রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সুলেখা আক্তার শান্তা

শেষ অর্ডার

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৪২ পিএম | 166 বার পড়া হয়েছে
শেষ অর্ডার

সুলেখা আক্তার শান্তা
কোনোরকমে জীবন চালিয়ে অবশেষে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করেন আজাদ। এত বছর অন্যের জমিতে ঘর তুলে ছিলেন; মনটা সবসময় খচখচ করত। মৃত্যুর আগে অন্তত নিজের জমি, নিজের ঘরে ঘুমিয়ে মরতে পারলেই হবে। এই প্রত্যাশা বুক নিয়েই আছি। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে মুখ করে বউ সালেহার সঙ্গে কথা বলছিলেন আজাদ।
সালেহা রান্নাঘরে বসে স্বামীর কথায় সায় দিলেন। “এই বুড়ো বয়সেও তোমাকেই কাজ করতে হয়। দুই ছেলে ঘর করেছে, বাবা-মাকে তাদের বাড়িতে তুলল না।”
আজাদ শান্ত গলায় বললেন, “যাক সালেহা, এসব নিয়ে আফসোস করো না! আল্লাহপাক আমাদের একটা নিজের জায়গা দিয়েছেন। এখন তুমি তোমার স্বামীর নিজের হাতে বানানো ঘরেই থাকতে পারবে। সালেহা বুঝলেন, নারীর কাছে স্বামীই যেন তার সব।
আজাদের বাবা–মায়ের পৈতৃক ব্যবসা ছিল লেপ-তোশক বানানো। সেই ব্যবসাই তিনি ধরে রেখেছেন। অন্য কোনো কাজ তিনি জানেন না, করতেও চান না। বাড়ি বাড়ি ঘুরে লেপ-তোশক বানিয়ে দেন, কেউ অর্ডার দিলে বানিয়ে দেন, আবার নিজে বানিয়েও বিক্রি করেন। এটাই তাঁর বাপ-দাদার কাজ ছিল।
আজাদের এখন বয়স হয়েছে, আগের মতো আর তিনি কাজ করতে পারেন না। তবু কী করবে, কাজ না করলে খাবেন কী?
সালেহা স্বামীকে বারবার বলেন, “এই বয়সে আর কাজে যেয়েন না। না খেয়েই থাকব, তবু আপনার কষ্ট ভালো লাগে না।” আজাদ হাসতে হাসতে বলেন, “বউ পেট তো আর বোঝে না, পেটে তো খাবার দিবার লাগে। না থাকলে না খাইয়া থাকমু।” তারপর সালেহার দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলেন আজাদ, “তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো? তোমার এই ভালোবাসা নিয়েই তো বেঁচে আছি। না হলে টিকে থাকতে পারতাম না।”
সালেহা বিরক্ত হয়ে বলেন, “চুপ থাকেন আপনি। আমি আর আপনার লাইগা কী-ই বা করতে পারি?” আজাদ মাথা নাড়িয়ে বলেন, “না সালেহা, তুমি আমার জন্য অনেক করেছ। ভাগ্যে ভালো, তোমার মতো একটা বউ পেয়েছি।” “হয়েছে হয়েছে, এবার থামেন।” বলে সালেহা কথার ইতি টানলেন।
“বউ, ধুনকারি দাও”, সালেহা এগিয়ে দিলেন ধুনকারি। আজাদ লেপ–তোশকের বান্ডিল মাথায় নিয়ে বের হলেন। গ্রাম থেকে গ্রাম ঘুরে ডাকতে থাকলেন, “লেপ-তোশক বানাবেন নাকি? লেপ-তোশক বানাই!” কিন্তু কারো কাছ থেকেই সাড়া মিলছিল না।
হাঁটতে হাঁটতে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম পার হচ্ছিলেন আজাদ। বয়স হয়েছে, এখন আর মাথায় বোঝা নিয়ে আগের মতো হাঁটা যায় না। মনে মনে ভাবলেন, “এ কথা সালেহাকে বললে তো আর বেরুতে দেবে না। দু’জনের খাওন লাগে,কাজ না করলে চলবে কীভাবে?”
ঠিক তখনই কানে ভেসে এলো—
“ওই লেপতোশকওলা!”
আজাদের মনটা খুশিতে ভরে গেল। “যাক, ডাকটা পেলাম অবশেষে!” তিনি বাড়িতে ঢুকতেই বললেন, “কি বানাইবেন মা?”
জাহানারা বললেন, “দুইটা তোশক আর দুইটা লেপ। দাম বেশি ধরবা না। তোমার লাভ যতটুক রাখবে রেখো। কাজ ভালো করলে তোমাকে আরো কাজ দেবো।”
আজাদ বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “মা, আমি গরিব, তাই বলে কাউরে ঠকিয়ে না। ভালো কাপড় দেই, ভালো সেলাই করি।”
জাহানারা মাথা নাড়লেন, “ঠিক আছে, তুমি কাজ করো। আমি আমার ঘরের কাজ সেরে আসি।”
আজাদ উঠোনে বসে এক ধ্যানে মন দিয়ে কাজ শুরু করলেন। কিন্তু হাতটা ব্যথা করছিল, তুলা ঠিকমতো মারতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর বললেন, “ঠিক আছে, বাড়ি যাই। বউরে নিয়ে দু’জনে মিলে কাজটা সেরে এনে দেই।”
তিনি সবকিছু গুছিয়ে নিলেন।
ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জাহানারাকে ডাকলেন আজাদ। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলেন না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললেন, “থাক, কতক্ষণই বা দাঁড়িয়ে থাকমু! তার চেয়ে বাড়ি যাই, সালেহাকে নিয়ে কাজটা শেষ করে এনে দেই।”
আজাদ বাড়ি ফিরে ডাকলেন, “কই গো সালেহা?”
স্বামীর ডাক শুনে সালেহা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
আজাদ বললেন, “ভালো একটা অর্ডার পাইছি। হাতটা ব্যথা করছে, ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলাম না। ভাবলাম তোমারে নিয়েই কাজটা করি।”
সালেহা হেসে বললেন, “ঠিক আছে, দু’জনে মিলেই করি। তাহলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।” দু’জনে উঠোনে সবকিছু বিছিয়ে কাজ শুরু করল। গল্প করতে করতে কাজ এগোতে থাকলো, তারপর শেষও হয়ে গেল।
আজাদ বললেন,“যাক, কাজটা শেষ হলো। এবার আমি নিয়ে যাই। আসার পথে, তাকে বাড়িতে পাইনি। এখনই দিয়ে আসি, দূরত্ব পায়।”
এদিকে জাহানারা বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন—লেপ–তোশকওলা উঠোনে নেই। তিনি অবাক হয়ে বললেন, “হায় হায়! লোকটার হাতে লেপ তোশক বানানোর কাজ দিয়ে গেলাম, আর সে না বলেই চলে গেল! আমি তো ভাবছিলাম খুশি করব, টাকাও বেশি দেব!”
জাহানারা আশেপাশে কয়েক ঘর গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “ওই লেপতোশকওলা কি তোমাদের বাড়িতে আসছে?”
সবার উত্তর এক, “না, আসে নাই।”
পাশে তখন ছিল দেবরের ছেলে ফরিদ।
“কি হয়েছে চাচি?” ফরিদ জিজ্ঞেস করল।
জাহানারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “বলিস না বাবা, এক বুড়ো মানুষরে লেপ তোশক বানাতে দিছিলাম। আমি একটু পাশের বাড়িতে গেছিলাম, ফিরে দেখি লোকটা হাওয়া!”
“তুই একটু খেয়াল করে দেখিস তো, কোথাও দেখলে ডাকিস।”
ফরিদ বলল, “ঠিক আছে চাচি, আপনি যান। আমি বাড়ির একটু কাজ সাইরা দেখি লোকটারে দেখি কিনা। পাইলে আপনিরে এনে দিমু।”
আজাদ যখন জাহানারার বাড়ির ভিতরে ঢোকার পথে, তখনই দেখা হলো ফরিদের সঙ্গে।
ফরিদ সন্দেহভরা চোখে জিজ্ঞেস করল “আপনি কি এই বাড়ির লেপ তোশকের অর্ডার নিয়েছিলেন?”
আজাদ হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন “হ্যাঁ বাবা…”।
মাথায় ভারী লেপ তোশোকের বোঝা, তার ওপর বয়স, ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। তিনি বাকিটা বুঝিয়ে বলার আগেই ফরিদ উত্তেজিত হয়ে উঠল। হঠাৎ কোথা থেকে একটা বাঁশ কুড়িয়ে এনে রাগে-গরম হয়ে বৃদ্ধ লোকটার ওপর বাড়ি বর্ষণ শুরু করে দিলো।
আজাাদ কাঁপা গলায় বললেন “এই তুমি আমাকে মারছ কেন?”
ফরিদ চিৎকার করে বলল, “শালা চোর! সব নিয়ে পালাইছিস!”
আমি চোর না, আমি চোর না! আমি খেটে–খাওয়া মানুষ!” বুকে হাত চেপে কাঁপা গলায় বলতে থাকলেন আজাদ। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ফরিদের মাথা তখন রাগে অন্ধ। হঠাৎ এমন জোরে একটা বাড়ি দিলো বৃদ্ধ আজাদের মাথায়, সেই মুহূর্তেই মাথা ফেটে অঝোরে রক্ত ঝরতে লাগল! চারদিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল।
“কি হইল? কি হইল?” লোকজন দৌড়ে এলো। ঘটনাটা জানতে চাইলো।
ফরিদ গলায় জোর দিয়ে বলল, “এই বুড়ো শালা চোর! আমার চাচি ওরে লেপ তোশক বানাইতে দিছিল। সবকিছু নিয়া পালাইছে!” রক্তে ভেজা চোখ তুলে আজাদ কাঁপা কণ্ঠে বললেন,“না… না, আমি কিছু নিয়া পালাই নাই… আমি বলতে চাইছিলাম… কিন্তু তাঁরে বাড়িতে পাই নাই। পরে বাড়ি গিয়া আমার বউরে নিয়াই এই লেপ তোশক বানাই নিয়া আইছি।
কথা বলতে বলতে আজাদের শ্বাস ঢিলা হয়ে এলো—পরান যায় যায়।
এসময় আশেপাশের লোকেরা ফরিদকে ধমক দিলো, “তোর জন্যই বুড়ো লোকটার এই অবস্থা! না জেনে মানুষেরে এমনে মারবি?”
লোকজন ফরিদকে ধমক দিচ্ছিল। “তাঁর কথা শুনতে তো পারতি! এত তাড়াহুড়া কেন?”
ঠিক তখনই দৌড়ে এসে উপস্থিত হলেন জাহানারা। দৃশ্য দেখে তিনি হা করে উঠে বললেন,
“হায় হায়! এই বুড়ো মানুষটা কে তার জন্যে এইভাবে মারবি!”
তৎক্ষণাৎ একটা ভ্যান ডেকে আজাদ কে হাসপাতালে নেওয়া হলো। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ—আজাদ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন!
খবর পেয়ে সালেহা ছুটে এলেন। স্বামীর নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। “আপনারা কিছু না জেনে, না শুনে একটা মানুষকে মাইরা ফেললেন! আপনাদের কী হারাইছে? আমি তো আমার স্বামীকে হারালাম!”
জাহানারা কাঁদতে কাঁদতে টাকা দিতে চাইলে সালেহা দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, “আমি লাশ বিক্রি করে টাকা নিতে আসিনি! আমার স্বামীরে ফিরে পাব না। হ্যাঁ, টাকার দরকার আছে… কিন্তু মানুষের জীবনের বদলে টাকা, এইটা আমি নেব না।”
স্বামীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সালেহা।
বাবার মৃত্যুর খবর শুনে দুই ছেলে তাদের বউ নিয়ে বাড়ি এলো।
সালেহা বললেন, “আমার স্বামীর কবর এই উঠোনেই দাও। ঘরে বসে যেন তাঁর কবর দেখতে পাই”।
দুই ছেলে বাবার দাফন সেরে চলে গেল।
সালেহা নিঃসঙ্গ বাড়িতে বসে রইলেন।
নিজের সঙ্গে নিজেই বললেন, “আমি যাবো কই? আমার স্বামীর বাড়িই আমার বাড়ি। এই বাড়িতেই আমি মরতে চাই।”

সুলেখা আক্তার শান্তা

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:৩৩ পিএম
ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের ভাঙ্গুড়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার বিএনপি কার্যালয়ে এ দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপজেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফুল ইসলাম স্বপনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ ফারুক খান হিমেল,অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক নুর মোজাহিদ স্বপন,প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম,আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলহাজ্ব খান,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু সাইদ,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ আব্দুল আজিজ,যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ বরাত আলী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল রেজা,আলতাব হোসেন,পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুল ইসলাম বুরুজ, পল্লী চিকিৎসক দলের ইশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি জুয়েল সরকার,আটঘরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম,উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহব্বায়ক মোঃ হুমায়ুন কবির প্রমুখ৷

আলোচনা শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও পরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাগজ নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে, যা মনসুরনগর চরের শিক্ষার্থীদেরসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করছে; বিশেষ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ও স্কুলে যেতে তাদের ডুবোচরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে, যা একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মূল সমস্যা: শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচর যাতায়াতে বাধা দিচ্ছে।
প্রভাব: ছাত্রছাত্রী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উদাহরণ: মনসুরনগর চরের লোকজন কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।