ডেঙ্গু হলে কী করবেন?
যদি ডেঙ্গু হয়ে যায় তাহলে কী করবেন? চলুন জেনে নিই।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
ডেঙ্গু হলে কী করবেন সেটি জানার আগে জানা প্রয়োজন আপনার ডেঙ্গু হয়েছে কি না। তাই যথাসময়ে ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। জ্বরের প্রথম পাঁচ দিনে সাধারণত ডেঙ্গু পজিটিভ আসে এরপর আবার নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই জ্বর আসলে অবহেলা না করে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করতে হবে। দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক ডেঙ্গু সম্পর্কে জানেন, তাই সাধারণ ফিজিশিয়ান বা প্রাইভেট ডাক্তার থেকেও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো। ডেঙ্গুর জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, তবে চিকিৎসকের নির্দেশনা মানলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব।
বিশ্রাম:
ডেঙ্গু শরীরে অনেক দুর্বলতা এনে দেয় এবং জ্বর ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীর ও মাথাব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এবং কিছু ক্ষেত্রে ‘হাড়ভাঙ্গা জ্বর’ও দেখা দিতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণও বেড়ে যেতে পারে। তাই বিশ্রাম না নিলে ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
পানীয় জাতীয় খাবার খেতে হবে:
ডেঙ্গু হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। ফলের রস, ওরাল স্যালাইন, ডাবের পানি এবং অন্যান্য ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল পান করলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হবে। স্বাস্থ্যসম্মত ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
জ্বর কমাতে করণীয়:
ডেঙ্গুতে জ্বর অনেক বেশি তাপমাত্রার হতে পারে, তাই শরীর ঠান্ডা রাখতে নিয়মিত পানি দিয়ে মুছতে হবে। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যাসপিরিন বা অন্যান্য ব্যথানাশক গ্রহণ করা উচিত নয়।
জ্বর কমার পর সতর্কতা:
জ্বর কমে গেলেও ৪ থেকে ৫ দিন পরে শরীরে র্যাশ বা এলার্জি দেখা দিতে পারে। এসময় রক্ত পরীক্ষা করে প্লেটলেট সংখ্যা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। জ্বর কমার পর ক্রিটিকাল সময়ে তীব্র পেট ব্যথা, বমি, রক্তক্ষরণ বা প্রসাব কমে গেলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া জরুরি, নইলে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম দেখা দিতে পারে।
প্লেটিলেট সম্পর্কে জানুন:
প্লেটিলেট বা অনুচক্রিকা রক্তের অংশ যা রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করে। ডেঙ্গুতে প্লেটিলেটের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে। যদি প্লেটিলেট খুব কমে যায়, নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
মশা থেকে সুরক্ষা:
ডেঙ্গু এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই আক্রান্ত রোগীর জন্য মশারি ব্যবহার এবং মশার প্রতিরোধে উপযোগী পোশাক পরা জরুরি।
পুনরায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য সতর্কতা:
ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠলেও পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়, এবং দ্বিতীয়বারের সংক্রমণ বেশি বিপজ্জনক হতে পারে। হেমোরেজিক ফিভার বা শক সিন্ড্রোমের মতো জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু হলে যে খাবারগুলো খাবেন
কমলা: কমলা ও কমলার রস ডেঙ্গু জ্বরে ভালো কাজে আসতে পারে। কারণ এটিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিওক্সিডেন্ট। আর এই দুটি উপাদান ডেঙ্গু জ্বর নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।
ডালিম: ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে পরিমাণ মতো মিনারেল। যদি আপনি নিয়ম করে ডালিম খান তাহলে বেড়ে যাবে প্লেটলেটের সংখ্যা। এই উপকারী ফলটি খেলে ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভূতিও দূর হবে। প্রাচীন কাল থেকে এই ফলটি রোগ নিরাময়ের পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডাবের পানি: ডেঙ্গুর জ্বর হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। এ সময় বেশি বেশি করে ডাবের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যাবে। কেননা ডাবে রয়েছে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
পেঁপে পাতার জুস: ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীর শরীরে কমে যেতে পারে প্লেটলেট। তাই এ সময় আপনার উপকার করতে পারে পেঁপে পাতা। পেঁপে পাতায় পাপাইন এবং কিমোপেইনের মতো এনজাইম সমৃদ্ধ যা হজমে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করেতে পারে প্লেটলেটের পরিমাণও। সেজন্য আপনাকে প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ এমএল পেঁপে পাতার তৈরি জুস খেতে হবে। আপনি ঘরে বসেই তৈরি করতে পারবেন এ জুস।
হলুদ: ডেঙ্গু জ্বরে কাজে আসতে পারে হলুদও। এর জন্য আপনাকে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে হবে। এটি আপনাকে অতি দ্রুত সুস্থ্য করে তুলবে।
মেথি: ডেঙ্গু জ্বর হলে কাজে আসবে মেথি। এটি আপনাকে অতি সহজে ঘুমিয়ে যেতে সহায়তা করেবে। সেই সঙ্গে সহয়তা করবে অতিরিক্তমাত্রার জ্বর কমিয়ে আনতে। তবে মেথি গ্রহণ করার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরমার্শ করে নিতে হবে।
ব্রোকলি: ব্রোকলি হলো ভিটামিন কে’র একটি ভালো উৎস। অন্যদিকে ভিটামিন কে রক্তের প্লেটিলেট বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। যদি কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন; তাহলে অবশ্যই বেশি করে ব্রোকলি খাবেন।
পালংশাক: পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ওমেগো-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এটি আবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এই শাকটি বেশি করে গ্রহণ করলে অতি দ্রুত প্লেটিলেট বৃদ্ধি পায়।
কিউইফল: কিউই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে এটিতে পটাশিয়ামও রয়েছে। এই ফলটি বেশি খাওয়ার ফলে ইলেক্ট্রোলাইট স্তর এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ফলটি খেলে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গু জ্বরের সময় যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত
তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার: ডেঙ্গু জ্বর হলে অবশ্যই তৈলাক্ত ও ভাজা খাবরগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এই খাবারগুলো খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
মসলাযুক্ত খাবার: ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই মসলাযুক্ত খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। এই ধরনের খাবার বেশি করে খেলে পাকস্থলীর দেয়াল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ক্যাফিনযুক্ত পানীয়: ডেঙ্গু হলে তরল খাবার বেশি করে খেতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবারগুলো হার্ট রেট বাড়িয়ে দিতে পারে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি নিয়ে আসতে পারে।