মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর
সবুজ শীষে লাল পতাকা: এক তরুণ কৃষকের আঁকা স্বপ্ন ধানের জমিতেই পতাকার নকশা


দেশপ্রেম প্রকাশের জন্য কেউ গান লেখেন, কেউ আঁকেন ছবি—আর নাটোরের গুরুদাসপুরের তরুণ কৃষক ইমরান হোসাইন বেছে নিয়েছেন ধানের ক্ষেত। সবুজ শস্যের বুকে তিনি এঁকেছেন জাতীয় পতাকা—সবুজ মাঠে লাল সূর্যের প্রতীক। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পতাকাটি যেন বাতাসে উড়ছে—কিন্তু সেটি কাপড় নয়, ধান গাছের শীষে আঁকা এক জীবন্ত পতাকা। তাঁর সৃজনশীলতা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পুরো এলাকায়।
উপজেলার রশিদপুর গ্রামের এই কৃষক প্রায় ৪৫ শতক জমিতে দুই জাতের ধান রোপণ করে গড়ে তুলেছেন জাতীয় পতাকার প্রতিরূপ। সবুজ অংশে ব্যবহার করেছেন লং বাসমতী জাতের ধান, আর মাঝের লাল বৃত্তের জায়গায় রোপণ করেছেন বেগুনি রঙের ‘পারপোল রাইস’। দূর থেকে তাকালে দেখা যায়, নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের পতাকার রঙ ও নকশা।
ইমরান বলেন, “দেশকে ভালোবাসা শুধু মুখে নয়, কাজে প্রকাশ পেলে সেটি সত্যিকারের শ্রদ্ধা হয়ে ওঠে। এই জমি আমার কাছে শুধু ফসলের নয়—এটি মাতৃভূমির প্রতি আমার ভালোবাসা ও গর্বের প্রতীক।”
ইমরানের এ ব্যতিক্রমী কৃষিশিল্প দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমছে রশিদপুরে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন, আবার কেউ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁর এই অনন্য উদ্যোগ। ফলে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ—যেখানে কৃষি আর দেশপ্রেম একাকার হয়ে গেছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম রাফিউল ইসলাম বলেন, “ইমরানের এই উদ্যোগ দেশপ্রেমের পাশাপাশি কৃষিতে উদ্ভাবনেরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমন সৃজনশীল কাজ তরুণ প্রজন্মকে কৃষির প্রতি আগ্রহী করবে এবং দেশপ্রেমের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেবে মাঠে, সমাজে ও মানুষের মনে।”
এই ক্ষেতের দিকে তাকালে বোঝা যায়—ধান কেবল জীবিকার প্রতীক নয়, ভালোবাসার ভাষাও হতে পারে। আর সেই ভালোবাসার রঙে ভেসে গেছে পুরো রশিদপুর গ্রাম—যেন ধানের শীষে লেখা আছে, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”