রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নাট্যোৎসব বন্ধের কারণ জানালেন ফারুকী

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৩:৫৭ পিএম | 94 বার পড়া হয়েছে
নাট্যোৎসব বন্ধের কারণ জানালেন ফারুকী

ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব ‘হুমকির মুখে’ স্থগিত হওয়ার পর সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বললেন, নাট্যকর্মীদের ‘বিক্ষুব্ধ একটি অংশের’ দাবির পরিপ্রেক্ষিতিই মহিলা সমিতি থেকে উৎসবের ভেন্যু বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

রোববার সকালে এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, নাট্যকর্মীদের ‘বিক্ষুব্ধ’ অংশটি উৎসবের বিরোধিতা করে হল বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরে।

তাদের পরিচয় না লিখে ‘মব’ বলে চালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য কী– উৎসব আয়োজকদের দিকে এমন প্রশ্নও ছুঁড়েছেন উপদেষ্টা।

অন্যদিকে উৎসব আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপদেষ্টার কাছেই বিরোধিতাকারীদের নাম জানতে চেয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, নাট্যকর্মীদের মধ্যে কারা উৎসব বন্ধ করতে চাইল?

সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শনিবার ‘একদল ব্যক্তির হুমকির মুখে’ স্থগিত হয় ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’।

নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে উৎসব স্থগিতে বাধ্য হওয়ার কথা বলেন ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের আহ্বায়ক ঠান্ডু রায়হান।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা।

তার পরদিন উপদেষ্টা ফারুকী তার ফেইসবুক পোস্টে বলেন, “নাট্য উৎসব বন্ধের খবরটা দেখে আমরা কাল সন্ধ্যা থেকেই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি। কারণ সরকার শিল্পকলার মাধ্যমে সারাদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দিতে উৎসাহ দিচ্ছে, গতকালও শিল্পকলায় তিনটা প্রদর্শনী হল। আজকেও প্রাচ্যনাটের শো আছে শিল্পকলায়। তাহলে এখানে কেনো পুলিশ উৎসব বন্ধ করতে বলবে?

“খোঁজ নিয়ে জানলাম, পুলিশ এইরকম কিছুই বলেনি। কালকে রাতেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা কাউকে উৎসব বন্ধ করতে বলেনি। বরং তারা নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত। তাহলে?

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলছেন, এ বিষয়ে দ্রুত অনুসন্ধান থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, নাট্যকর্মীদের মধ্যেই একটা অংশ এই উৎসবের বিরোধিতা করে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে হল বরাদ্দ বাতিলের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে।

বিক্ষুব্ধ নাট্যকর্মীদের দাবি, এই উৎসবের আড়ালে জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতা হত্যায় বিবৃতি দিয়ে উসকানি দেওয়া কিছু ব্যক্তি বা তাদের গোত্রীয় কিছু মানুষ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা দাবি জানায়, জুলাইয়ে তাদের ভূমিকার জন্য বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আগে কোনো পূনর্বাসন চলবে না। অবশেষে কালকে মহিলা সমিতি বরাদ্দ বাতিল করে।

কিন্তু আয়োজকরা বিবৃতিতে সেসব কিছু লেখেননি মন্তব্য করে

ফারুকী বলেন, “এইসব কিছু না বলে কৌশলে প্রথমে পুলিশের কাঁধে দোষ চাপানোর চেষ্টা করল এবং বিবৃতির শেষে বলল- মবের কারণে উৎসব বাতিল করতে হল।

তারা তো জানেই কারা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তাদের পরিচয় না লিখে মব বলে চালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি একটা বিশেষ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা? বা কেন ওই বিক্ষুব্ধ নাট্যকর্মীরা প্রতিবাদ করছে তারা জানে। কিন্তু সেটাও তারা বিবৃতিতে উল্লেখ না করা কি ওই বিশেষ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কিনা সেটা সবাই ভেবে দেখতে পারেন।

ফারুকী প্রশ্ন তোলেন, জুলাইয়ে তাদের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে এখনো কি একবারও ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছে তারা?

সংস্কৃতি উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের সদস্য-সচিব কামাল আহমেদ বলেন, নাট্যকর্মীদের মধ্যে কারা এই উৎসবের বিরোধিতা করছেন, তা তো আমাদের জানা নেই। মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষকে গিয়ে কারা আমাদেরকে হল বরাদ্দ না দিতে হুমকি দিয়েছেন, তা তো আমরা জানি না।

সংস্কৃতি উপদেষ্টা যেহেতু অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন যে নাট্যকর্মীদের একটি অংশই বিরোধিতা করছে, তাহলে তিনি সেই নামগুলো সবাইকে জানাবেন বলে আশা করছি।

কামাল আহমেদ বলেন, “পুলিশ থেকে উৎসব বন্ধ করতে না বললে মহিলা সমিতি আমাদেরকে বরাদ্দ দেওয়া মিলনায়তন কেন বাতিল করল? উপদেষ্টার উচিত মহিলা সমিতিকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া এবং আমাদেরকে যেন মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা উৎসবটা করতে চাই।

এই উৎসবে ৮৫টি নাট্যদল অংশ নেবে, যার প্রথম পর্যায়ে ১৪টি নাট্যদলের নাটকের প্রদর্শনী হচ্ছে। যে নাটকগুলো নিয়ে এই উৎসব, এই নাটকগুলো অনেক দিন ধরেই মঞ্চে হচ্ছে। জুলাইয়ের পট-পরিবর্তনের পরও নাটকগুলো হচ্ছে, তাহলে এই নাটক নিয়ে কারা আপত্তি তুলছেন? তাদের নাম উপদেষ্টা জনসম্মুখে আনুক।

শনিবার বিকাল ৫টায় ঢাকার নাটক সরণির মহিলা সমিতি মিলনায়তনে এই উৎসব উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। সন্ধ্যায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল। উৎসবের তিনটি পর্যায়ে একটি করে নাটক মঞ্চস্থ করার কথা ছিল ৮৫টি নাট্যদলের।

আয়োজকরা বলছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতিতে কিছু লোক এসে উৎসব নিয়ে আপত্তি তোলে। উৎসব হলে হামলা করারও হুমকি দেয় তারা।

কামাল আহমেদ বলেন, “শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের জানান যে, রমনা থানা থেকে ফোনে নাট্যোৎসব বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

উৎসবের জন্য পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে কামাল আহমেদ বলেন, “মিলনায়তনে আমরা যে নাটকের প্রদর্শনী করি, তার জন্য তো পুলিশ থেকে অনুমতি নেওয়া হয় না। এখানে তো বিদেশি নাট্যদলের অংশগ্রহণও নাই।

“যে দলের নাটকের শো হবে, তারা তো নিয়মিতই নাটকের প্রদর্শনী করছে। এ ধরনের আয়োজনের জন্য পুলিশ বা সরকারের কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।”

থানায় আলোচনার পর পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিলে নিরাপত্তা সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয় বলে জানান কামাল।

কিন্তু থানার ওই বৈঠকের খবর পেয়ে ‘উত্তেজিত কিছু লোক’ এসে মহিলা সমিতি প্রাঙ্গণে উৎসবের সাজসজ্জা খুলে ফেলে বলে আয়োজকদের ভাষ্য।

কারা ওই হুমকি দিয়েছে, তারা পরিচয় দিয়েছে কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে উৎসব উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব কামাল শনিবার বলেছিলেন, “বিগত দিনেও একটি নাট্যদলের নাটক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শো-এর মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এর প্রতিবাদে নাট্যকর্মীরা যখন সমাবেশ করছিল; তখন নাট্যজন মামুনুর রশীদসহ উপস্থিত নাট্যকর্মীদের উপর যারা হামলা করেছিল, আজকের ঘটনা তারই পুনরাবৃত্তি বলে আমরা মনে করি।”

ঘটনার বিষয়ে জানতে মহিলা সমিতির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে তারা কেউ নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

শনিবার রাতে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নাট্যোৎসব বন্ধ করা বা স্থগিত করার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:৩৩ পিএম
ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের ভাঙ্গুড়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার বিএনপি কার্যালয়ে এ দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপজেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফুল ইসলাম স্বপনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ ফারুক খান হিমেল,অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক নুর মোজাহিদ স্বপন,প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম,আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলহাজ্ব খান,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু সাইদ,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ আব্দুল আজিজ,যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ বরাত আলী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল রেজা,আলতাব হোসেন,পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুল ইসলাম বুরুজ, পল্লী চিকিৎসক দলের ইশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি জুয়েল সরকার,আটঘরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম,উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহব্বায়ক মোঃ হুমায়ুন কবির প্রমুখ৷

আলোচনা শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও পরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাগজ নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে, যা মনসুরনগর চরের শিক্ষার্থীদেরসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করছে; বিশেষ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ও স্কুলে যেতে তাদের ডুবোচরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে, যা একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মূল সমস্যা: শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচর যাতায়াতে বাধা দিচ্ছে।
প্রভাব: ছাত্রছাত্রী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উদাহরণ: মনসুরনগর চরের লোকজন কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।