পরনিন্দা চর্চা


অন্যকে নিয়ে গসিপ করা, অন্যের বাড়ির খবর আরেক জায়গায় দেওয়া প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে দেখবেন একটা চাপা কষ্ট আছে । কেউ তার পরিবার নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, কারোর স্বামীর সঙ্গে বনিবনা নেই , কারোর ছেলে ঠিকমতো জব পাচ্ছে না , কারোর ছেলে নেশার জগতে ডুবে আছে কিংবা কারোর মেয়ের সাত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি আর সংসার সামলাতে নাজেহাল । এই মানুষগুলো নিজেদের কষ্ট গুলোকে চেপে রাখতে চায় অন্যের খবর অপরকে জানিয়ে , কার বাড়িতে আর একটু দেরিতে হাঁড়ি চাপল , কার বর ভিজে ভিজে বাড়ি এলো , কার পুজোয় এবারে আগের বারের থেকে কম জামা হলো , কার বাড়িতে একটু গলা চড়িয়ে কথা বলা হলো কোনো ঝামেলার গন্ধ এলো কিনা এ জাতীয় সব খবরের বিভাগীয় প্রধান তারা । আসলে কি জানেন এই খবরগুলো তাদের বেঁচে থাকার রসদ । আপনার বাড়ির দরজায় একটু ধুলো জমা হলে আগে খবর পায় তারা , আপনার বাড়িতে রোববার খাসির গন্ধ ভেসে আসছে কিনা সেটা তাদের আগে আপনিও বলতে পারবেন না ।এই মানুষগুলোর খুব কষ্ট হয় আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথে বা পরিবারের সাথে সময় কাটালে , কোথাও বেড়াতে গেলে , একটু ভালোমন্দ কেনাকাটা করলে । এরা তখন অন্যের কাছে একটা কিছু রং চড়ানো অর্ধসত্য কথা বলে একটু মজা পায় … আসলে এই মজা বা আনন্দ ছাড়া তাদের জীবনে কিছু নেই , বিশ্বাস করুন , কিচ্ছু নেই । আসলে এদের জীবন একটা পাতকুয়োর মতো । শিক্ষা আছে , ব্যপ্তি নেই , প্রসার নেই । স্বপ্ন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন নেই । তাই তারা হাসে, যখন আপনি একটু খারাপ থাকেন। তারা ব্যথা পায়, যখন আপনার বাড়িতে আনন্দের শব্দ শোনা যায়। তারা গল্প বানায়, কারণ তাদের নিজের জীবনে গল্প নেই। তারা চর্চা করে, কারণ তাদের নিজের জীবনের কোনো দিক আর আলোয় নেই।
আসলে তারা কাঁদে — শুধু সেটা আপনি শুনতে পান না। সেই কান্না শব্দে নয়, সুরে নয় — সেটা গসিপের আড়ালে লুকোনো হীনমন্যতার শ্বাসরোধকারী নীরবতা।
তারা বাঁচে আপনার খারাপ খবরে, আর মরতে থাকে প্রতিদিন আপনার হাসিতে।
ভালো থাকুন, জোরে হাসুন, দম নিয়ে বাঁচুন —
কারণ আপনার প্রতিটি আনন্দ, তাদের বিষাক্ত জীবনে একটা চুপচাপ ঝড় তুলে দেয়।
আর আপনি তো জানেনই — ঝড়ের মধ্যে যারা নিজেদের মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, তারা কেউ গসিপ করে না।