রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মো. শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

বিংশ শতকের আধ্যাত্মিক মহাবিশ্বের উজ্জ্বল নক্ষত্র গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (রহঃ)

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৮ এএম | 108 বার পড়া হয়েছে
বিংশ শতকের আধ্যাত্মিক মহাবিশ্বের উজ্জ্বল নক্ষত্র গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (রহঃ)

বাংলার আধ্যাত্মিক ইতিহাসে এমন কিছু অমর ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাদের নূরের ছায়ায় শুধু একটি দেশ নয়— গোটা বিশ্ব মানবতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে। তেমনই এক মহান অলির নাম গাউসুল আযম হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (রহঃ) — যিনি ছিলেন বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুফি সাধক, তরিকায়ে মাইজভাণ্ডারীয়ার দীপ্তিমান নক্ষত্র এবং প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ২৮তম বংশধর।

১৮৬৫ সালে (১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৯ আশ্বিন) চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পবিত্র মাইজভাণ্ডার গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন গাউসুল আযম সৈয়দ আহমদউল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)-এর ভাইয়ের পুত্র। তার পূর্বপুরুষ হযরত সৈয়দ হামিদউদ্দিন গৌরী (রহঃ) ১৫৭৫ সালে আরব থেকে বাংলায় আগমন করেন এবং বাংলার গৌড় রাজ্যের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তার বংশধরগণ চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এই গ্রাম থেকেই জন্ম নেয় ‘তরিকা-এ-মাইজভাণ্ডারীয়া’ — যা আজ বিশ্বজুড়ে আধ্যাত্মিকতার প্রতীক।

শৈশব থেকেই তার মাঝে অলৌকিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেত। দোলনায় কেউ না দোলালেও তা নিজে থেকেই দুলত, মুখমণ্ডল থেকে বিচ্ছুরিত হতো নূরের জ্যোতি। এমনকি অমুসলিমরাও তার আভায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতেন। তার জন্মের পর গাউসুল আযম আহমদউল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (কঃ) বলেন—“এই শিশু আমার বাগানের শ্রেষ্ঠ প্রস্ফুটিত গোলাপ। ইউসুফ (আঃ)-এর মতো সৌন্দর্য তার চেহারায় বিরাজমান।”

তার আগমনে গ্রামজুড়ে বরকতের ধারা নেমে আসে— ফলন বৃদ্ধি পায়, পশুপাখির দুধ বাড়ে, মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে— “এই শিশু খোদার রহমত।”

তিনি ফটিকছড়ির ফোরকানিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে চট্টগ্রাম মুহসেনিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় গভীর রাতেও তাকে মসজিদে নামাজে মগ্ন দেখা যেত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান— তার পেছনে সাদা পোশাকধারী অদৃশ্য ব্যক্তিরা নামাজ পড়তেন, যাদের ফেরেশতা বলে ধারণা করা হয়।

২৫ বছর বয়সে পরীক্ষার সময় তিনি গভীর আধ্যাত্মিক অবস্থায় পৌঁছান— জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর তাকে মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে আনা হয়, যেখানে তার আধ্যাত্মিক জাগরণের সূচনা ঘটে।

গাউসুল আযম আহমদউল্লাহ্ (কঃ)-এর নির্দেশে তিনি একদিন পাহাড়ের গহীনে চলে যান এবং সেখানে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জিকির, ধ্যান ও মুনাজাতে মগ্ন থাকেন। তার ধ্যানস্থ স্থানে জ্যোতি বিচ্ছুরিত হতো, বন্য প্রাণীরাও তার আশপাশে শান্তভাবে বসে থাকতো। তার অলৌকিক প্রভাবে অসংখ্য উপজাতি ও অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেন।

আজও খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ে তার সাধনাস্থলসমূহ পবিত্র স্থান হিসেবে পূজিত— যেখানে লাখো আশেকান নিয়মিত যিয়ারতে আসেন।

১২ বছর পর দরবারে ফিরে এসে তিনি দীর্ঘদিন নীরব থাকতেন। কথা না বলেও তার দোয়া ও ইশারায় হাজারো মানুষ সমস্যামুক্ত হতো, রোগমুক্ত হতো, ঈমানের পথে ফিরতো। তার দোয়ার বরকতে শত শত অলিয়ায়ে কামেল জন্ম নিয়েছেন, যাদের মাধ্যমে আজও বিশ্বজুড়ে মানবতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে।

গাউসুল আযম বাবাভাণ্ডারী (রহঃ)-এর তরিকায় প্রতিফলিত হয় “স্রষ্টাকে ভালোবাসো, সৃষ্টির সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দাও” — এই মহান দর্শন। এই তরিকার মূল বার্তা ছিল মানবপ্রেম, সহমর্মিতা, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব। তার শিক্ষা আজও কোটি আশেকানকে আল্লাহপ্রেমে অনুপ্রাণিত করছে।

ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা আজিজুল হক আল ক্বাদেরী (রহঃ) তার সম্পর্কে লিখেছেন—“তাহার কারামত লেখনী ও বর্ণনার বাহিরে চলে গেছে।”

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, কবি জসীমউদ্দিন, আহমদ ছফা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ তার আধ্যাত্মিক মর্যাদা সম্পর্কে শ্রদ্ধাভরে মন্তব্য রেখেছেন।

জার্মান অধ্যাপক ড. হ্যান্স হার্ডার লিখেছেন—“The Maijbhandaris of Chittagong — have created a unique humanistic model of modern Sufism.”

১৯৩৭ সালের ৫ এপ্রিল (১৩৪৩ বঙ্গাব্দ ২২ চৈত্র, ২২ মহররম) তিনি পরম করুণাময়ের সান্নিধ্যে চলে যান। তার জানাযার ইমামতি করেন তার শাহজাদা হযরত সৈয়দ আবুল বশর আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী (কঃ)।

প্রতি বছর তার জন্মবার্ষিকী (২৯ আশ্বিন) ও ওফাত দিবস (২২ চৈত্র) লক্ষাধিক আশেকানদের অংশগ্রহণে মহাসমারোহে পালিত হয়— যা এখন বিশ্বব্যাপী এক বিশাল আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।

তার রওজা শরীফ আজও নূরের আলোয় উদ্ভাসিত। যেন হযরত রুমী (রহঃ)-এর বাণী বাস্তব রূপ পেয়েছে—“দেখো, আল্লাহ কিভাবে তার বন্ধুদের স্থানকে আলোকিত করে রেখেছেন! এ আলো কোন সাধারণ আলো নয়— এটি খোদার নূরের আলো।”

গাউসুল আযম সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (রহঃ) শুধু একজন সুফি সাধক নন— তিনি ছিলেন মানবতার স্থপতি, প্রেমের দূত ও আল্লাহর নূরের প্রতীক। তার জীবন আমাদের শেখায়—“আল্লাহকে ভালোবাসো, মানুষকে ভালোবাসো, এবং মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করো।”

তার তরিকায় মাইজভাণ্ডারীয়া আজও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে শান্তি, ভালোবাসা ও আল্লাহর নূরের বার্তা — যা কোনো কালের জন্য নিভে যাওয়ার নয়।

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি

ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

গোলজার রহমান ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৫ পিএম
ধামইরহাটে মালিক বিহীন ফেনসিডিল উদ্ধার

নওগাঁর ধামইরহাটে মালিক বিহীন অবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি পত্নীতলা ব্যাটালিয়নের (১৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন পিবিজিএম।

বিজিবি সময়ের আলোকে জানায়, শনিবার রাতে সীমান্ত পিলার ২৬৮/৮ এস হতে আনুমানিক ২০০ গজ দূরত্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, আলতাদিঘির পশ্চিম পাশে মালিক বিহীন অবস্থায় ১৪ বোতল ভারতীয় নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও ৯ বোতল কাশির সিরাপ আটক করা হয়েছে।

বিজিবি আরও জানায়, চোরাকারবারীরা বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে রাতের অন্ধকারে মাদকদ্রব্য ফেলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। যার সিজার মূল্য নয় হাজার দুইশ টাকা।

 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩২ পিএম
কুড়িগ্রামে শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নে পৃর্ব শত্রুতার জেরে অগ্নিসংযোগ লুটপাটরের ঘটনায় প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ উটেছে মোঃ মোখলেছ, মজিদুল,ইলিয়াস,মোজাম্মেল সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।অভিযুক্তরা সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়ের বাসিন্দা। এ ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী আমিনা বেগম।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মোগলবাসা ইউনিয়ের মােছাঃ আমিনা বেগম (৩৬), স্বামী- জাহিদুল ইসলাম, গ্রাম- মােগলবাসা মালভাদা, ডাকঘর: মালবাসা, উপজেলা: কুড়গ্রাম সদর, জেলা: কুড়গ্রাম থানায় হাজির হইয়া বিবাদী ১। মােখলেছ (৩৫), পিতা- গাজিউর রহমান, ২। রাজু (৫৬), পিতা- নুর ইসলাম ৩। মােজাম্মেল হক (৪০), পিতা- আজিজল, ৪। আল আমিন (২০), পিতা- গাজীউর রহমান, ৫। আক্কাছ হাসেন (২৫), পিতা- গফফার আলী, ৬। আবু তাহের (২৪), পিতা- গফফার আলী, ৭। গফ্ফার আলী (৫৫), ৮। গফযুর আলী (৫০), ৯। হারুন (৪৫), সরব পিতা- মৃত মনছের ১৩। ইলিয়াস (৪২), পিতা- আঃ কাদের, ১৪। মজিদুল (৩৭) পিতা- আঃ কাদের সব সাং- মােগলবাসা মালভাঙ্গা, আগে আমাদের এলাকার জনৈক জাহিদ হাসান বছির এর স্ত্রী সঙ্গে জনৈক আকাশের মধ্যে পরকিয়া সম্পর্কের কারনে বাছর মারা যায়। সই বিষয়ে কুড়িগ্রাম থানায় মামলা হয়। মামলাটি চলমান রয়েছে। উক্ত মামলায় আমার শন্তড় আসামী কোন আসামী নাই। উতক্ত জাহিদ হাসান বছির এর মারা যাওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া গত ইং ০৫/১২/২০২৫ ইং তারিখ ভাচুর করে ক্ষতি সাধন করে। বিবাদীগণ আমার ২টি গরু ৩টি ছাগল, ০২ ভরি ওজনের স্বনালংকার, নগদ ৪০,০০০/- যায়। ঘটনার বিষয় প্রতিবেশী লােকজনসহ স্বাক্ষী-১। হাফিজুল, পিতা- জাবেদ আলী, ২। মাইদুল মিয়া, পিতা- আক্বর আলী, ৩। সাহেব আলী, পিতা- অজ্ঞাত, সব সাং-মােগলবাসা মালভাঙ্গা, ডাকঘর: মােলবাসা, উপজেলা: কুড়িগ্রাম সদর, জেলা: কুড়িগ্রামগন সহ আরোও অনেকে দেখেন ও শোনে। পরের দিন ইং ০৬/১২/২০২৫ তাং দুপুর অনুমান ১২.০০ বাড়ীঘর পূুড়িয়া গিয়ে ঘর বাড়ীতে বসবারের মত পরিবেশ নাই।

ভুক্তভোগী মোছাঃ আমিনা বেগম জানায়,আমার স্বামী ঢাকায় থাকে।আমি তিন সন্তান নিয়ে বাড়ি থাকি।হঠাৎ আমার বাড়িতে ১০/১৫ জন লোক নিয়ে এসে হামলা আগুন জ্বালিয়ে দেয়।আগুনে বাড়ি পোড়া ছাড়াও নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয় ক্ষতি করে।বর্তমানে আমি তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি।আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নিরপেক্ষ বিচার চাই।

এ-বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন,অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।