বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট ও ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী দিনে দিনে খাদ্য তালিকা সংকুচিত করতে বাধ্য হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় “খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক” সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে খাদ্য অধিকারকে ভবিষ্যৎ নীতি প্রণয়নের কেন্দ্রে আনতে জোর দাবি জানিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত “বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় এই দাবি উঠে আসে। সভার সভাপতিত্ব করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
সভায় বক্তারা জানান, সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৬টি পরিবার পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না। চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ৭০% মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খরচ করছে অথবা সম্পদ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক খাতে ব্যয় কমে যাচ্ছে।
অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তার মূল সমস্যা সুষম বণ্টনের অভাব। খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন জরুরি, যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।”
অন্যদিকে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শিলা রানী দাস জানান, বর্তমানে ১ কোটি ২৭ লাখ মানুষ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকলেও, শহরাঞ্চলে সুবিধা পর্যাপ্ত নয়।
বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, “আয় বৈষম্য ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দারিদ্র্য পরিস্থিতি অবনতির দিকে। আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।”
ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন দুর্যোগ সহনশীল খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।” তিনি আরও বলেন, “নীতিনির্ধারণে খাদ্য অধিকারকে অগ্রাধিকার না দিলে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সভা থেকে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরে, তার মধ্যে রয়েছে:
অবিলম্বে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রান্তিক মানুষের আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি
বাজার মনিটরিং জোরদার এবং স্বল্পমূল্যে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বহুমুখী কর্মসূচি
কৃষক, নারী, যুব, ছাত্র ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে খাদ্য ব্যবস্থায় বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।
বক্তারা বলেন, খাদ্য অধিকার কোনো দয়া নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার।” এ অধিকার নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুনির্দিষ্ট আইন ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।