অভিমান অভিযোগ


আজকাল স্ত্রী আর প্রেমিকা নিয়ে অনেক পোস্ট দেখছি, স্ত্রীরা বিয়ের পর তাদের কষ্টের কথা, বরের বাইরের সম্পর্কের কথা নিয়ে অনেক অভিমান অভিযোগ এনে বোঝাতে চেয়েছেন….স্ত্রীরা যে মানুষটাকে ভালোবাসে তার ভালো থাকার জন্যই সংসারের জোয়াল টেনে তার নিজের প্রতি আর খেয়াল রাখার সময় থাকেনা। কেন স্বামী এটা বোঝে না। কেন তার এতো ত্যাগ করা সত্ত্বেও স্বামীরা বাইরের অন্য মেয়ে বৌ দের জন্য পাগল হয়ে পরকীয়া শুরু করে!! বিভিন্ন জন নিজের ক্ষোভ বিভিন্ন রকম ভাবে উদাহরণ দিয়ে প্রকাশ করছে। বারবার বোঝাতে চাইছে, স্ত্রী ডাল ভাত, এতেই সুন্দর করে সারাজীবন অতিবাহিত করা যায়, বাইরের পরকীয়া করা মেয়েরা বিরিয়ানি সমান, বিরিয়ানি রোজ রোজ খেলে বদহজম হবে… etc etc…অনেক ভাবে ছেলেদের মানে স্বামীদের স্ত্রীরা ফেবু জুড়ে পোস্ট করে বোঝাতে চেয়েছে, ” আমাদের ভালোবাসো, ওদের নয়। আমরা তোমার জন্য ত্যাগ করছি, সবকিছু, তারপরে ও তুমি কেন মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছ!!” এইসব।
আমার প্রশ্ন কেন নিজেকে ছোট করে এইভাবে রিকোয়েস্ট করছেন?? এইযে এতো বলছেন বোঝাচ্ছেন যাকে, তিনি আদৌ বুঝতে পারছে কি?
আপনারা কি জানেননা, এইসব মানুষদের অপূর্ণ আত্মা কখনো পরিপূর্ণ হবে না।
এরা শুধু নিজের কমতি ঢাকতে বউদের দোষ খুজে বেড়ায়। আর কিছুই না! দেখুন যে বা যাদের বাইরের দিকে তাকানো অভ্যেস তারা কখনো আপনার ত্যাগ দেখবেনা। যতই করুন একটুও সহানুভূতি দেখাবেনা। বিশ্বাস করুন, আপনি এখন জাস্ট টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হয়ে গেছেন, ওরা জানে যতই লাথি ঝ্যাটা, মুখ ঝামটা, এমনকি মারধর… যাই হোক না কেন, আপনি থেকে যাবেন। কাঁদবেন, সারাদিন ছটফট করবেন, সারারাত ঘুমাবেননা, কিন্তু পরেরদিন আবার সকালে উঠে ঠিক রান্না করে মুখের কাছে সবটুকু গুছিয়ে দেবেন। যাতে সে টিপ টপ বাবুটি হয়ে বাইরে অন্য মেয়েদের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে পারে, “জানোতো আমার বৌটা না একদম ভালো নয়। সারাদিন….etc etc…”
আসলে ওরা বুঝে যায়, আপনি করবেনই….
কি!!!!! ত্যাগ, ওই মানুষটার জন্য, ছেলেমেয়েদের জন্য, সংসারের জন্য।
তাই বলি কি, ওনাকে নয়, নিজেকে পরিবর্তন করুন। সবার প্রথমে কান্না কাটি মন খারাপ করা বন্ধ করুন। তারপরে ওনাকে একদম পাত্তা দেওয়া বন্ধ করুন। তারপরে ওনাকে কোনোভাবে সাহায্য করা বন্ধ করুন। লক্ষ্মী বৌ এর মত মুখের ধারে আগ বাড়িয়ে সবকিছু হাতের নাগালের মধ্যে দেওয়া বন্ধ করুন। তার বাবা মাকে দেখা দায়িত্ব আপনাদের দুইজনের। সে না দায় নিলে আপনিও নেবেননা। সংসারের ব্যাপারে নিজে সব কাজ কাঁধে নিয়ে তাকে গা এলিয়ে ভাসতে দেবেননা। সব কাজ দায়িত্ব আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে তিনি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়িয়ে অন্য মেয়েদের দিকে ভালোবেসে ঘরে এসে বৌকে অসহ্য লাগা, এসব আদৌ হতে দেবেননা।
জানি অনেকেই বলবেন “সম্ভব কি!! ”
বিশ্বাস করুন সম্ভব। প্রথম প্রথম নিজেকে পরিবর্তন করতে ভীষণ সমস্যা হয়। কিন্তু একবার মনের জোরে নিজেকে পাল্টে দেখুন অনেকটা কষ্ট গায়েব হয়ে যাবে। নইলে তো কষ্টই পাচ্ছেন, মন মরে গেলে মানুষ কি নিয়ে বাঁচে?? এইভাবে মরে বেঁচে থেকে কি পাচ্ছেন!! কেউ আপনার ত্যাগের দাম দেবেনা। বরং নিজেকে ভালো রাখুন, একটু সুন্দর করে নিজের জন্য সাজুন, নিজেকে ভালোবাসুন, বাইরের মানুষদের সাথে কথা বলুন। প্রথম প্রথম অসুবিধা হবে। কিন্তু পরে ঠিক পারবেন। মনের জোড় রাখুন। নিজেকে ভালো রাখাটা প্রয়োজন আগে।
এর পরে আরেকটা কথা বলবো, কোনো মানুষ কিছুই পারিনা এটা হতে পারেনা। প্রত্যেকের ভিতরে কিছু না কিছু ট্যালেন্ট আছে, সেইটা কাজে লাগান, যেকরেই হোক জীবনে নিজের পায়ে দাঁড়ান, বাইরে বের হন, কাজ করুন, বাইরের বাতাস আপনার গায়েও লাগুক, ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়ুক মাসের শেষে নিজে রোজগার করে। আত্মবিশ্বাস বারুক আপনার। এবারে মন থেকে তৈরি হন পরিস্থিতি সামলাতে। নিজের মনকে শক্ত করুন, রোজ রোজ অপমানে মরে যাওয়ার থেকে প্রতিবাদ করুন। আর ওনাকে বুঝিয়ে দিন উনি দাম না দিলেও দাম দেওয়ার মত অনেক মানুষ আছে এই পৃথিবীতে।
ফেবুতে ইনিয়ে বিনিয়ে পোস্ট করে প্রেমিকার থেকে বৌ ভালো প্রচার করে লাভ নেই, বৌ কত ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটাও দেখিয়ে দিন মাঝে মাঝে। মেয়েরা কিন্তু মেয়েদের শত্রু হয় বেশি, মেয়েরাই মেয়েদের ঘর ভাঙে বেশি।
(এটা শুধু মেয়েদের জন্য বললাম তা নয়, অনেক ছেলেরাও স্ত্রীর পরকীয়ায় মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান। তাদের জন্য ও বলছি, তবে হ্যাঁ যারা ভাবেন সংসার ঘর আর পরকীয়া বারান্দার মিষ্টি হাওয়া, তাদেরকে বলি ওই মিষ্টি হাওয়ার স্বাদ যদি আপনার পার্টনার পেতে চায় মানতে পারবেন তো!! আমার এই পোস্ট হয়তো কিছু বিশেষ জনের খারাপ লাগবে। ইগনোর করবেন খারাপ লাগলে। ওই অসহায় মন থেকে মরে যাওয়া মানুষ গুলোর জন্য পোস্ট করতে ইচ্ছে হলো। ভালো থাকুন সবাই, মেয়েরা মেয়েদের শত্রু নাইবা হলেন। হয়তো তাদের বিবাহিত সম্পর্কটা ঠিক হয়ে যেত যদি আপনি মাঝে এসে নিজের এক্সট্রাঅর্ডিনারি ক্রেডিট না দেখাতেন, অথচ দেখবেন ওনার সাথে ঘর করলে দুইদিন পরে আপনিও কেমন একঘেয়ে হয়ে গেছেন, দূর থেকে সব জিনিস খুব সুন্দর মনে হয়। ভেবে দেখবেন, কারোর দীর্ঘ শ্বাসের কারণ হওয়াটা কিন্তু কোনো ক্রেডিট নয়, এটা খুব খারাপ বলেই জানি, কর্মফল ফেরত আসবেই, তখন সামলাতে পারলেই হলো।