মোঃ শাহজাহান বাশার
দুঃসময়ের কর্মীরাই অগ্রাধিকার পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন তালিকায়
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নভেম্বরের শুরুতেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন টিম মাঠপর্যায়ে জরিপ চালাচ্ছে, নেতাকর্মী ও জনগণের মতামত নিচ্ছে, আর কোন্দলপূর্ণ এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকও করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রার্থী যাচাই-বাছাইয়ে বিএনপি এবার অতীতের তুলনায় বেশি সতর্ক ও বাস্তবভিত্তিক কৌশল নিচ্ছে। প্রার্থী নির্বাচনে প্রধান বিবেচনায় থাকছে—দলের দুঃসময়ে কার কতটা অবদান রয়েছে,কে কতটা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, এলাকাবাসীর কাছে কে বেশি গ্রহণযোগ্য,জনপ্রিয়তা ও তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা দৃঢ়।
সিনিয়র নেতারা প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করছেন। বিএনপি চায়—যাঁকেই প্রার্থী করা হোক না কেন, তাঁকে ঘিরে যেন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে পারে।
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন ও প্রার্থী তালিকা প্রণয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি প্রার্থী নির্বাচনের দায়িত্ব নেন এবং নির্দেশ দেন—“প্রত্যেক আসনে একক প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতে, প্রায় প্রতিটি আসনেই পাঁচ থেকে বারো জন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন, যাঁরা নিজ নিজ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।এই অবস্থায় অক্টোবরের মধ্যেই বা সর্বোচ্চ নভেম্বরের শুরুতে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—যেসব নেতা আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় ছিলেন, দলীয় দুঃসময়ে পাশে ছিলেন, অথবা জনগণের কাছে জনপ্রিয়, তাঁরা প্রার্থী হবেন।তবে এটি প্রাথমিক তালিকা; মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত পরিবর্তন আসতে পারে।বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন—“এলাকায় সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীরাই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন।
আমরা তৃণমূল থেকে শুরু করে জনগণের মধ্যে খোঁজ নিচ্ছি, কে আসলে মানুষের আস্থার জায়গায় আছেন তা যাচাই করা হচ্ছে।”
দলের সিনিয়র নেতারা বলেন, নভেম্বরের শুরুর দিকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলে আগামী দেড় মাসে তাঁদের জনপ্রিয়তা ও অবস্থানও যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে।যদি কোনো প্রার্থী প্রত্যাশিত সাড়া না পান, তাহলে বিএনপি সেই আসনে নতুন বিকল্প প্রার্থীর চিন্তা করতে পারবে।
বৈঠকে বিএনপির জোটসঙ্গী ও সমমনা দলগুলোর আসন বণ্টন বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, জোটের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ২৪৪টি আসনের তালিকা বিএনপির কাছে জমা পড়েছে।
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন—“জোটের যেসব প্রার্থী এলাকায় জনপ্রিয় ও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন, তাঁদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কিন্তু মূল্যায়নের নামে যেন আসন হারাতে না হয়, সেটিও গুরুত্ব পাচ্ছে।”
এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে প্রাথমিক তালিকায় জোটের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করা হবে কিনা। কিছু নেতা প্রস্তাব দিয়েছেন—প্রথমে কেবল বিএনপির প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে পরবর্তীতে জোটের সঙ্গে চূড়ান্ত সমন্বয় করা হবে।
গত রবিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের শতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
তিনি সেখানে নেতাদের উদ্দেশে বলেন—“মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া বড় বিষয় নয়; সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ৩০০ আসনে বিএনপির সব যোগ্য নেতাকে স্থান দেওয়া সম্ভব নয়।তাই যারা মনোনয়ন পাবেন না বা জোটের প্রার্থীদের জন্য আসন ছাড়বেন, তাঁদের সংরক্ষিত নারী আসন, টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীত্ব, বা বিভিন্ন সরকারি পদে মূল্যায়ন করার সুযোগ থাকবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন—“একটি দল যখন আন্দোলনে থাকে, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই প্রার্থী বাছাই হয়ে যায়।আমরা চাই, সবাই ধানের শীষের পক্ষে একসঙ্গে কাজ করুক। বিজয়ী হলে বঞ্চিতদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।”
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে দলীয় ঐক্য ও মাঠ সংগঠন শক্তিশালী করতে চাইছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের শুরুতেই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হলে মাঠে সক্রিয় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্পষ্টতা ও উদ্দীপনা বাড়বে, যা নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।











