সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

রুবিনা শেখ

ওরে মন, কেন তুই অসান্ত

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩৬ এএম | 129 বার পড়া হয়েছে
ওরে মন, কেন তুই অসান্ত

ওরে মন, কেন তুই অসান্ত,
আজ ঝড় বয়ে যায় হৃদয়-আঙিনায় অন্তহীন প্রান্ত,
অজানা এক টানে কাঁপে মন,
কীসের আশঙ্কা, কীসের আহ্বান, জানি না কোন কারণ ,কি জানি হারাবার ভয় আহ্ হৃদয় পুড়ে ছাই, রক্তের বাঁধন , নাকি কোন প্রিয়জন, কার সুরে শুনছি এই মোর নাম খানি, বারে বারে শুনি কে যেন ডাকে মোর নাম দরি,
কানে বাজে তার সুর, তবু নয়নে দেখি না তাহারি,
মেঘে ঢাকা আকাশ যেমন লুকায় চাঁদের আলো, তেমনি তুইও লুকিয়ে থাকিস, ওহে প্রিয়, কোথাও ভালো?
হৃদয়ে জাগে এক অচেনা সুর,
তবু চেনা লাগে, যেন পূর্বজন্মের পুর, বুঝিতে না পারি কে সে, তবু মনে হয় আপনা,
যেন সে-ই আমার অনন্ত প্রিয়, হারানো ঠিকানা।
ওরে মন, কেন তুই অসান্ত আজ,
ভালোবাসার বায়ু বয়ে আনে বিরহের সাজ,
যদি সে ডাকে, তবে চলি তার পথে, পৃথিবীর সব দ্বিধা ভুলে, স্নেহ মমতার
হৃৎস্রোতে।

অত্যাচার ও শেষ পরিণতি:

আসিয়া (রাঃ)-এর জান্নাত লাভ ও ফেরাউনের করুণ দশা

ইউ বি টিভি ডেস্ক প্রকাশিত: সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:২৭ এএম
আসিয়া (রাঃ)-এর জান্নাত লাভ ও ফেরাউনের করুণ দশা

প্রাচীন মিশরের শাসক ফেরাউন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে অহংকারী ও নিষ্ঠুর শাসক। সে নিজেকে ‘আল্লাহ’ বলে দাবি করত এবং প্রজাদের বলত: “আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো উপাস্য নেই।” তার এই দাম্ভিকতা, জুলুম ও মিথ্যা দেবত্বের দাবি পুরো মিশরকে কাঁপিয়ে তুলত।
কিন্তু ফেরাউনের এই প্রাসাদ আর ফাসাদের ভেতরেই ছিল এক আলোকিত হৃদয়—তিনি হলেন তাঁর স্ত্রী হযরত আসিয়া বিনতে মুজাহিম (রাঃ)। তিনি ছিলেন ঈমানদার, দয়ালু এবং আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দী।
আসিয়ার দৃঢ় ঈমানঃ
যখন আল্লাহর নবী হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর বার্তা নিয়ে ফেরাউনের কাছে এলেন, তখন আসিয়া বিনতে মুজাহিম (রাঃ) সেই সত্যকে দ্বিধা ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপন করলেন। তিনি গোপনে নামাজ আদায় করতেন এবং আল্লাহর কাছে ব্যাকুল হয়ে দোয়া করতেন:
“হে আমার প্রভু! তুমি আমার জন্য জান্নাতে তোমার সান্নিধ্যে একটি ঘর তৈরি কর। আর আমাকে ফেরাউন এবং তার অত্যাচার থেকে রক্ষা কর।”
একদিন ফেরাউন জানতে পারল যে, তার স্ত্রী তার উপাস্যকে অস্বীকার করে হযরত মূসা (আঃ)-এর আল্লাহ্‌র ওপর ঈমান এনেছে। ফেরাউন প্রচণ্ড ক্রোধে ফেটে উঠলো এবং আসিয়াকে ধরে আনার আদেশ দিল।
ফাসাদের সৈন্যরা তাকে টেনেহিঁচড়ে ফেরাউনের সামনে নিয়ে এলো। ফেরাউন ক্রোধে গর্জন করে বলল, “তুমি কি এখনও মূসার আল্লাহকে বিশ্বাস করো?”
আসিয়া বিনতে মুজাহিম (রাঃ) দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিলেন: “হ্যাঁ! আমি এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি, যিনি আসমান ও জমিনের মালিক!”
ফেরাউনের রাগ সীমা ছাড়িয়ে গেল। সে আদেশ দিলো, “তাকে মাটিতে শুইয়ে দাও এবং বিশাল পাথর দিয়ে চেপে দাও, যতক্ষণ না সে মৃত্যুবরণ করে।”
জান্নাতের দৃশ্য ও শাহাদাতঃ
আসিয়া (রাঃ) যখন এই চরম অত্যাচারের শিকার হচ্ছিলেন, তখন তিনি আকাশের দিকে তাকালেন। তাঁর মুখে কোনো ভয় ছিল না। সেই মুহূর্তে আল্লাহ তাঁর সামনে জান্নাতের দরজা খুলে দিলেন! তিনি দেখলেন আলোয় ভরা এক প্রাসাদ, শান্তি আর আনন্দে পরিপূর্ণ। সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে তিনি হাসলেন।
সৈন্যরা অবাক হয়ে গেল, কিন্তু ফেরাউনের আদেশে তাঁকে শহীদ করা হলো। আসিয়ার পবিত্র আত্মা আল্লাহর কাছে চলে গেল এবং তিনি জান্নাতের অন্যতম রানীদের একজন হলেন।
ফেরাউনের চূড়ান্ত পরিণতিঃ
এদিকে, ফেরাউনের পরিণতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যখন হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে বনি ইসরাইলকে নিয়ে সমুদ্রের দিকে পালালেন, ফেরাউন তার বিশাল বাহিনী নিয়ে তাদের পিছু নিল।
আল্লাহ সমুদ্রকে বিভক্ত করে মূসা (আঃ)-এর জন্য শুকনো পথ তৈরি করলেন। বনি ইসরাইল নিরাপদে পার হয়ে গেল। ফেরাউন অহংকার করে বললো, “দেখো, আমিও পার হব!” সে সৈন্যদের নিয়ে মাঝ সমুদ্রে প্রবেশ করল।
ঠিক সেই মুহূর্তে আল্লাহর আদেশে সমুদ্রের ঢেউগুলো আবার মিলিত হলো। পুরো সৈন্যবাহিনী সহ ফেরাউন ডুবে গেল!
ডুবে যাওয়ার সময় ফেরাউন চিৎকার করে বললো: “আমি বিশ্বাস করলাম, মূসার উপাস্য সত্য!” কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আল্লাহ বললেন: “এখন আর নয়! তুমি তো এতদিন অবাধ্য ছিলে।”
ফেরাউন মারা গেল, কিন্তু তার দেহকে আল্লাহ সংরক্ষণ করলেন, যাতে পৃথিবীর মানুষ দেখতে পারে—যারা অহংকার করে আল্লাহকে অস্বীকার করে, তাদের পরিণতি কী ভয়াবহ হয়।
হযরত আসিয়া (রাঃ) পেলেন জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদা, আর ফেরাউন পেল চিরস্থায়ী লাঞ্ছনা ও ধ্বংস।
শিক্ষা:
ঈমানের দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি ভরসাই হলো প্রকৃত মুক্তি। ক্ষমতার অহংকার এবং আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যক্তিকে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

মুচকি হাসি

ইউ বি টিভি ডেস্ক প্রকাশিত: সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:২৫ এএম
মুচকি হাসি

মুসলিম সমাজে মুচকি হাসির সুন্নাহ ছড়িয়ে দেওয়াটা কতই-না সুন্দর ও উত্তম কাজ।
প্রতিদিন যে দুঃখকষ্টের মধ্য দিয়ে মানুষ জীবনযাপন করে, মুচকি হাসি তাতে সামান্য হলেও আনন্দের পরশ বুলিয়ে দেয়। এমনটা জরুরি নয় যে, মুচকি হাসি দেওয়ার জন্য সব রকম দুশ্চিন্তা ও বিপদ মুক্ত থাকতে হবে; বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নানারকম কষ্ট ও দুঃখের মাঝেই জীবনযাপন করতেন, তারপরও সবসময় তাঁর চেহারায় মুচকি হাসি লেগে থাকত।
‎‎আবদুল্লাহ ইবনে হারিস ইবনে জায রা. বলেন,
‎‎রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )
-এর চেয়ে বেশি মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি। (১)
‎‎শুধু তাই নয়, এই মুচকি হাসিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বড় সওয়াবের কাজ আখ্যা দিয়ে এর জন্য পুরস্কার নির্ধারিত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
‎‎রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‎‎তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার মুচকি হাসি সদকাস্বরূপ। (২)
‎‎১. সুনানুত তিরমিজি, ৩৬৪১; আল-মুসনাদ লিল ইমাম আহমাদ, ১৭৭৪০
‎২. সুনানুত তিরমিজি, ৩৬৪১; সহিহ ইবনি হিব্বান, ৪৭৪; সহিহ বুখারি (আল-আদাবুল মুফরাদ, পৃ. ৪৮১)

জমজমের অলৌকিকতা: হাজেরা (আঃ)-এর দৌড় ও আল্লাহর কুদরত 🕋

ইউ বি টিভি ডেস্ক প্রকাশিত: সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:২৪ এএম
জমজমের অলৌকিকতা: হাজেরা (আঃ)-এর দৌড় ও আল্লাহর কুদরত 🕋

আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-কে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করলেন। তিনি আদেশ দিলেন, যেন ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর প্রিয় স্ত্রী হযরত হাজেরা (আঃ) এবং ছোট শিশু হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কে নিয়ে মক্কার জনবিহীন মরুপ্রান্তরে রেখে আসেন।
সেই সময় মক্কা ছিল সম্পূর্ণ নির্জন। সেখানে ছিল না কোনো মানুষ, না কোনো গাছ, আর না কোনো পানির উৎস। চারদিকে শুধু পাথর আর বালুর পাহাড়।
আল্লাহর হুকুমের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত হয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁদের সেখানে রেখে ফিরে এলেন।
অসহায়ত্ব ও ভরসা
হযরত হাজেরা (আঃ)-এর কাছে ছিল মাত্র অল্প কিছু পানি আর সামান্য খাবার। কিছুদিন পর সেই সামান্য খাবার ও পানি সব শেষ হয়ে গেল। ছোট শিশু ইসমাঈল (আঃ) তৃষ্ণায় কাতর হয়ে কাঁদতে লাগলেন। সন্তানের এই কষ্ট দেখে মায়ের বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো, কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারছিলেন না।
মায়ের হৃদয়ে তখন একটিই চিন্তা: কোথাও যদি একটু পানি পেতাম!
ভরসা শুধু আল্লাহ্‌র ওপর রেখে তিনি দৌড়ে গেলেন সাফা পাহাড়ে। চারদিকে তাকালেন, কিন্তু জনমানব বা পানির কোনো চিহ্ন নেই। এরপর তিনি মারওয়া পাহাড়ে গেলেন। সেখানেও নিঃশব্দ মরুভূমি ছাড়া কিছু পেলেন না।
সাতবার দৌড়
এইভাবে তিনি সাফা এবং মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌঁড়ালেন। প্রতিটি দৌঁড়ের সময় তাঁর মনে আশা ছিল—কোথাও হয়তো পানি বা কোনো পথিক পাবেন। তিনি ছিলেন ক্লান্ত, কিন্তু তাঁর হৃদয়ে ছিল আল্লাহর প্রতি অটল ভরসা।
যখন তিনি সপ্তমবার দৌঁড়ে শেষ করলেন, ঠিক তখনই তিনি দূর থেকে দেখলেন—তাঁর ছোট শিশু ইসমাঈল (আঃ) পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটি কাটছেন!
জমজমের উৎপত্তি: যখন তিনি চতুর্থবার মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছান, তখন ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের কাছে বা জিবরাইল (আ.)-এর ইশারায় মাটি ফেটে পানির ধারা বেরিয়ে আসে। এই অলৌকিক পানির ধারাকে রক্ষা করার জন্য হাজেরা (আ.) ‘জমজম’ (থেমে যাও) বলে চিৎকার করেন, এবং সেই থেকে এর নাম হয় ‘জমজম’।
আর সেই স্থান থেকেই হঠাৎ করে কূপের মতো পানি প্রবল বেগে বের হতে শুরু করলো।
হযরত হাজেরা (আঃ) দ্রুত দৌড়ে সেখানে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন: “জমজম! জমজম!” অর্থাৎ, “থেমে যাও! থেমে যাও!” কারণ, পানি এত দ্রুত বের হচ্ছিল যে, তা চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। তিনি দ্রুত হাতে বালু দিয়ে চারপাশ ঘিরে পানি জমিয়ে রাখলেন।
জমজমের বরকত
আর এইভাবে, আল্লাহর হুকুমে সৃষ্টি হলো জমজম কূপ—যা আজও পবিত্র মক্কায় প্রবহমান। এই অলৌকিক পানি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র পানি হিসেবে গণ্য।
নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন: “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, আল্লাহ সেই উদ্দেশ্য পূরণ করেন।” (ইবনে মাযা)
সুবহানাল্লাহ! যে ভূমি একদিন ছিল নির্জন, আল্লাহ তাতে এমন বরকত দিয়েছেন যে, আজ তা পৃথিবীর হৃদয়ের স্থানে পরিণত হয়েছে। মক্কা মুকাররমা, যেখানে কোটি কোটি মানুষ হজ ও ওমরাহ করতে আসেন এবং জমজমের পানি পান করে নিজেদের নিয়ত পূর্ণ করেন।
আল্লাহর কুদরত: এই ঘটনা ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত ও কুদরত, যা প্রমাণ করে যে তিনি তাঁর অনুগত বান্দাদের কখনো একা ছাড়েন না। এই কূপটি আজও সচল এবং এর পানি অগণিত মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে ও বরকত দিচ্ছে।
শিক্ষা:
আল্লাহর নির্দেশে ত্যাগ স্বীকার এবং আল্লাহর ওপর অটল ভরসা রাখলে, আল্লাহ্‌ এমনভাবে সাহায্য করেন, যা মানব কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়। ধৈর্য, ত্যাগ এবং ইবাদতের মাধ্যমেই জীবনে আল্লাহর বরকত নেমে আসে।