙ্গুড়া পৌর ছাত্রদলের আয়োজনে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিলে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

ভাঙ্গুড়া পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাসেল রানা পিন্টু’র সভাপতিত্বে ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ শাহিনুর রহমান শাহিনের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আয়নুল হক, ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম স্বপন, পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম, চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক নির্বাচিত সভাপতি মহসিন আলী, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হুমায়ূন আহমেদ মুন।

দোয়া মাহফিলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘ সময় স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আজকের এই দোয়া মাহফিলে বিপুল মানুষের উপস্থিতি তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রকাশ। বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় বিশেষ দোয়া করার জন্য সবার কাছে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এসময় ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তোফাজ্জল হোসেন বাবলু, ভাঙ্গুড়া পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সম্মানিত সদস্য রেজাউল করিম রোমিও,মন্ডতোষ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মোঃ আকরাম আলী মাষ্টার, ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অনিক আহমেদ, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম সরকার, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্বাস আলী, ভাঙ্গুড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রোকুনুজ্জামান রাজিব, পৌর ছাত্রদল নেতা সামিউল ইসলাম তাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় বিশেষ মোনাজাত করে দোয়া মাহফিল শেষ হয়।

সুলেখা আক্তার শান্তা

ভাঙনের পর গাঁথন

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩০ এএম
ভাঙনের পর গাঁথন

ইমরান ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ করেই চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় তার। চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে এসে দেখে, তার বড় ভাই জামাল, স্ত্রী শেফালীকে মারছে। ভাইয়া, ভাবিকে মারেন কেন? জামাল রাগ শরীর নিয়ে বলে, আমার কথা শোনে না। শুনে না বলেই কি গায়ে হাত তুলবেন?
শেফালী কাঁদতে কাঁদতে বলে, কী কথা শুনি না আমি? যে স্বামী গায়ে হাত তোলে, তার কথা শোনার দরকার কী? আমি আর পারছি না। রান্না ঝাড়ু মারি, আমি আর রান্না করতে পারব না। গাটা আর চলছে না। আমি শেষ। ইমরান এগিয়ে এসে বলল, ঠিক আছে ভাবি, এবার থামেন। ভাইরে আমি বলছি। তুমি ভালো করে বোঝাও তোমার ভাইরে। আচ্ছা যেটা বলার আমি বলছি।
শেফালী বলল, তোমার ভাইরে ভালো করে বলো। এরপর আমারে কিছু বললে আমি চলে যাব বাপের বাড়ি। জামাল কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আমিও চাই তুই বাপের বাড়ি চলে যা। তুই থাকলেই শুধু ঝামেলা। শেফালী চোখ সরিয়ে বলল, ঠিক আছে, আমি চলে যাই। ইরমান একটু নরম হয়ে বলল, ভাবি, তোমারে বললাম, তুমি থামো। ভাই যাই বলুক, তার জন্য তুমি চলে যাবে? শেফালী চুপ, চোখে অশ্রু। ইমরান ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে আছে। শেফালী তাকে জিজ্ঞেস করে, তোমার ভাই কী বলে, তুমি শোনো না? তোমাদের এই ক্যাচাল দেইখা আমার নিজের বিয়ের ইচ্ছাটাই মরে গেছে। জামাল মুখ নিচু করে থাকে। কিছু বলে না।
শেফালী চোখের পানি আঁচলে মুছে, ধীরে বলে ইমরানকে, দেবর, আমি তোমার জন্য ভালো মেয়ে দেখে দেব। তবে একটা কথা মনে রাখবা। তোমার ভাবির মতো আর যেন কাউকে চোখের পানি ফেলতে না হয়। ইমরান মাথা তোলে, চোখে দৃঢ়তা। ভাবি, আমি একটা কথা বলি, আমি আমার স্ত্রীকে কখনও মারব না। আমি তাকে সুখেই রাখব। শেফালী একটু হেসে দেয়। তা জানি। তুই আলাদা। তোমার ভিতরটা ভালো।
ইমরানের বিয়ের পর, জীবন যেন নতুন আলোয় রঙিন হয়ে উঠলো ইমরানের কাছে। লিজা তার কাছে শুধু স্ত্রী নয়, যেন এক হৃদয়বন্ধু, এক নিঃশর্ত ভালোবাসার প্রতীক। ইমরান প্রতিদিন নিজের ভিতর থেকে এই প্রার্থনাই করে, লিজার যেন কখনও কোনো অভিযোগ না থাকে তার প্রতি। আমি চাই তার সব ইচ্ছা পূরণ করতে।
এক সন্ধ্যাবেলায়, চা হাতে বারান্দায় বসে লিজা হেসে বলল, তুমি তো আমার সব কথা শোনো? সব চাওয়া পূরণ করো। ইমরান জবাবে বলে, না শোনার কোনো কারণ নেই। এক মেয়ে যখন স্বামীর ঘরে আসে, তার বুকভরা আশা থাকে। আর সেই আশা পূরণ করা স্বামীর কর্তব্য। লিজার চোখে তৃপ্তি। সে বলে, তাহলে তো তুমি আমায় সত্যিই ভালোবাসো। বলো, তুমি কি আমার কথা শুনবে?
হ্যাঁ শুনব, উত্তর ইমরানের।
তবে একটা কথা বলি, তুমি বিদেশে যাবে।
চমকে ওঠে ইমরান। বিদেশ!
আমি চাই তুমি বিদেশ যাবে।
বিদেশ? ধীরে বলে সে, তুমি চাইলে যাব। কিন্তু জানো তো, তোমাকে রেখে আমার কোনো কিছু ভালো লাগে না।
লিজা বলে, আমি চাই তুমি যাও। আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ সব তোমার ওপর ভরসা করেই সাজানো।
ইমরান একটু থেমে বলল, তোমার স্বপ্ন যদি বিদেশে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত হয়, তাহলে আমি সেই পথেই হাঁটব।
ইমরান পাড়ি দেয় বিদেশে। নতুন দেশের আকাশে, সে ভবিষ্যতের সন্ধানে ছুটে চলে। তার মনের গোপনে একটাই ভাবনা, লিজাকে খুশি করা। বেতন হাতে পেলেই লিজার কথা ভাবে। বিদেশি মুদ্রার প্রতিটি টাকাই যেন তার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। পাঠিয়ে দেয় লিজার কাছে, নাও, তুমি যেভাবে খুশি, খরচ করো।
লিজা টাকা পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত। মার্কেট করে, বন্ধুর সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খায়। ফোনে ইমরান বলে, তোমার মনের আশা পূরণ করতে পারি আমি?
লিজা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, হ্যাঁ, তুমি পারো। আমার কথাগুলো শুনো বলেই তো তোমায় ভালো লাগে। তবে বেশি ফোন কোরো না, বলে, লিজা। ইমরান হেসে ফেলে, কথা না বললে বউয়ের সঙ্গে, তাহলে কার সঙ্গে বলবো? ফোন করে বেশি টাকা খরচ করার দরকার নেই। টাকা যদি খরচ না করি তোমার জন্য, তাহলে কার জন্য করব?
বহু বছর ধরে প্রবাসে দিন কাটাচ্ছে ইমরানের। ক্লান্তি, একাকিত্ব, আর স্মৃতির ঘোরে সে বারবার দেশে ফিরতে চায়। এখন সে আর থাকতে চায় না বিদেশের নিঃস্ব শূন্যতায়, সে দেশে ফিরতে চায়।
ফোনে লিজাকে জানায়, আমি এবার দেশে ফিরতে চাই। মনটা আর থাকতে চায় না।
লিজা হেসে বলে, দেশে আসবা? কী করতে? ওইখানে তো ভালোই আছো। দেশে এসে তো কিচ্ছু করতে পারবা না। ইমরান থেমে যায় একটু। তারপর বলে, আমি দেশে এসে একটা ব্যবসা শুরু করতে চাই। তোমার সঙ্গে জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে চাই। লিজার উত্তর তির্যক, তুমি ব্যবসা করবা? দেশে এসে ব্যর্থ হবে। থাকো ওইখানেই। ইমরানের বুকের ভেতর যেন কিছুটা বয়ে বেড়ায়। সে বাস্তব বুঝতে পারলো। ইমরান দিনশেষে শুধু টাকা পাঠায় না, সে পাঠায় নিজের শ্রম, স্বপ্ন আর আশা। ভাবছিল, ফিরবে দেশে, পাশে থাকবে প্রিয়জন। কিন্তু লিজার কথা যেন প্রতিদিন একটু একটু করে আশাকে ঝাপসা করে দেয়। তুমি ওইখানে ভালোই আছো। যখন দরকার হবে তখন বলব আসতে, লিজার কথায় যেন শুধু নির্দেশ, কোনো উষ্ণতা নেই।
ইমরানের জমানো টাকা দিয়ে লিজা জমি কিনে নিজের নামে। ইমরান জিজ্ঞেস করে, টাকাটা দিয়ে তুমি জমি কিনছো, ভালো কথা। কিন্তু তুমি তো আমার নামেও দিতে পারতে। লিজা রেগে যায়। জমি আমার নামে যে কথা তোমার নামেও সেই একই কথা! তুমি চিন্তা কোরো না, জমি কোথাও যাবে না। তবুও, কোথায় যেন একটা দাগ পড়ে যায় হৃদয়ের পাতায়। জমি আর বিশ্বাস দুটোই যেন এখন প্রশ্নের মুখে।
লিজার কথায় ভেতরে ভেতরে চুপসে যায় ইমরান। এত বছর বিদেশে থেকে যা অর্জন করেছে, সে সবই তো পাঠিয়েছে লিজার কাছে। বাড়ি, জমি, সঞ্চয় সবই তার শ্রম আর ঘাম দিয়ে গড়া। ইমরান কাঁপা গলায় বলে সে। তোমার নামে নিছো, নাও। বিদেশ থেইকা টাকা-পয়সা যা কামাইলাম, সবই তো তোমার কাছে। তোমার ইচ্ছা, তুমি যেটা ভালো বোঝো, সেটাই করো।
লিজা একটু থেমে বলে, শোনো, একটা কথা জানাই, তোমার টাকা-পয়সা আমার দ্বারা নষ্ট হবে না। এই আশ্বাস যেন ইমরানের বিষণ্নতায় এক বিন্দু শান্তি দেয়। কিন্তু জমি শুধু এক টুকরো মাটি নয়, সেটাতে ছিল তার ফিরে আসার স্বপ্ন, একসাথে থাকার আশা।
ইমরান ফোন করে, বারবার। কিন্তু লিজার সাড়া নেই। পরিচিত জনেরা নানা কথা বলে, কখনো সতর্কতা, কখনো কুৎসা। তোমার বউ তো এখন অন্য পুরুষের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে। মনটা ধীরে ধীরে ভারী হয় ইমরানের। দূরদেশে রোজরাত তার মনে শুধু লিজা, আর সেই ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন। কিন্তু লিজা কোথায় গেছে তার খবর ইমরান জানে না। একদিন খবর আসে লিজা অন্য একজনকে বিয়ে করেছে, সংসার করছে। ইমরান থমকে যায়। নিঃশব্দে ফাটে তার বুকের ভিতর আগুন। হায় হায়… এ কী সর্বনাশ হলো আমার! কাঁপা কণ্ঠে বলে সে। আমার বউ চলে গেল, আমার টাকা গেল, আমার জমিও গেল। যার জন্য এত বছর বিদেশে গলা শুকিয়ে কাজ করলাম, সেই আমারে ধোঁকা দিলো! হায়রে বিশ্বাস—কতটা নষ্ট, কতটা নিষ্ঠুর!
ভাই জামালের চোখে শুধু ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নয়, আছে অভিজ্ঞতার আলো। সে ইমরানকে দেশে নিয়ে আসে, এবং নিজের হাতেই ছোট ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে দেয়।
শোন ইমরান, জামাল বলে, একজনের কাছে তো সব কিছু দিয়েছিলি টাকা, জমি, মন। এবার একটু হিসাব করে চল। নিজের ক্ষমতা নিজের কাছে রাখ। ইমরান হালকা হেসে বলে, ভাইয়া, সেই ভুল আর করব না। যা বোঝার দরকার ছিল, বুঝে গেছি। এবার অন্তরে হিসাবের খাতা খুলেছি।
বউ আসমা, শান্তশিষ্ট কিন্তু গভীর। সে স্বামী ইমরানকে বলে, শোনো? আমি সব চাই না। একটা মানুষ যতটুকু দিলে সে ভালো থাকতে পারে, ততটুকু আমাকে দিও। আমি বিশ্বাসের মূল্য বুঝি, মোহের নয়।
এই কথাগুলো যেন ইমরানের ভেতরে নতুন বিশ্বাসের বীজ বপন করে। এখন সে শুধু সম্পর্ক রাখে না, সম্পর্ক বুঝে চলতে শিখছে।
ইমরানের চোখে দুঃসহ ইতিহাসের ছায়া এখনো ঘোরে। আমার কাছে আর কিছু নাই, কাঁপা কণ্ঠে বলে সে, যেটা রোজগার করেছিলাম, সব গলে গেছে বিশ্বাসের আগুনে।
আরও একবার বিদেশের পথে পা বাড়ায় সে। তবে এবার আর আগের মতো না। বউয়ের কাছে আগের মতো টাকা পাঠায় না। পাঠালেও, প্রয়োজনের চেয়ে কম। আসমা ব্যথিত কণ্ঠে বলল, এই কিপটামি আমার ভালো লাগছে না। এইভাবে সংসার হয় না। তুমি ঠিক করো, শান্তিতে সংসার করবে কিনা? না আমাকে সাইড করে দেবে! ইমরান মাথা খারাপ হয়ে যায়, যেন আত্মদহন থেকে এক ধোঁয়া বেরিয়ে আসে, “হায় হায়… সর্বনাশ তো! একবার বউ চলে গেছে টাকা-পয়সার ভারে। এবার বউ যাবে কিপটামির কারণে।
দেশে ফিরে এসেছে ইমরান। ক্লান্ত হৃদয়ে একটাই চাওয়া আসমার, আমি একটা সুন্দর জীবন যাপন করতে চাই। আর টাকার লেনদেন নয়, একটু সুখের নিঃশ্বাস নিতে চাই। আসমা তাকিয়ে ইমরানের দিকে মৃদু হাসিতে বলে, তুমি হতাশ হয়ো না ইমরান। সব মানুষ একরকম হয় না। একজন চলে গেছে, তার মানে এই না যে সবাই একরকম। তোমার পাশে আছি তোমার পাশে থাকব। আসমার চোখে ছিল আশার দীপ্তি, আর ইমরানের চোখে ছিল যন্ত্রণার ছায়া। ইমরান বুঝে যায়, ভালোবাসা আর আস্থার জায়গায় যদি সঠিক মানুষ থাকে, তবে জীবনে সুখ আসে। তাদের জীবনে আসে একটি সন্তান। আর দুজনের মিলিত হৃদয়ে গড়ে ওঠে এক সংসার, যেটা শুধু ইট, কাঠ নয়, আত্মার স্থাপত্য।