একটি জাতির না বলা কান্না


তিনি ছিলেন এক সুশৃঙ্খল সেনানায়ক, এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা, এক দূরদর্শী রাষ্ট্রপতি। যিনি যু*দ্ধ করেছিলেন অ*স্ত্র হাতে, আর শান্তি এনেছিলেন কলম হাতে। যিনি ১৯৭১ সালে রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, আজ ইতিহাসের পাতায় তাঁর নামটি মুছে ফেলার চক্রান্ত চলে!
১৯৮১ সালের ২৯ মে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে নয়, জনগণের নেতা হিসেবে তিনি পা রাখলেন চট্টগ্রামের মাটিতে। তাঁর নিজের গো*য়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই তাঁকে আগেই সতর্ক করেছিল, সেখানে ষ*ড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, নিজের ওপর, নিজের সহযোদ্ধাদের ওপর, নিজের দেশের ওপর।
তিনি প্রটোকল নেননি, কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল, যদি একজন নেতা নিজের জনগণের মধ্যে নিরাপদ না থাকেন, তবে সে নেতৃত্বের কোনো মূল্য নেই। এই বিশ্বাসই তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল সেই অন্ধকার রাতের দিকে, যেখানে অপেক্ষা করছিল বিশ্বাসঘাত*কতা, ষ*ড়যন্ত্র আর মৃত্যু।
জেনারেল আবুল মনজুর, যিনি ছিলেন তাঁরই নিযুক্ত, তাঁরই আস্থাভাজন, তাঁরই কাঁধে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই মনজুরই এক ভয়ঙ্কর চক্রে জড়িয়ে ষ*ড়যন্ত্র করেন। যে চক্রে নেতৃত্ব দিয়েছিল এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী নারী, যার হাতে গ*ণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জিয়া নিজেই। তিনি বোঝেননি, যাদের তিনি জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তারাই একদিন তাঁর জীবন কেড়ে নেবে।
সেই রাতেই বজ্রঝড়ের মধ্যে তিনি শেষবারের মতো ফোন করেন তাঁর স্ত্রী, প্রিয়তমা বেগম খা*লেদা জি*য়াকে, যিনি আজ “গ*ণত*ন্ত্রের মা” হিসেবে পরিচিত। তিনি শুধু বলেছিলেন,
“আল্লাহ চায় তো সকালে চলে আসব।”
কিন্তু ভাগ্য তখনই হয়ত লিখে রেখেছিল তাঁর বিদায়ের প্রতিটি লাইন। সেটিই ছিল তাঁর জীবনের শেষ ফোনকল, শেষ বার্তা, একজন স্বামীর, একজন বাবার, একজন রাষ্ট্রপতির।
রাত আড়াইটায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হা*মলা হয়। রকেট ল*ঞ্চার, এস*এমজি, গ্রে*নেড, সবকিছু দিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্টের ঘুম ভাঙে বিস্ফো*রণের শব্দে। একে একে তাঁর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা প্রাণ দেন। শেষ পর্যন্ত জি*য়াকে লক্ষ্য করে চালানো হয় একের পর এক গু*লি। হ*ত্যাকারী লে. কর্নেল মতিউর রহমান দুটি ম্যাগাজিন খালি করে দেয়, শরীর আর মুখ একেবারে গু*লিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। একজন রাষ্ট্রপতির দেহ নয়, বাংলাদেশের আত্মাকেই যেন গু*লি করে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল।