রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সুলেখা আক্তার শান্তা

মায়ের অদৃশ্য ছায়া

ডেস্ক নিউজ
ডেস্ক নিউজ প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫:১৬ পিএম | 134 বার পড়া হয়েছে
মায়ের অদৃশ্য ছায়া

সুলেখা আক্তার শান্তা: রান্না করছে মায়া। রান্না রেখে অন্যমনস্ক হয়ে এক ধ্যানে ভাবছে, কত মানুষ বাবার বাড়ি যায়, বেড়াতে যায়, নিজের চাওয়া–পাওয়ার কথা বলে বাবা–মাকে। কিন্তু তার তো কপালে বাবার বাড়ি নেই। সেই যে বিয়ের পর একবার বাবার বাড়ি থেকে এসেছে, আর যাওয়া হয়নি কোনোদিন। একটা খোঁজ-খবরও কেউ নেয়নি।
বাবা আছেন তার দ্বিতীয় সংসার নিয়ে। আর মাকে মায়া ছোটবেলায়ই হারিয়েছে। বাবা আর দাদির যন্ত্রণা সইতে না পেরে মা কলসি গলায় দিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। দুনিয়া থেকে সে নিলো বিদায়। দাদি মরার আগে বুঝেছিলেন, সে আসলে মায়ার মাকে খুব কষ্ট দিয়েছেন। কিন্তু তখন বুঝে কি লাভ! মা তো তখন আর এই পৃথিবীতে নেই।
এদিকে চুলায় ভাত উথলে পড়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে মনির এসে চিৎকার করে ওঠে, এই মায়া! এই মায়া! তোমার কী হয়েছে? চুলায় ভাত উতরে পড়ে!
মায়া চেতনায় ফিরে তাড়াতাড়ি চুলার দিকে লক্ষ্য করে।
না… কিছু না।
মনির বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, তোমার রান্নায় এত দেরি হলো মায়া?
মায়া অসহায়ভাবে বলে, তুমি গোসল করে নাও, এর মধ্যে আমার সবকিছু হয়ে যাবে।
মনির আবার বলে, তাড়াতাড়ি করো। আমি খাওয়া–দাওয়া করে দোকানে যাব। তারপর দোকানের ছেলেটাকেও তো পাঠাতে হবে খেতে।
মায়া তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করে মনিরকে খেতে দেয়। মনির গোসল সেরে এসে খেতে বসে। খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। বিশ্রাম শেষে সে দোকানের পথে বের হয়।
দোকানে গিয়ে বসতেই সে দুলালকে বলে, যা, বাসায় গিয়ে খেয়ে আয়। রাস্তায় দেরি করবি না। এদিক–ওদিক তাকাবি না। সোজা যাবি, সোজা আসবি।
দুলাল জানে তার মালিক খুব রাগী। একটুও দেরি হলেই ধমক খেতে হবে। তাই সে দেরি না করে দ্রুত খেয়ে সোজা দোকানে ফিরে আসে।

বৃদ্ধা জাহানারা লাঠি ভর দিয়ে মায়ার বাড়িতে আসে। মায়া তাকে বসতে দেয়, তারপর মমতা ভরে তাঁর মাথায় তেল দেয়, খাবার এগিয়ে দেয়। সঙ্গে কিছু চালও দিতে যায়।
কিন্তু জাহানারা হাত তুলে থামিয়ে দেন, না মা, এগুলো আমি নিতে পারব না। আমি রান্নাবাড়া করতে পারি না, চোখেও আর ঠিকমতো দেখি না। তুমি খাওয়াও, মাথায় তেল দিয়ে দাও—এটাই আমার জন্য অনেক, আর কিছু চাই না।
মায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি তো আপনাকে একবেলা খাওয়াই, কিন্তু অন্যবেলায় কী খান?
জাহানারা হেসে বলে, এই তোমার মতো দুই–একজন দেয় তাই খাই। তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খেলেই চলে। তুমি যে যত্ন করো, তাতেই মনে হয় আমি তোমার কত আপন।
মায়া মৃদু কণ্ঠে বলে, আপনি তো আমার আপনই। আপনার মাঝে আমি আমার মাকে খুঁজে পাই। ছোটবেলায় মা চলে গেছে… আর আপনার মুখটা ঠিক আমার মায়ের মতো।
জাহানারা মায়ার কথা শুনে আবেগে বলেন, যদি আমার চেহারা তোমার মায়ের মতো হয়, তাহলে আমাকে তোমার মায়ের বোন মনে করো। তুমি আমাকে ‘মা’ বলে ডাকো।
মায়ার চোখ ভিজে ওঠে। হ্যাঁ মা, আমি আপনাকে ‘মা’ বলেই ডাকব। এখন আপনি বিশ্রাম নিন।
জাহানারা দাঁড়াতে গেলে মায়া আবার বলে, মা যখন বলেছি আপনাকে, তাহলে মেয়ে থাকতে মা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে কেন? আজ থেকে আপনি আপনার মেয়ের বাড়িতেই থাকবেন।
জাহানারা কেঁপে ওঠেন, না মা, তা কী করে হয়! আমি আসব, তোমাকে দেখে যাব। কিন্তু থাকতে পারব না।
মায়া দৃঢ় গলায় বলে, না মা, আমি আপনার কোনো কথা শুনব না। আমি চাই আপনি আমার কাছেই থাকবেন। মেয়ের আবদারের কথা ফেলে দিতে পারেন না জাহানারা। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি মায়ার বাড়িতেই থেকে যান।

মনির বাসায় এসে বৃদ্ধা জাহানারাকে দেখে। প্রথমে কিছু জিজ্ঞেস করে না। শুধু লক্ষ্য করে মায়া তাঁকে মায়ের মতো সেবা করছে। দিন কয়েক এভাবেই চলে।
একদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে মনির জিজ্ঞেস করে,
মায়া, এ কে? যাকে এত সেবা–যত্ন করছো?
মায়া ধীর গলায় বলে, সে আমার মা।
মনির বিস্মিত! তোমার মা? তোমার মা তো নেই এই পৃথিবীতে!
মায়া শান্তভাবে বলে, হ্যাঁ, রক্তের সম্পর্ক নেই তাঁর সঙ্গে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে আমি আমার মায়ের গন্ধ পাই। তাঁর মুখে আমার মায়ের চেহারার অনেক মিল দেখি। তাই তাঁকে মায়ের স্থান দিয়েছি।
মনির বিরক্ত হয়ে বলে, চেনা–জানা কেউ না, তাঁকে তুমি রাখতে চাও?
মায়া নির্ভার গলায় উত্তর দেয়, মা তো মা। তাঁকে আর কী চিনব!
জাহানারা মায়াকে বললেন, মা, তুমি আমাকে যে সেবা দাও… এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় না তুমি আমার মেয়ে নও।
মায়া মৃদু হেসে বলে, আমি তো আপনাকে মা-ই মানি। ছোটবেলায় মা হারিয়েছি, মায়ের আদর–ভালোবাসা পাইনি। আপনাকে ‘মা’ ডেকে সেই অভাবটা পূরণ করতে চাই।
জাহানারা মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ঠিক আছে মা, তোমার ‘মা’ ডাকার ইচ্ছে তুমি পূরণ করো। আমিও তোমাকে আমার মেয়ে-ই ভাবব।

সেদিন রান্না করতে দেরি হয়ে গেল মায়ার। আর সে ভীষণ ভয় পাচ্ছিল, স্বামী মনির এসে বকা দেবে। দুপুরে খেতে আসতেই মনির দেখে, এখনও রান্না হয়নি!
তাৎক্ষণিক রাগে তার মুখ লাল হয়ে যায়। হ্যাঁ, বাড়িতে কী করিস? সারাদিন থাকিস ওই ভিক্ষুক মহিলাকে নিয়ে বসে! আর আমি, তোর স্বামী, আমার দিকে কোনো খেয়াল নেই!
মায়া কাঁপা গলায় বলে, না, না, তুমি ভুল বুঝো না। তুমি বসো, আমি এখনই খাবার দিচ্ছি।
মনির রাগে ফুঁসতে থাকে।
তোর খাবার, তুই খা! ওই ভিক্ষুক মহিলাকে নিয়ে খা!
মায়া চোখ ভিজে বলে, এভাবে বোলো না। সে আমার মা। আমার মাকে নিয়ে কিছু বোলো না।
মনির চিৎকার করে ওঠে, কোথাকার কোন ভিক্ষুক মহিলা এসে ঘাড়ের ওপর উঠে বসেছে! আর তাঁকে তুমি ‘মা’ বানিয়ে ফেলেছ!
মায়া কাঁদতে থাকে। মনির গম্ভীর স্বরে বলে, এইটা আমার বাড়ি, আমার ঘর! আমি বলব, আর তুই শুনবি! থাকতে চাইলে থাক, চলে গেলে তোর ‘মা’ কে নিয়ে যা! মনির রাগে বলল, ভিক্ষুক মহিলাকে নিয়ে থাক তুই! বলে, বের হতে নেয় মনির।
মায়া স্বামীর কাছে এসে হাত–পায়ে ধরে। রাগ কোরো না। তুমি যেও না। একটু বসো, আমি তোমাকে খাবার দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি রান্না সেরে মায়া মনিরকে খেতে দেয়। মনির খেতে বসে। খেতে খেতে বলে, আর যেন এরকম দেরি না হয়!
মায়া মাথা নিচু করে উত্তর দেয়, আর দেরি হবে না।

আড়াল থেকে জাহানারা সব কথা শুনে ফেলেন। বুকটা যেন হুহু করে ওঠে তাঁর। “না… এখানে থেকে মেয়ের অশান্তি বাড়াতে পারি না, বলে চুপচাপ বেরিয়ে যান। কোনো কথা না বলেই।
মনির যতক্ষণ খায়, ততক্ষণ মায়া পাশে বসে থাকে। সে নিজে খায় না। মায়ের সঙ্গে খাবে বলে। মনির খাওয়া শেষে উঠে গেলে, মায়া মায়ের ঘরে যায়। কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখে, মা নেই। চারদিকে খুঁজে পায় না।
আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে ডাকতে থাকে।
মা! মা!
মনির এসে বিরক্ত গলায় বলে, এত ডাকাডাকি কিসের? দেখো, কোথাও তো আছে।
না… মাকে কোথাও পাচ্ছি না!
মনির মুখে বিরক্তি, না পেলে নাই। কোথাকার কে তাকে বানাইছ মা!
এই কথা বলো না! মায়া কান্নায় ভেঙে পড়ে।
মা… মা… কোথায় গেলে?
ঠিক তখন পাশের একজন এসে বলে, তোমার মাকে দেখলাম, লাঠি ভর দিয়ে ওইদিক দিয়ে চলে যেতে।
মায়া আর এক মুহূর্ত দেরি করে না। দৌড়ে ছুটে যায় সেই দিকে। কিন্তু… তাঁকে আর পাওয়া যায় না।

জাহানারার মনে পড়ে মায়ার কথা। “না, মেয়েটাকে আড়াল থেকে একবার দেখে আসি,” ভেবে লাঠি ভর দিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে মায়ার বাড়ির দিকে রওনা দেন। বাড়ির কাছে এসে তিনি থেমে যান। ভেতরে ঢোকার সাহস হয় না, শুধু আড়াল থেকে চুপিচুপি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মায়াকে খুঁজে দেখেন, কিন্তু চোখে পড়ে না। মনের ভেতর একটা ভয়, যদি মায়ার স্বামী তাঁকে দেখে ফেলে? আবার যদি মেয়েটার সংসারে অশান্তি লাগে? বলেন, “না, মা মরা মেয়েটা শান্তিতে থাকুক। আমার কারণে ওর জীবনে ঝড় বইতে দেব না। ওকে একবার দেখলে মনটা শান্ত হত… কিন্তু নিজের শান্তির জন্য মেয়ের অশান্তি বাড়ানো ঠিক না।” চোখ ভিজে ওঠে জাহানারার। হৃদয়ের সব টান, ব্যথা, আকুলতা একসঙ্গে জমাট বাঁধে।
শেষ পর্যন্ত নিঃশব্দ পায়ে ফিরে যান তিনি। মনের ভেতর মায়ার জন্য দগদগে ভালোবাসা নিয়ে।
মায়া চুপচাপ বসে কাঁদছিল—মায়ের জন্য মনটা ছটফট করছিল। ঠিক তখন পাশের বাড়ির মালিহা এসে বলে, তোমার মাকে দেখলাম!
আমার মা? মায়া অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
হ্যাঁ, তোমার মা তোমার বাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।
মায়া আর এক মুহূর্ত থেমে থাকে না। বাড়ির বাইরে ছুটে গিয়ে চারদিকে খোঁজে। কিন্তু মা নেই। কোথাও নেই।
এসময় পাশের আরও দু’জন বলে, হ্যাঁ, আমরাও দেখেছি। তোমার মাকে এদিকেই দেখছিলাম।
মায়ার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, মা… তুমি এসেছিলে? দেখা না করেই চলে গেলে?
চোখ ভেজা গলায় বলে, মা, সেদিনও তুমি কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে গেলে। আজ এলে, আবার গেলে, দেখা না করে।
আমি তো মায়ের ভালোবাসার কাঙাল…
মা, আমি শুধু তোমার একটু স্নেহ চাই…
মায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। ফিরে এসো মা… ফিরে এসো।

সুলেখা আক্তার শান্তা

সুলেখা আক্তার শান্তা

আলোছায়ার পথ

সুলেখা আক্তার শান্তা প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:২৪ পিএম
আলোছায়ার পথ

এক রোদেলা দুপুর। অফিসে নিজের কাজে মগ্ন ছিল নাফিজা। হঠাৎ চোখ তুলতেই দেখে সহকর্মী রিফাত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নাফিজা মুহূর্তে থমকে যায়। মনে মনে ভাবতে থাকে, এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সে অস্বস্তি ঢাকতে টেবিলের উপর কলম দিয়ে টুং টাং শব্দ করে। রিফাত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে ফেলে। ইশারায় নাফিজা জানতে চায়, কী হয়েছে? রিফাত হেসে বলে, কিছু না। অফিসে তাদের টেবিল পাশাপাশি। কিন্তু তেমন কথা হয় না।
পরদিন টেবিলে বসেই নাফিজা দেখে একটি সতেজ সবুজ পাতা, হালকা কুড়ানো, যেন টেবিলের উপর রেখে যাওয়া এক নিঃশব্দ বার্তা। প্রথমে ভেবেছিল, বাতাসে এসে পড়েছে। কিন্তু পরপর কয়েকদিন একইরকম পাতা দেখে। নাফিজা পিয়ন দুলালকে ডাকে, এই পাতা তুমি রাখো?
দুলাল অবাক, না ম্যাডাম, আমি জানিনা!
তাহলে কে?
দুই হাত প্যান্টের পকেটে, চোখে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রিফাত এগিয়ে এলো নাফিজার দিকে। সে হাসিমুখে বলল, এই পাতা কে রাখে ভাবছো?
হ্যাঁ।
জানতে চাও?
জানতে চাই? কিন্তু বুঝে উঠতে পারছি না কে রাখে।
রিফাত একটু থেমে বলল, অফিস শেষে বের হয়ে বলবো।
সন্ধ্যার আলোয় দুজনে হাঁটছে পাশাপাশি। হঠাৎ রিফাত থেমে বলল, এই পাতাটা যতক্ষণ জীবনের রস ধরে রাখতে পারে, ততক্ষণ সতেজ থাকে। ঠিক সেরকম, যতক্ষণ তুমি আমার দৃষ্টির সীমানায় থাকো, আমি সতেজ থাকি। আর তুমি যখন চোখের আড়ালে যাও… আমি ও পাতার মতো শুকিয়ে যাই। তুমি আড়ালে গেলে ঠিক এই শুকনো পাতার মতো আমি। প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলি।
নাফিজা বিস্ময়ে হয়ে বলে, বা! আমি কারো প্রাণশক্তি? রিফাত হেসে ওঠে, তোমাকে না দেখলে আমি প্রাণহীন হয়ে পড়ি। এটুকুতেই সমস্ত অপ্রকাশিত অনুভূতির ঢেউ আছড়ে পড়ে নাফিজার মনে।
পরদিন অফিসে টেবিলে সে একটি পাতা দেখে, রিফাতের দিকে তাকায়, এবার তার ঠোঁটে হালকা এক হাসি। দুজনে মাঝে মাঝেই চোখে চোখ রাখে, শব্দহীন ভালোবাসার ভাগাভাগি।
সন্ধ্যায় রাস্তার মোড়ে দিয়ে দু’জনে হেঁটে যাচ্ছিলো হঠাৎ রিফাত ধীরে বলে উঠলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাফিজা। এক পলকের নীরবতা। নাফিজার কাছ থেকেও ভালোবাসার সম্মতি। উদার মনে বলে রিফাত, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয়, তা দায়িত্বও বটে।
মাস তিনেক পর একদিন, রিফাত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। নাফিজা একটু চমকে গিয়ে বলে, এখনি? বিয়ে তো করব, তবে পরিবারের সম্মতি ছাড়া নয়। পরিবারকে জানিয়ে। ঠিক আছে পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে হবে। আমি আমার দিকে বলবো তুমি তোমার দিকে বলো। আমার তো শুধু মা আছে, বলে নাফিজা। ঠিক আছে তুমি তাঁকে জানাও।
দুজনই পরিবারের সম্মতি নেয়। নাফিজার মা রেবেকা বলেন, যদি তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও, ঠিক আছে। আশীর্বাদ রইলো।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। নাফিজা সবকিছুর প্রস্তুতি নিজেই নিচ্ছিল। নাফিজা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে সবকিছু তার নিজেরেই করতে হয়। স্বপ্ন তার বাস্তব হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায়। মার্কেট থেকে ফেরার পথে, হঠাৎ একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় নাফিজাকে। রাস্তায় রক্তে ভেসে যায় তার স্বপ্ন। আর পথচারীরা ছুটে নিয়ে যায় নাফিজাকে হাসপাতালে। চিকিৎসা চলে। অনেক চেষ্টা করেও ভালো করা যায় না তার একটা পা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নাফিজা চোখ মেলে দেখে, রিফাত পাশে দাঁড়িয়ে। সে হাত ধরে বলে, তোমার কিছুই হয়নি নাফিজা। তুমি এখনো সেই মানুষ, যাকে দেখলে আমার মন আনন্দে থাকে। পা থাক বা না থাক, তাতে কি আসে যায়?
হাসপাতালের বিছানায় নিস্তব্ধ শুয়ে থাকা মেয়েকে দেখে রেবেকা ভেঙে পড়েন। দু’চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে কণ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসে হৃদয়ের আর্তনাদ। আমার মেয়ের এমন কেন হলো আল্লাহ্? এখন আমি কীভাবে বাঁচব? আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই! রিফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে, চোখে জল, কিন্তু মুখে স্থিরতা। সে ধীরে বলে, ভেঙে পড়বেন না মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হ্যাঁ, তাঁরই উপর তো ভরসা আছে। এই কষ্ট কীভাবে সইব জানি না।
দীর্ঘ হাসপাতালে কাটানো দিন শেষে নাফিজাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু জীবন আর আগের মতো নেই। দেহে এখন এক পায়ের শূন্যতা, আর মনের কোণে বেদনার ঘূর্ণি। পঙ্গুত্বের কারণে চাকরি চলে যায়, সংসারের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। রেবেকা অসহায় হয়ে ভাবেন। মেয়ের কী হবে! কে হবে আশ্রয়? এই বাস্তবতার মুখে কেমন করে চলবে দিন?
নাফিজা–রিফাত যখন একসাথে সুখের স্বপ্ন বুনছিল, তখনই এক কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাদের আকাশ। রিফাত পরিবারের কাছে বলে, আমি নাফিজাকে বিয়ে করতে চাই। বাবা, মোহন খান শব্দের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বললেন, পঙ্গু মেয়েকে ঘরের বউ করা যাবে না। ওর তো চাকরিও নেই এখন। তুমি ওর জীবন থেকে সরে দাঁড়াও, ওর বোঝা আমাদের ঘাড়ে তুলে নিব কেন? রিফাত বলল, বাবা, এমন স্বার্থপর কেন হচ্ছেন? ভালোবাসা তো দয়া নয়। আমি নাফিজাকে ভালোবাসি ওর দেহকে নয় ওর মানসিকতাকে। মোহন খান ধমকের স্বরে বললেন, তর্ক করো না! আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
রিফাত নাফিজার সামনে হাজির হয়। কিন্তু কণ্ঠে স্থিরতা, বলল রিফাত, নাফিজা আমরা বিয়ে করব। নাফিজা একটু থেমে, মুখ ঘুরিয়ে বলে, রিফাত, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও, সেটা করুণা। আমি কারো করুণা চাই না। রিফাত হতভম্ব হয়ে বলল, করুণা? ভালোবাসা করুণার নয় একটি সম্মানের সম্পর্ক। তোমাকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তুমি আজও আমার প্রাণশক্তি, আমার জীবন। নাফিজা গম্ভীর গলায় বলে, তোমার পরিবার যখন আমায় গ্রহণ করছে না, তখন তুমি কীভাবে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখবে? রিফাত নিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমি তোমাকে ছুড়ে ফেলতে ভালোবাসি নেই। তোমাকে ভালোবেসেছি আমার জীবন সাথী হিসেবে পাওয়ার জন্য। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া মানে আমার আত্মাকে অস্বীকার করা। তোমার পাশে থাকব এই দুঃসময়ে এটা দায়িত্ব নয়, এটাই আমার ভালোবাসা। রেবেকা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। মুগ্ধ হয়ে মেয়েকে বলেন, মা, ছেলেটা সত্যিই ভালো। এমন ভালোবাসা জীবনে খুব কম পাওয়া যায়। ওকে গ্রহণ কর মা। মা রেবেকার চোখে জল, কিন্তু তাতে আনন্দের ঝিলিক। ও তোকে ভালোবাসে মা। এমন ছেলে ভাগ্যে কজনের জোটে? তুই ওকে গ্রহণ কর, সে তো তোকে হারাতে চায় না। নাফিজার চোখে তখন ভীষণ প্রশান্তি। রিফাতের ভালোবাসা, তার সংকল্প, তার সমস্ত দুর্বলের ওপর এক অটল আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রিফাতের হাত ধরে বলে, আমি চাই… আমি চাই তোমার সঙ্গে বাকি জীবনটা কাটাতে। নাফিজার মুখে এ কথা শোনার পর রিফাতের যেন এক অচিন্তনীয় উচ্ছ্বাস। সে নিজেই বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে। শাড়ি থেকে অলঙ্কার, নিজে হাতে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজিয়ে তোলে।
বিয়ের দিনে, যখন ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নাফিজা, রিফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে। “মাশা’আল্লাহ! কী অপূর্ব লাগছে তোমায়।” দুজন মধুময় বাসরে রাত কাটায়, নয়নজুড়ে স্নিগ্ধ ভালোবাসা আর হৃদয়ে অটুট প্রতিশ্রুতি।
বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন… মোহন খান সোজা এসে দাঁড়ান রিফাতের সামনে, চোখে স্নিগ্ধতা। আমার বউমাকে নিয়ে যেতে এসেছি, বলেন তিনি নিঃশব্দ গলায়। চলো বাবা, বউমাকে নিয়ে ঘরে। রিফাত এক মুহূর্ত স্তব্ধ, চোখ ঝলমলিয়ে ওঠে আনন্দে। সে ধীরে নাফিজার দিকে এগিয়ে যায়। হাত ধরে বলে, চলো, আমার ঘরের আলো। নাফিজা এক বিন্দু অশ্রু নিয়ে বলে, আজ নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তা কল্পনারও বাইরে। ঘরভর্তি আনন্দ, চোখভর্তি স্বপ্ন, জীবনে যেন বসন্তের পুণর্জন্ম। তাদের সংসার হয়ে ওঠে ভালোবাসার ঠিকানা।
নাফিজার মনে এক গভীর প্রশান্তি। যে জীবন থেমে যেতে পারতো, সেই জীবনই এখন বেঁচে আছে এক অনন্য ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। আমি ভাগ্যবতী, কারণ এমন একজন মানুষকে পেয়েছি, সে আমার পাশে ছায়া মতো দাঁড়িয়ে আছে। সম্পর্ক টিকে সম্মান, ভালোবাসা আর পারস্পরিক আস্থার উপর। সব ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। থাক বিশ্বাস, সম্মান আর ভালোবাসার মলাটে বাঁধা।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:৩৩ পিএম
ভাঙ্গুড়ায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের ভাঙ্গুড়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে উপজেলার বিএনপি কার্যালয়ে এ দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপজেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফুল ইসলাম স্বপনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সভাপতি মোঃ ফারুক খান হিমেল,অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক নুর মোজাহিদ স্বপন,প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গুড়া পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম,আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন পাবনা জেলা পল্লী চিকিৎসক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলহাজ্ব খান,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবু সাইদ,বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ আব্দুল আজিজ,যুগ্ম আহব্বায়ক মোঃ বরাত আলী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল রেজা,আলতাব হোসেন,পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইদুল ইসলাম বুরুজ, পল্লী চিকিৎসক দলের ইশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি জুয়েল সরকার,আটঘরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম,উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহব্বায়ক মোঃ হুমায়ুন কবির প্রমুখ৷

আলোচনা শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও পরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা পল্লী চিকিৎসক এ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাগজ নব-নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে তুলে দিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মো: আব্দুল আজিজ

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:০২ পিএম
কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় যমুনা নদীতে নতুন চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে, যা মনসুরনগর চরের শিক্ষার্থীদেরসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি করছে; বিশেষ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে ও স্কুলে যেতে তাদের ডুবোচরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে, যা একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
মূল সমস্যা: শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা অসংখ্য ডুবোচর যাতায়াতে বাধা দিচ্ছে।
প্রভাব: ছাত্রছাত্রী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উদাহরণ: মনসুরনগর চরের লোকজন কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।