নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় নিরলস এক অভিভাবক ইব্রাহিম আলী মন্ডল


বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নের কালাই কর্নিপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই নারী শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম আলী মন্ডল শুধুমাত্র একজন শিক্ষক নন, একজন সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমী ও মানবিক অভিভাবক যিনি নারী শিক্ষার প্রসারে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৮২ জন ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকে। এই উপস্থাপনযোগ্য উপস্থিতির হার অনেকটাই প্রধান শিক্ষকের প্রতিনিয়ত তদারকি, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ববোধের ফল। ইব্রাহিম আলী মন্ডল ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতন ভালোবাসেন। প্রত্যেকের পড়াশোনা ও উপস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকেন। শুধু পাঠদানে নয়, মানসিকভাবে সাহস জোগাতে তিনি সরাসরি ভূমিকা রাখেন।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এই বিদ্যালয় থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে ১৫ জন উত্তীর্ণ হয়। পাশের হার দাঁড়ায় ৭৫ শতাংশ। এই ফলাফল তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা ও পাঠদানের মান। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট শিক্ষার পরিবর্তে বাসায় পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দেন এবং অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষার প্রতি মনোযোগ বাড়াতে পারিবারিক সহায়তা অপরিহার্য।
এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী দরিদ্র, যার ফলে অনেকে উপবৃত্তি বা প্রাইভেট শিক্ষকের সহায়তা পায় না। ইব্রাহিম আলী মন্ডল তাদের জন্য বিনা বেতনে পড়ার ব্যবস্থা করেছেন। যেসব ছাত্রী উপবৃত্তির বাইরে থাকে, তাদের খুঁজে নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে পড়ালেখা অব্যাহত রাখার পরিবেশ তৈরি করেন। তার এই দৃষ্টান্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় মানবিক দায়িত্ববোধের বাস্তব রূপ।
ইব্রাহিম আলী মন্ডল দীর্ঘদিন যাবত বগুড়ার কাহালু উপজেলার ২ নম্বর কালাই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও তিনি সমাজের মধ্যে একজন শিক্ষানুরাগী, পরিচ্ছন্ন ও নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে তিনি কাহালু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
বিদ্যালয়ের মান উন্নয়ন, ছাত্রীর ঝরে পড়া রোধ, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, মেয়েদের সচেতনতা বৃদ্ধি, ও মা-বাবাদের শিক্ষা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের লক্ষ্যে তিনি ধারাবাহিকভাবে সভা, মতবিনিময় ও ব্যক্তিগত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার অভিভাবকদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ, স্কুল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে প্রতিষ্ঠানে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ইব্রাহিম আলী মন্ডলের স্বপ্ন—এই বিদ্যালয়কে এলাকার একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যেখানে প্রত্যেক মেয়ে বাল্যবিয়ের পরিবর্তে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ পাবে। নারী শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তিনি বিশ্বাসী। তার উদ্যোগে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও ফলাফলে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, যা গোটা এলাকায় প্রশংসিত হয়েছে।
ছাত্রীরা তাকে একজন শিক্ষক নয়, একজন পথপ্রদর্শক এবং নির্ভরতার মানুষ হিসেবে দেখে। একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন সমাজ সচেতন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে ইব্রাহিম আলী মন্ডল আজ এলাকার মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক। নারী শিক্ষার উন্নয়নে তার এই প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে—এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।