শোয়েব হোসেন
ভিন্ন মত ও ইসলামী তরিকত চর্চার কারণে প্রাণনাশের হুমকি: কচুয়ায় দুই পরিবার আতংকগ্রস্ত


চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের মাঝিগাছা গ্রামে ভিন্নধর্মী ইসলামী তরিকত চর্চার কারণে মাসুদ মোল্লা ও আবুল বাশার নামের দুই ব্যক্তির পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামের একদল উগ্রবাদী মৌলবাদী ব্যক্তি তাদের জবাই করে হত্যা এবং বসতবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ মোল্লা ও আবুল বাশার বহুদিন ধরে আধ্যাত্মিক ধারার তরিকত অনুসরণ করে আসছেন। কিন্তু এই ভিন্নমত সহ্য করতে পারছে না গ্রামের একদল মৌলবাদী চরমপন্থী। তারা বলেছে, “এই ভ্রান্ত মতবাদ চলবে না, বন্ধ না করলে জবাই করে ফেলবো।”
মাসুদ মোল্লা বলেন:
আমরা কারও ক্ষতি করিনি। আল্লাহর প্রেমে ইবাদত করি। এখন আমাদের ধর্মচর্চার কারণে জীবনহানির হূমকি আসছে, এটা আমরা কল্পনাও করিনি। প্রাণ নাশের ভয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতের আঁধারে আমি আমার মা বাবা স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে এসেছি।
আবুল বাশারের পরিবার জানিয়েছে, বর্তমানে তারা ঘরছাড়া হওয়ার কথা ভাবছেন, কারণ রাতে ঘুমানোর সময়ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমি আমার স্ত্রী ও দশ বছরের ছেলেকে রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে ঢাকায় এসেছি।
ভূক্তভোগীগণ আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ও প্রধান উপদেষ্টা ডা মুহাম্মদ ইউনূস এর কাছে জান মাল ও বসতবাড়ির নিরাপত্তা দাবি করে।
এ বিষয়ে কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন:
আমরা এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
হিউম্যান এইড এন্ড ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনাল এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, মানবাধিকার সংগঠন ঘটনাটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট হুমকি হিসেবে দেখছে । তারা অবিলম্বে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।
প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে কি কেউ ভিন্নমত নিয়ে বাঁচতে পারবে না?
এই ঘটনা কেবল একটি গ্রামের চিত্র নয়; এটি একটি বৃহৎ প্রশ্ন তুলে ধরেছে — মত প্রকাশ, বিশ্বাস ও ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা কতটা নিরাপদ আজকের বাংলাদেশে?