জুলাই স্মৃতি চারন নিয়ে পিপল টকের এম এ সিদ্দিক


রক্তভেজা ইতিহাস- কবে বলতে পারবো আর এমন জুলাই আসবে না এই দেশে?
জুলাই এসেছে। এসেছে নতুন মাস, নতুন সূর্য, নতুন কর্মসূচি। কিন্তু এই জুলাই মানেই এখন আর ক্যালেন্ডারের একটা পাতা নয়-এটা হয়ে গেছে অগণিত পরিবারে রক্তে লেখা স্মৃতি।
এ মাসের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ চাকরি পেয়েছে,কেউ রাজনৈতিক পদে পদায়ন হয়েছে, কেউবা উন্নয়নের নামে বুদ্ধি বিলাচ্ছে টিভির টকশোতে। কেউ হয়েছে উপদেষ্টা, কেউ হয়েছে পার্টির নেতা। সব ঠিকঠাকই চলছে…
কিন্তু আমার সেই ভাইটা? যে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলো, যে বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিলো একদিন মানুষ হবে, সে কি ফিরে এসেছে?
না।
সে ফিরেছে কফিনে মোড়া লাশ হয়ে।
কেউ ছিল পুলিশের চাকরিতে-পরিবার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ডিউটিতে গিয়েছিল,ফিরেছে লাশ হয়ে, ইউনিফর্মে রক্ত মাখা দাগ নিয়ে।
কেউ ছিল ছাত্র-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া এক তরুণ,যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল বই হাতে, ফিরেছে রক্তাক্ত বস্তায় মোড়া মৃতদেহ হয়ে।
আবার এমন অনেকেই আছে-যাদের আজও কোনো খোঁজ নেই,মা-বাবা কান্না করে বলেন,
“আমার ছেলে বাঁচলো কি মরলো, শুধু একবার জানতে চাই।”
জুলাই,
বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন এক বর্বরতম মাস-যেখানে রক্ত ঝরেছে, লাশ পড়েছে, স্বজনেরা পেয়েছে শুধু নিরবতা আর নিঃস্বতা।
আজ আমরা অনেকেই বড় বড় কথা বলি, অথচ আমরা সেই রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম নিরাপদ বিছানায়।আর যারা রাজপথে ছিলো-
তারা কেউ কবরে, কেউ হাসপাতালে, কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বসে আছে বাড়ির এক কোণে।
রাষ্ট্র এখনো কোনো দায় নেয়নি। কেউ বলে না-ভুল হয়েছিল, কেউ বলে না-আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম তাদের রক্ষা করতে।
আর যারা হারিয়েছে-তারা কিছুই ফিরে পায়নি।একজন মা এখনো প্রতিরাতে কান্না করেন অজান্তেই, একজন বাবা আজও পকেটে সন্তানের ছবি রাখেন,এক বোন এখনো ভাইয়ের প্রিয় জামাটা ভাঁজ করে রাখে,এক বন্ধু আজও হঠাৎ চুপ করে যায়-কারণ সে জানে, আর কখনো “দোস্ত” বলে ডাক দেবে কেউ না।
লাশ তো এসেছে ভাই,
কিন্তু ন্যায় আসেনি।
জানাজা হয়েছে,
কিন্তু বিচার হয়নি।
আমরা কি কেবল এই শহীদদের ব্যবহার করেছিলাম সময় পার করতে?আজ কে মনে রাখছে তাদের নাম? কে রেখেছে তাদের পরিবারের খোঁজ?
যে বাবা তার সন্তান হারালেন – স্ত্রী হয়েছেন বিধবা, নানান স্বপ্ন নিয়ে শুরু করা নতুন সংসার ভেঙে গেলো টুকরো টুকরো, দুনিয়া চলছে ঠিকই, কিন্তু সেই বেদনা কি ভোলা যায়? যে মা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন বুনতেন, সে আজও রাতের অন্ধকারে প্রশ্ন করেন-আমার সন্তান কি ফিরে পাবো কোনোদিন?
রাজনৈতিক পালাবদল হবে?ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটবে?চেয়ারে নতুনরা বসবে। কিন্তু বারবার প্রশ্ন জাগে- এই দেশে আর কতবার জুলাই আসবে? আর কতবার রক্তে লাল হবে ইতিহাসের পাতা? আর কতবার মায়ের কান্না ভেসে যাবে বাতাসে?
কবে আমরা বলতে পারবো? আর এমন জুলাই আসবে না এই দেশে!
তারা কোনো অপরাধী ছিল না, তারা দেশের জন্য দাঁড়িয়েছিলো, তারা প্রশ্ন করেছিলো,আর তার জবাব ছিল গুলির আওয়াজ।