রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২
রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

শেখ হাসিনার পতনের পর যারা গ্রেপ্তার হলেন

ইউ বি টিভি ডেস্ক প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৫১ এএম | 104 বার পড়া হয়েছে
শেখ হাসিনার পতনের পর যারা গ্রেপ্তার হলেন

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রাণভয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। স্বৈরাচার পতনের পর নতুন বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা দুই মাস পার করেছে। এর পর থেকে চরম সংকটে পড়েছে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাচ্যুতির পর বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আমলা, পুলিশসহ অনেকে আটক হলেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। গতকাল সোমবার রাতে একদিনেই আটক করা হয়েছে দলটির দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে।

এদিন সন্ধ্যায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাককে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ওই দিন গভীর রাতে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আটক করা হয় আরেক শীর্ষ নেতা ফারুক খানকে।

সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে। তাদের অনেকেরই ফোন বন্ধ। শীর্ষ নেতারা দেশে আছেন কি-না, দেশ ছেড়েছেন এ নিয়ে নানা খবর প্রকাশ হলেও সঠিক কোনো তথ্য মিলছে না।

এদিকে সোমবার দুই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আটকের পর প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা এখন কোথায় আছেন?

এমন অবস্থায় গত দুই সপ্তাহে অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের বিবৃতি দিচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। এছাড়া কাউকে কাউকে আবার গণমাধ্যমের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বা অনলাইনে সাক্ষাৎকারও দিতে দেখা গেছে।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটদের মধ্যে কারা গ্রেপ্তার হলেন?

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শুরুর দিকেই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালীদের মধ্যে গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

এরপর গত দুই মাসে আটক হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহণ মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক মন্ত্রী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আহমদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ।

এছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা সাদেক খান, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও সাবেক এমপি হাজী মো. সেলিম।

আটক হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহে আলম, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনও।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী আটক হয়েছেন গত দুই মাসে। তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর।

গ্রেপ্তার তালিকায় পুলিশ-আমলা ও ১৪ দলের নেতারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংগঠিত হওয়া বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই নন. আসামি করা হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ ও আমলাদের।

এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক শীর্ষ ছয়জন আমলা ও অন্তত ১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও আবুল কালাম আজাদ।

আমলাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সাবেক জননিরাপত্তা সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়াসচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ। এছাড়াও সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের সাবেক ১৭ জন কর্মকর্তা।

জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক এমপি, দলীয় নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ ও প্রশাসনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হচ্ছে।

এসব মামলায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব, সচিব, পুলিশের সাবেক চার আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি ও ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নামে মামলা হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

অনেক শীর্ষ নেতার খোঁজ নেই

সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলকাতার একটি পার্কে বসে আছেন। শামীম ওসমানকেও দিল্লিতে দেখা গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরও কিছু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় আওয়ামী লীগ সরকারের যে দুজনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তারা হলেন– তৎকালীন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীদের মধ্যে হাছান মাহমুদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অবস্থান নিয়েও নানা ধরনের তথ্য দেখা যাচ্ছে।

ভূঞাপুরে ‘এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

খঃ আউয়াল ভাসানী (টাঙ্গাইল ) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:২৭ পিএম
ভূঞাপুরে ‘এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বামনহাটা গ্রামে বামনহাটা প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট”-এর ফাইনাল খেলা।

খেলার দিনই তেঘরী দারুল আরকাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, সভাপতি ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি; সেলিমুজ্জামান তরফদার সেলু, সাধারণ সম্পাদক ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি; এবং মোঃ মহিউদ্দিন, প্রধান শিক্ষক ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রমুখ।

খেলা শেষে বিজয়ী ও রানারআপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

অপি মুন্সী : শিবচর ( মাদারীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২:৪০ পিএম
ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

 

মাদারীপুরে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ইতালি প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারের আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।
রোববার দুপুরে মাদারীপুর শহরের একটি সাংবাদিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুমাইয়ার মা রুমি বেগম অভিযোগ করে বলেন, বছরখানেক আগে সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ভরুয়াপাড়া গ্রামের সরোয়ার হাওলাদারের ছেলে ইতালি প্রবাসী জহিরুল হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয় রাজৈর উপজেলার কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের।
বিয়ের পর স্ত্রীকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলেও জহিরুলের পরিবার এতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ নিয়ে দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় কলহ। একপর্যায়ে বিয়ের সময় দেওয়া স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামীর পরিবার। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুমাইয়া বাবার বাড়ি ফিরে আসেন।

গত মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাকাটাকাটির পর সুমাইয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন সন্ধ্যায় নিহতের মরদেহ বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার গত ৫ নভেম্বর রাজৈর থানায় জহিরুল হাওলাদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে, মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে জহিরুলের বাবা সরোয়ার হাওলাদার ৬ নভেম্বর মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুমাইয়ার বাবাসহ আটজনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

এই অবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান নিহতের স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার, মা রুমি বেগম, চাচা কালাম হাওলাদার ও মামা হিরু তালুকদারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান বলেন, “এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযানও চলছে।

বিএনপিতে অনৈক্য

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছিল ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয়ে বিএনপির জন্ম হয়। “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ছিল দলের মূল আদর্শ, যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, ইসলামি মূল্যবোধ, এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
দলের লক্ষ্য ছিল একটি স্বনির্ভর, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ১৯৯১, ২০০১ ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বিএনপি প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও, সমালোচনার মুখে পড়ে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি এক জটিল সঙ্কটে আবদ্ধ। একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার অভাব, অন্যদিকে দলীয় ঐক্যের ঘাটতি ক্রমে রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। দলীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতি বিশেষ করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রবাসবাস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সিদ্ধান্তহীনতা সৃষ্টি করেছে।
এই শূন্যতায় আভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্টত দৃশ্যমান। মনোনয়ন বণ্টনে অসন্তোষ, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা এবং দলীয় পদবণ্টনে বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ আজ বিএনপিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যেসব নেতা “তারেক-ঘনিষ্ঠ” বা “বদরুদ্দোজা ঘরানার” ট্যাগে বিভক্ত হচ্ছেন, তারা মাঠে একে অপরের বিপক্ষে কাজ করছেন—যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
কেন্দ্র ও তৃণমূলে সম্পর্কহীনতা এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। অনেক সময় স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহী নন, কারণ তাদের মনে হয়, কেন্দ্র মাঠের বাস্তবতা বোঝে না। দলীয় কাউন্সিল বা নিয়মিত আলোচনা না থাকায় এই দূরত্ব আরও বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের দুর্ভোগ বা আন্দোলনের ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করেন না।
এমন পরিস্থিতিতে দলের ভিতরে “কাদা ছড়াছড়ি” রীতিমতো জনসমক্ষে চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতাদের পরস্পরের প্রতি তীর্যক মন্তব্য ও দোষারোপ বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্রমশ ক্ষয় করছে। যে ঐক্যের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা এখন ব্যক্তিগত ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি আগামী জাতীয় নির্বাচনে। বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ কৌশল তৈরি না করে, তাহলে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী একাধিক হওয়া, ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা, ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত এজেন্টের অভাব এবং প্রচারে সমন্বয়হীনতা দলের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। তৃণমূলের হতাশা ও বিভক্তির কারণে ভোটারদের আস্থাও ক্ষুণ্ণ হবে—যা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা এনে দেবে।
তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় এখনো আছে, যদি বিএনপি দলীয় আত্মসমালোচনা ও গবেষণাভিত্তিক সংস্কারের পথে হাঁটে। নিচে কয়েকটি গবেষণামূলক পরামর্শ উল্লেখ করা হলো—
১. দলীয় কাঠামোর পুনর্গঠন: কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগ স্থাপন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
২. মনোনয়ন নীতির সংস্কার: ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, যোগ্যতা ও জনআস্থাভিত্তিক প্রার্থী নির্ধারণের মানদণ্ড প্রবর্তন।
৩. প্রবাসী নেতৃত্বের কার্যকর সম্পৃক্ততা: বিদেশে থাকা নেতৃত্বের অনলাইন কাউন্সিল বা ভার্চুয়াল নীতিনির্ধারণী সভার নিয়মিত আয়োজন।
৪. রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সেল: তরুণ কর্মীদের জন্য রাজনৈতিক শিক্ষাক্রম চালু করা।
৫. দলীয় গণতন্ত্র জোরদার: নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ও মতবিনিময় সভা আয়োজন।
৬. ডিজিটাল যোগাযোগ কাঠামো: কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে দলীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রচার।
৭. নারী ও তরুণ নেতৃত্বের উত্থান: নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে সংরক্ষিত পদ ও সুযোগ।
৮. গণআন্দোলন পুনর্গঠন: দলীয় কর্মসূচিকে জনগণের মৌলিক সমস্যা—মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্নীতি—এর সঙ্গে যুক্ত করা।
৯. মিডিয়া ব্যবস্থাপনা: নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় তথ্যভিত্তিক ও গবেষণামূলক প্রতিক্রিয়া টিম গঠন।
১০. ঐক্যের জন্য ‘সংলাপ ফোরাম’: দলের প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
বিএনপির সামনে এখন সময় অল্প, কিন্তু সুযোগ যথেষ্ট। যদি তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একক লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের আস্থা পুনরায় অর্জনের—তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু তাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এক নতুন সূচনা হতে পারে।

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক)