রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মোঃ আব্দুল কাদের সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ তাড়াশ কলেজ

শ্রবণ ও দর্শনে গড়মিল: রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৪৫ পিএম | 107 বার পড়া হয়েছে
শ্রবণ ও দর্শনে গড়মিল: রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, তা হলো – রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে যা শোনা যায় এবং বাস্তবে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যা দেখা যায়, তার মধ্যে একটি গভীর ও বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। বচন ও বাস্তবতা, প্রতিশ্রুতি ও কর্ম, উচ্চকণ্ঠ নৈতিকতা ও দৈনন্দিন আচরণের এই বৈপরীত্য আজ আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মুখ্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং গণতান্ত্রিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আবহমান বাংলাদেশের জন্য শ্রবণ ও দর্শনের এই অমিল নাগরিক আস্থা, সুশাসন এবং জাতীয় অগ্রগতির ভবিষ্যৎকে গভীরভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ভাষণ ও বাগ্মিতা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকে শুরু করে উন্নয়ন-উদ্দীপক ঘোষণা পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতা দীর্ঘদিন ধরে জনমত গঠনে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নেতারা গণতন্ত্র, দেশপ্রেম, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, কল্যাণ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আবেগপূর্ণ বক্তৃতা দেন। তাঁদের শব্দ ও উচ্চারণ এক ধরনের শ্রুতিলোক তৈরি করে যেখানে আশা, পরিবর্তন ও সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি গুনগুন করে। কিন্তু এই শ্রুতিলোক যখন বাস্তবতার কঠিন মাটির সঙ্গে সংঘর্ষে আসে, তখন তা প্রায়ই ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। নাগরিকেরা তাঁদের চোখ দিয়ে রাজনৈতিক বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখতে পান যে, বলা কথা ও বাস্তব কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিস্তর ফারাক বিরাজ করছে।

এই বৈপরীত্য নতুন কিছু নয়। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন একটি ধারার জন্ম হয়েছে, যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রবণতা বাস্তবায়নের চেয়ে অনেক বেশি। নির্বাচনী ইশতেহার প্রায়ই বাস্তবতার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন কল্পনাপ্রসূত নথিতে পরিণত হয়। উন্নয়নমূলক ভাষণে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তার অনেকাংশই বাস্তব কাঠামো বা সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ ধরনের বক্তৃতা অধিকাংশ সময়ে জনগণকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়, তথ্যভিত্তিক কোনো রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য নয়। ফলে জনগণের শ্রবণেন্দ্রিয়কে সন্তুষ্ট করতে নেতারা যেসব কথা বলেন, তা জনগণের দর্শনেন্দ্রিয়ের দেখা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পায় না।

শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই এই অসামঞ্জস্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। নাগরিকেরা গণতন্ত্র, সংবিধান ও ন্যায়বিচারের প্রতি নেতাদের অঙ্গীকার শোনেন, কিন্তু বাস্তবে ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন লঙ্ঘন, দলীয়করণ ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রত্যক্ষ করেন। দুর্নীতি দমনের অঙ্গীকার শোনানো হয়, কিন্তু দেখা যায় জবাবদিহির ঘাটতি। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়, অথচ বাস্তবে দলীয় নিয়োগ, প্রভাবিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং অনুসন্ধানের অর্ধেক পথেই থেমে যাওয়া নজরে আসে। আইনের শাসন প্রায়ই কথার ফুলঝুরি হিসেবে থেকে যায়, বাস্তব প্রয়োগে দুর্বলতা থেকেই যায়। এই কথামালা ও কাজের অসঙ্গতি নাগরিক আস্থাকে দুর্বল করে তোলে, কারণ জনসাধারণ দেখতে পান, নেতাদের বক্তব্য ও দেশের বাস্তব শাসনচিত্র একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এই বৈপরীত্য সুস্পষ্ট। নেতারা তাঁদের বক্তৃতা ও বিবৃতিতে বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাবাহিকতা, অবকাঠামোগত বিস্তার এবং উন্নয়নকে তুলে ধরেন। এই সাফল্যগুলোর অনেকই সত্য, তবে বক্তৃতায় সাফল্য যতটা উচ্চকিত হয়, জনগণের বাস্তব অভিজ্ঞতা ততটাই ভিন্ন। মানুষ প্রতিদিন বাজারে মূল্যবৃদ্ধি দেখেন, অথচ তাঁরা শোনেন যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাঁরা শোনেন কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে, কিন্তু দেশের শিক্ষিত যুবকদের চাকরির জন্য হাহাকার কমে না। তাঁরা শোনেন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল, অথচ তাঁরা সংবাদে রিজার্ভের ওঠানামা ও ঋণ নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার খবর দেখেন। ফলে বাস্তবতা মানুষের চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং তাঁরা উপলব্ধি করেন, অর্থনৈতিক বয়ান অনেক সময়েই সত্যকে আড়াল করে রাখে।

নাগরিক অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এই অমিল আরও তীব্র। রাজনৈতিক নেতারা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার কথা ঘোষণা করেন, কিন্তু নাগরিকেরা দেখেন ভিন্ন বাস্তবতা—বাকস্বাধীনতার ওপর নজরদারি, সমালোচনার ভয়, বিরোধী মতের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং গণমাধ্যমের ওপর চাপ। সংলাপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির কথা শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে বিরোধী রাজনীতির ওপর বিধিনিষেধ, গ্রেপ্তার এবং ভিন্নমত দমনের ঘটনাই বেশি চোখে পড়ে। ফলে রাজনৈতিক বয়ান আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার আড়ালে থাকে, আর দেশীয় বাস্তবে ক্ষমতা সুসংহত করার রাজনীতি চালু থাকে।

শ্রবণ ও দর্শনের এই অমিলের মানসিক প্রভাবও গভীর। যখন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে বাস্তবতায় দেখেন তার উল্টো ছবি, তখন তারা রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করেন। সন্দেহ, হতাশা ও রাজনৈতিক বিমুখতা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট, কারণ তারা তথ্যপ্রযুক্তি-সচেতন, তারা রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে তথ্যের তুলনা করেন এবং দ্রুত বিবেচনা করতে পারেন কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো এই অমিলের মূল কারণগুলি ব্যাখ্যা করে। জবাবদিহির ঘাটতি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেয়ে বক্তৃতা দেওয়া সহজ হয়ে যায়। পৃষ্ঠপোষকতা-ভিত্তিক রাজনীতি কথাকে বাস্তবতার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিশ্চিত করে যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলি তা প্রায়ই বাস্তবায়নের আগে থেমে যায়।

এই শ্রবণ–দর্শন বৈপরীত্যের গণতান্ত্রিক মূল্য খুবই গুরুতর। যখন জনগণ রাজনৈতিক বক্তব্যে বিশ্বাস হারায়, তখন তারা রাষ্ট্র ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াতেও আস্থা হারায়। প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, জবাবদিহি কমে যায়, এবং ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ে। অমিল বেশি হলে তা সামাজিক অস্থিরতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

অতএব, বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথে এগোতে হলে নেতাদের কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডের সমন্বয় অপরিহার্য। বক্তৃতা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক; প্রতিটি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে থাকতে হবে তথ্য, সময়রেখা ও বাস্তবায়ন কৌশল। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও শক্তিশালী ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে যাতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি যাচাই ও বাস্তবায়ন করা যায়। নাগরিক ও গণমাধ্যমেরও উচিত রাজনৈতিক বক্তব্যকে সমালোচনামূলকভাবে পর্যবেক্ষণ করা।

বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে দেশের প্রয়োজন এমন নেতৃত্ত্ব, যারা কথার সঙ্গে কাজের মিল ঘটাতে সক্ষম। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে নেতারা কতটা সত্যনিষ্ঠভাবে এই দুই ইন্দ্রিয়—শ্রবণ ও দর্শনের—ফারাক দূর করতে পারেন তার ওপর। কথায় এবং কর্মে সত্য ও দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠিত হলেই বাংলাদেশ একটি ন্যায়সঙ্গত, সুশাসিত এবং আস্থাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে।

মোঃ আব্দুল কাদের
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ
তাড়াশ কলেজ, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৫ পিএম
ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

নওগাঁর ধামইরহাটে মালিক বিহীন অবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের (১৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন পিবিজিএম।

বিজিবি সময়ের আলোকে জানায়, শনিবার রাতে সীমান্ত পিলার ২৬৮/৮ এস হতে আনুমানিক ২০০ গজ দূরত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, আলতাদিঘির পশ্চিম পাশে মালিক বিহীন অবস্থায় ১৪ বোতল ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও ৯ বোতল কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে।

বিজিবি আরও জানায়, চোরাকারবারীরা বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে রাতের অন্ধকারে মাদকদ্রব্য ফেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। যার সিজার মূল্য নয় হাজার দুইশ টাকা।

 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩২ পিএম
কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নে পৃর্ব শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ লুটপাটরের ঘটনায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ উটেছে মোঃ মোখলেছ, মজিদুল,ইলিয়াস,মোজাম্মেল সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।অভিযুক্তরা সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ের বাসিন্দা। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী আমিনা বেগম।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মোগলবাসা ইউনিয়ের মােছাঃ আমিনা বেগম (৩৬), স্বামী- জাহিদুল ইসলাম, গ্রাম- মােগলবাসা মালভাদা, ডাকঘর: মালবাসা, উপজেলা: কুড়গ্রাম সদর, জেলা: কুড়গ্রাম থানায় হাজির হইয়া বিবাদী ১। মােখলেছ (৩৫), পিতা- গাজিউর রহমান, ২। রাজু (৫৬), পিতা- নুর ইসলাম ৩। মােজাম্মেল হক (৪০), পিতা- আজিজল, ৪। আল আমিন (২০), পিতা- গাজীউর রহমান, ৫। আক্কাছ হাসেন (২৫), পিতা- গফফার আলী, ৬। আবু তাহের (২৪), পিতা- গফফার আলী, ৭। গফ্ফার আলী (৫৫), ৮। গফযুর আলী (৫০), ৯। হারুন (৪৫), সরব পিতা- মৃত মনছের ১৩। ইলিয়াস (৪২), পিতা- আঃ কাদের, ১৪। মজিদুল (৩৭) পিতা- আঃ কাদের সব সাং- মােগলবাসা মালভাঙ্গা, আগে আমাদের এলাকার জনৈক জাহিদ হাসান বছির এর স্ত্রী সঙ্গে জনৈক আকাশের মধ্যে পরকিয়া সম্পর্কের কারনে বাছর মারা যায়। সই বিষয়ে কুড়িগ্রাম থানায় মামলা হয়। মামলাটি চলমান রয়েছে। উক্ত মামলায় আমার শন্তড় আসামী কোন আসামী নাই। উতক্ত জাহিদ হাসান বছির এর মারা যাওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া গত ইং ০৫/১২/২০২৫ ইং তারিখ ভাচুর করে ক্ষতি সাধন করে। বিবাদীগণ আমার ২টি গরু ৩টি ছাগল, ০২ ভরি ওজনের স্বনালংকার, নগদ ৪০,০০০/- যায়। ঘটনার বিষয় প্রতিবেশী লােকজনসহ স্বাক্ষী-১। হাফিজুল, পিতা- জাবেদ আলী, ২। মাইদুল মিয়া, পিতা- আক্বর আলী, ৩। সাহেব আলী, পিতা- অজ্ঞাত, সব সাং-মােগলবাসা মালভাঙ্গা, ডাকঘর: মােলবাসা, উপজেলা: কুড়িগ্রাম সদর, জেলা: কুড়িগ্রামগন সহ আরোও অনেকে দেখেন ও শোনে। পরের দিন ইং ০৬/১২/২০২৫ তাং দুপুর অনুমান ১২.০০ বাড়ীঘর পূুড়িয়া গিয়ে ঘর বাড়ীতে বসবারের মত পরিবেশ নাই।

ভুক্তভোগী মোছাঃ আমিনা বেগম জানায়,আমার স্বামী ঢাকায় থাকে।আমি তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি থাকি।হঠাৎ আমার বাড়িতে ১০/১৫ জন লোক নিয়ে এসে হামলা আগুন জ্বালিয়ে দেয়।আগুনে বাড়ি পোড়া ছাড়াও নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয় ক্ষতি করে।বর্তমানে আমি তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি।আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এ-বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন,অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।