সাপের মনির গল্প


অনেক দিন আগের কথা। এক গাঁয়ে বাস করত গোপাল নামে এক গরিব কৃষক। গোপালের কিছুই ছিল না — একটা ছোট কুঁড়েঘর আর সামান্য জমি। তবু সে ছিল খুব সৎ আর পরিশ্রমী।
এক রাতে গোপাল যখন ক্ষেতে পাহারা দিচ্ছিল, হঠাৎ দেখতে পেল এক বিশাল সাপ একটি পুরনো গাছের গোড়ায় বসে আছে। আশ্চর্যের বিষয়, সাপের মাথার ওপর একটা ঝকঝকে আলো জ্বলছিল। প্রথমে ভয়ে জমে গেল গোপাল, কিন্তু সাহস করে একটু কাছে গেল। সে দেখল, সাপের মাথায় একটি মণি — যেটা থেকে আশ্চর্য রকমের আলো বের হচ্ছে। এই ছিল নাগমণি!
গোপাল শুনেছিল, সাপ তার মণি কাউকে দেয় না। যদি কেউ জোর করে নিতে চায়, তাহলে সাপ প্রাণপণ লড়ে। কিন্তু সাপ যদি নিজে কাউকে মণি দেয়, তাহলে সেই মণি যার হবে, তার জীবনে আর কোনো দুঃখ থাকবে না — চাওয়া মাত্র যা চাইবে, তা পাবে।
গোপাল কিছু করেনি। সে শুধু সাপকে নমস্কার করে বলল, “তুমি তোমার মণি নিয়ে সুখে থাকো। আমি তোমাকে কোনো কষ্ট দিতে চাই না।”
সাপ যেন গোপালের কথা বুঝতে পারল। কয়েক রাত পরে, যখন গোপাল আবার ক্ষেতে পাহারা দিচ্ছিল, সেই সাপ এসে চুপচাপ তার সামনে মণিটা রেখে গেল আর দূরে চলে গেল। গোপাল হতবাক হয়ে গেল! সে জানত, এই মণি এখন তার হয়ে গেছে।
মণি পেয়ে গোপাল কোনো লোভ করল না। সে প্রথমেই গ্রামের মানুষের জন্য একটা বড় কুয়ো খুঁড়ল যাতে সবাই পানি পায়, তারপর স্কুল বানাল ছেলেমেয়েদের জন্য। ধীরে ধীরে গাঁয়ে সুখ আর সমৃদ্ধি ফিরল। গোপাল নিজেও সুখে থাকত, কিন্তু কখনো অহংকার করেনি।
সবাই বলত, “গোপাল সত্যিই মণির যোগ্য মালিক।”
আর সাপ? লোকেরা বলে, মাঝে মাঝে দূর থেকে সেই সাপ এসে গোপালের ভালোবাসা আর সদয় মন দেখে হাসত। কারণ সাপ জানত — মণি সে সঠিক মানুষের হাতেই তুলে দিয়েছে।