হৃদয় ছোঁয়া উপন্যাসের মতো বাস্তব গল্প
ভালোবাসার ছায়ায় বদর ভাই


ভালোবাসা—এটা শুধু একটি অনুভূতির নাম নয়, কখনো কখনো তা আশ্রয়, নির্ভরতা, এবং একজন মানুষের জীবনে আশীর্বাদের মতো এসে দাঁড়ায়। এমনই এক গল্প সালমান ও রেজভীর। দু’জন মানুষের প্রেম, বৈবাহিক জীবন এবং আশেপাশের মানুষদের নিঃস্বার্থ অবদানের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।
সালমান, একজন সৎ হৃদয়ের মানুষ, যিনি রেজভীকে পেয়ে পেয়েও মনে করেন—”আমি এখনো তার প্রতি সুবিচার করতে পারিনি।” একজন স্বামীর মতো রেজভীর যত্ন নেওয়াই ছিল তার দায়িত্ব, কিন্তু সে দায়বদ্ধতায় এখনও কিছুটা ঘাটতি থেকে গেছে বলে মনে করেন তিনি।
তবুও আশ্চর্যের বিষয়, রেজভীর পরিবার কখনোই তাকে দোষারোপ করেনি। বরং শাশুড়ি মা পিয়ারা বেগম তাকে আপন ছেলের মতো ভালোবেসেছেন, বড় বোন রুপালি আপা তাকে ছোট ভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছেন। এমনকি স্বামী হারানো রুপালি আপার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তিনি বলেন, “তুমি আমার ছোট ভাই, তোমার দিয়ে কাজ করাবো না।” এই আন্তরিকতার বন্ধনই যেন সালমানকে বারবার আবেগে আপ্লুত করে।
কিন্তু এই গল্পের আসল নায়ক হয়ে উঠেছেন এক মহান হৃদয়ের মানুষ — বদর ভাই, সৌদি আরব প্রবাসী, রেজভীর বড় আপা রুপালি আপার দেওর।
বদর ভাই ছিলেন রেজভীর জীবনের ছায়া। সালমান যখন রেজভীর পাশে দাঁড়াতে পারেননি, তখন বদর ভাই সেই শক্তির প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। রেজভী দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে যখন নিঃসঙ্গ ও অসহায়, তখন বদর ভাই তার মাথার উপর ছায়া হয়ে থেকেছেন। তিনি শুধু রেজভী নয়, সালমানকেও পাশে পেয়েছেন ভালোবাসা ও সহানুভূতির ছায়াতলে।
তিনি যেন সেই পিতৃসুলভ অভিভাবক, যিনি সন্তানকে বুকে আগলে রাখেন। তার মহানুভবতা এতটাই প্রগাঢ় যে, শত দূরত্ব সত্ত্বেও সৌদি আরব থেকে নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। এই দাম্পত্য জীবন শুরু হওয়ার পেছনে বদর ভাইয়ের অবদান অপরিসীম।
সালমান বলেন,
“আমি হয়তো একজন ব্যর্থ মানুষ, কিন্তু আমার ভালোবাসা রেজভীর প্রতি চিরন্তন। আজও আমি যাকে বুকে আগলে রেখেছি, সে আমার জীবনে এসেছে অনেক ত্যাগের পর। রেজভীকে পাওয়ার পেছনে যাদের অবদান, তাদের কাছে আমি আজীবন ঋণী।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না এই বিয়েতে। কিন্তু আমার মা, রেজভীকে এতটাই ভালোবেসে ফেলেছিল যে তার জিদেই এই সম্পর্ক গড়েছে। আজ আমি বুঝি, মায়ের সেই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল।”
আজ রেজভী শুধু তার স্ত্রী নন, তার জীবনের সবচেয়ে বড় আশ্রয়। সেই আশ্রয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন বদর ভাই, শাশুড়ি মা, বড় আপা রুপালি, এবং পুরো পরিবার।
শেষ কথা:
এই গল্প কেবল প্রেমের নয় — কৃতজ্ঞতার, আত্মত্যাগের, বন্ধনের এবং পরিবার নামক এক মহা প্রতিষ্ঠানের। বদর ভাইয়ের মতো মানুষরা এই সমাজে বিরল, যাদের নিরব অবদানে তৈরি হয় ভালোবাসা ও সাহচর্যের এক অমলিন ইতিহাস।