প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি
ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বগুড়াবাসী


বগুড়া জেলাজুড়ে আন্তঃজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নামে সড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপসহ পণ্যবাহী যানবাহন থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এসব চাঁদা সাধারণ চালকদের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পণ্য পরিবহনকারী ব্যবসায়ীরাও।
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব পয়েন্টে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী চাঁদা আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এরা নিজেদের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রকাশ্যে টাকা আদায় করছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নানা ধরনের হুমকি-ধামকি, এমনকি গাড়ি আটকে রাখার ঘটনাও ঘটছে বলে জানা যায়।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বনানী শাকপালা, সাবগ্রাম, মানিকচক, মাটিডালি, বাঘোপাড়া, দুপচাঁচিয়া, বার মাইল, চৌমুহনী, সারপুকুর, আদমদিঘি, সান্তাহার, নসরৎপুর, চাপাপুর, তারোলা ও কাহালু—এই সব এলাকাগুলোতে সড়কপথে ঢোকার মুখেই ট্রাকচালকদের এমন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এসব জায়গা এখন যেন চাঁদাবাজদের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
একাধিক ট্রাকচালক অভিযোগ করে বলেন, ‘‘প্রতি ট্রিপে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। না দিলে গাড়ির কাগজ দেখতে চাওয়া হয়, অযথা হয়রানি করা হয়, এমনকি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখে ঘন্টার পর ঘণ্টা।’’ অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নির্ধারিত ইউনিয়নের ফি বা সদস্য চাঁদার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায় একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বগুড়া আন্তঃজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাসেল মণ্ডলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে সংগঠনের অবস্থান জানার সুযোগ হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া রিজিয়নের সুপার সাংবাদিকদের জানান, “আমরা ইতোমধ্যে একাধিক মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। কেউ যদি লিখিতভাবে অভিযোগ করেন, আমরা দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সড়কে জবরদস্তিমূলক চাঁদা আদায় বরদাশত করা হবে না।”
এলাকাবাসী ও পণ্যবাহী যান চালকরা জানান, এই অবৈধ অর্থ আদায়ের কারণে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ভোক্তাপর্যায়েও এর প্রভাব পড়ছে। পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এটি শুধু ট্রান্সপোর্ট খাতে নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে প্রশাসনের উচিত বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
এ বিষয়ে ট্রাকচালক ও মালিক সমিতিগুলোর পক্ষ থেকেও দৃষ্টিপাত করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন একটি স্বচ্ছ ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করা যায়।