প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে গড়ে ওঠা একটি পার্ক শুধু একটি নির্মাণ নয়, এটি হয়ে ওঠে মানুষের আত্মার আশ্রয়স্থল, হয়ে ওঠে গ্রামের কোলাহলহীন শান্তির মাঝে বিনোদনের এক স্নিগ্ধ ঠিকানা। মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর গ্রামের বুকে এমনই এক নিঃশব্দ আর স্বপ্নময় আলোকদীপ হলো কুঞ্জলতা ফুড পার্ক।
এটি কোনো কল্পনার রাজ্য নয়, বরং মাটির মানুষের হাতেই গড়া বাস্তবতার এক অনুপম নিদর্শন। মনোরম পরিবেশে ঘেরা এই পার্ক যেন এক কবিতার অন্ত্যমিল। গাছপালা, ফুলের বাগান, শিশুর হাসি আর মানুষের পদচারণায় প্রতিটি কোণ যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।
কুঞ্জলতা ফুড পার্কের বিশেষত্ব কেবল এর সৌন্দর্যে সীমাবদ্ধ নয়—বরং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আরও গভীর। এ যেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ সৌন্দর্যকে রক্ষা করে নির্মিত এক নান্দনিক পরিসর। শিশুদের জন্য রয়েছে রঙিন দোলনা, পাকা পথ ধরে হেঁটে যাওয়া ছোট ট্রেনের মতো আনন্দযাত্রা, আর বিভিন্ন খেলনার ব্যবস্থা—যা শিশুদের হৃদয়ে আনন্দের কুসুম ফুটিয়ে তোলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগত মানুষদের জন্য রয়েছে বিশ্রামের ছায়াময় স্থান ও স্বাদের বাহারে ভরা রেস্টুরেন্ট, যা আনন্দকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
এ পার্ক শুধু একটি ঘোরার জায়গা নয়—এটি গ্রামের মানুষকে যুগোপযোগী বিনোদনের স্বাদ দিয়েছে। আগের দিনে যেখানে গ্রামীণ মানুষকে শহরের বিনোদনের জন্য ছুটতে হতো, এখন তারা নিজ গাঁয়ের বুকে গড়তে পারছে এক অনবদ্য আনন্দভুবন। কুঞ্জলতা ফুড পার্ক তাই এক সামাজিক বিকাশের চিত্র, যা গ্রামের আত্মপরিচয়কে নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছে।
এই পার্ক আজ শুধু ইশিবপুর নয়, গোটা রাজৈর তথা মাদারীপুর জেলার মানুষের কাছে একটি গর্বের স্থাপনা। এটি বিনোদনের পাশাপাশি গ্রামের অর্থনীতিতেও যুক্ত করেছে নতুন দিগন্ত। আগত পর্যটকদের আনাগোনায় বাড়ছে স্থানীয় ব্যবসা, বেড়েছে পরিচিতি, জেগে উঠেছে এক সম্ভাবনার আলো।
সবশেষে বলা যায়, কুঞ্জলতা ফুড পার্ক শুধুমাত্র একটি পার্ক নয়, এটি একটি গ্রামীণ রেনেসাঁর প্রতীক—যেখানে সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার এক অপূর্ব মিলন ঘটে। এ যেন সবুজ ঘাসে লেখা এক কবিতা, শিশুর হাসিতে বাঁধা এক গান, আর গ্রামের মাটিতে আঁকা এক রঙিন স্বপ্ন।