রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২
রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

মাহমুদুল্লাহর বিদায়ী ম্যাচ জয়ে রাঙাতে চায় বাংলাদেশ

ইউ বি টিভি ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪, ৫:০৬ পিএম | 74 বার পড়া হয়েছে
মাহমুদুল্লাহর বিদায়ী ম্যাচ জয়ে রাঙাতে চায় বাংলাদেশ

আজ ভারতের বিপক্ষে চলমান সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিচ্ছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ ম্যাচে জয় দিয়ে মাহমুদুল্লাহর বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বাংলাদেশ।

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে ইতোমধ্যে সিরিজ হাতছাড়া করেছে টাইগাররা। অন্যদিকে, জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য ভারতের।

হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলেও টি-টোয়েন্টিতে সাফল্যের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে বিন্দুমাত্র লড়াই করতে পারেনি টাইগাররা।

গোয়ালিয়রে প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৭ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ১২৭ রান করে টাইগাররা। জবাবে ৪৯ বল বাকী রেখে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।

দিল্লিতে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং, দু’বিভাগেই ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্তটা কাজে লাগাতে পারেনি তাসকিন-মুস্তাফিজরা। বাংলাদেশ বোলারদের উপর তান্ডব চালিয়ে ৯ উইকেটে ২২১ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত।

বোলারদের পর ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ৯ উইকেটে ১৩৫ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৮৬ রানের হারে এক ম্যাচ বাকী রেখে সিরিজ হার নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।

প্রথম দুই ম্যাচের মত তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচে স্পটলাইটে থাকবেন মাহমুদুল্লাহ।

দিল্লিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে সাংবাদিকদের নিজের অবসরের কথা জানিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেছিলেন, ‘এই সিরিজ শেষে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিবো।’

সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ৩টি ছক্কায় ৩৯ বলে ৪১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। বিদায়ী ম্যাচ খেলতে পারলে ১৪১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে থামবেন তিনি। এখন পর্যন্ত ১৪০ ম্যাচে ৮টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৪৩৬ রান ও ৪০ উইকেট শিকার করেছেন মাহমুদুল্লাহ।

বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ম্যাচের রেকর্ডের মালিক মাহমুদুল্লাহ। ২০০৭ সালে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিলো তার। ওয়ানডেতে আরও বেশি মনোযোগ দিতেই টি-টোয়েন্টি ছাড়ছেন মাহমুদুল্লাহ।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডও মাহমুদুল্লাহর। তার অধীনে ৪৩ ম্যাচে ১৬টিতে জয় ও ২৬টিতে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ।

গোয়ালিয়রে সিরিজের প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে একটি পরিবর্তন করেছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচেও একাদশে পরিবর্তন এনে বেঞ্চের পরীক্ষা করতে চাইবে টাইগাররা। এক্ষেত্রে জাকের আলির জায়গা একাদশে সুযোগ পেতে পারেন মাহেদি হাসান। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৮ ও ১ রান করেন জাকের।

প্রথম দুই ম্যাচে একই একাদশ নিয়ে খেলেছে ভারত। শেষ ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে রবি বিষ্ণোই, তিলক ভার্মা, জিতেশ শর্মা এবং হরষিত রানাদের সুযোগ দিতে পারে ভারত।

টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে রেকর্ড ভালো না বাংলাদেশের। ১৬ ম্যাচের মধ্যে ১৫টিতে হার ও ১টিতে জিতেছে টাইগাররা। ২০১৯ সালের সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জয়টি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য।

বাংলাদেশ দল
নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, জাকের আলি অনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও রাকিবুল হাসান।

ভারত দল
সুর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), অভিষেক শর্মা, সঞ্জু স্যামসন, রিঙ্কু সিং, হার্দিক পান্ডিয়া, রিয়ান পরাগ, নিতিশ কুমার রেড্ডি, শিভম দুবে, ওয়াশিংটন সুন্দর, রবি বিষ্ণোই, ভারুন চক্রবর্তী, জিতেশ শার্মা, আর্শদিপ সিং, হার্শিত রানা ও মায়াঙ্ক যাদব।

ভূঞাপুরে ‘এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

খঃ আউয়াল ভাসানী (টাঙ্গাইল ) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৪:২৭ পিএম
ভূঞাপুরে ‘এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বামনহাটা গ্রামে বামনহাটা প্রাথমিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “এডভোকেট মোম রেস আলী খান মেনি স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট”-এর ফাইনাল খেলা।

খেলার দিনই তেঘরী দারুল আরকাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, সভাপতি ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি; সেলিমুজ্জামান তরফদার সেলু, সাধারণ সম্পাদক ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপি; এবং মোঃ মহিউদ্দিন, প্রধান শিক্ষক ভূঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রমুখ।

খেলা শেষে বিজয়ী ও রানারআপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

অপি মুন্সী : শিবচর ( মাদারীপুর) প্রতিনিধি প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২:৪০ পিএম
ইতালি প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা: দোষীদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

 

মাদারীপুরে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ইতালি প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারের আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার।
রোববার দুপুরে মাদারীপুর শহরের একটি সাংবাদিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সুমাইয়ার মা রুমি বেগম অভিযোগ করে বলেন, বছরখানেক আগে সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের ভরুয়াপাড়া গ্রামের সরোয়ার হাওলাদারের ছেলে ইতালি প্রবাসী জহিরুল হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয় রাজৈর উপজেলার কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের নাসির হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের।
বিয়ের পর স্ত্রীকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলেও জহিরুলের পরিবার এতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ নিয়ে দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় কলহ। একপর্যায়ে বিয়ের সময় দেওয়া স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করে সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামীর পরিবার। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুমাইয়া বাবার বাড়ি ফিরে আসেন।

গত মঙ্গলবার রাতে স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথাকাটাকাটির পর সুমাইয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন সন্ধ্যায় নিহতের মরদেহ বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার গত ৫ নভেম্বর রাজৈর থানায় জহিরুল হাওলাদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে, মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে জহিরুলের বাবা সরোয়ার হাওলাদার ৬ নভেম্বর মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুমাইয়ার বাবাসহ আটজনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

এই অবস্থায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান নিহতের স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বাবা নাসির হাওলাদার, মা রুমি বেগম, চাচা কালাম হাওলাদার ও মামা হিরু তালুকদারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান বলেন, “এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযানও চলছে।

বিএনপিতে অনৈক্য

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক) প্রকাশিত: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ও সমাধান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় রচনা করেছিল ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। স্বাধীনতার পর জাতীয় ঐক্য পুনর্গঠন ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয়ে বিএনপির জন্ম হয়। “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” ছিল দলের মূল আদর্শ, যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, ইসলামি মূল্যবোধ, এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
দলের লক্ষ্য ছিল একটি স্বনির্ভর, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ১৯৯১, ২০০১ ও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বিএনপি প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও, সমালোচনার মুখে পড়ে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি এক জটিল সঙ্কটে আবদ্ধ। একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততার অভাব, অন্যদিকে দলীয় ঐক্যের ঘাটতি ক্রমে রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। দলীয় নেতৃত্বের অনুপস্থিতি বিশেষ করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রবাসবাস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সিদ্ধান্তহীনতা সৃষ্টি করেছে।
এই শূন্যতায় আভ্যন্তরীণ কোন্দল স্পষ্টত দৃশ্যমান। মনোনয়ন বণ্টনে অসন্তোষ, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আস্থাহীনতা এবং দলীয় পদবণ্টনে বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ আজ বিএনপিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যেসব নেতা “তারেক-ঘনিষ্ঠ” বা “বদরুদ্দোজা ঘরানার” ট্যাগে বিভক্ত হচ্ছেন, তারা মাঠে একে অপরের বিপক্ষে কাজ করছেন—যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
কেন্দ্র ও তৃণমূলে সম্পর্কহীনতা এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। অনেক সময় স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহী নন, কারণ তাদের মনে হয়, কেন্দ্র মাঠের বাস্তবতা বোঝে না। দলীয় কাউন্সিল বা নিয়মিত আলোচনা না থাকায় এই দূরত্ব আরও বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের দুর্ভোগ বা আন্দোলনের ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন করেন না।
এমন পরিস্থিতিতে দলের ভিতরে “কাদা ছড়াছড়ি” রীতিমতো জনসমক্ষে চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতাদের পরস্পরের প্রতি তীর্যক মন্তব্য ও দোষারোপ বিএনপির ভাবমূর্তিকে ক্রমশ ক্ষয় করছে। যে ঐক্যের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা এখন ব্যক্তিগত ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
এর প্রভাব পড়ছে সরাসরি আগামী জাতীয় নির্বাচনে। বিএনপি যদি ঐক্যবদ্ধ কৌশল তৈরি না করে, তাহলে মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী একাধিক হওয়া, ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা, ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত এজেন্টের অভাব এবং প্রচারে সমন্বয়হীনতা দলের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। তৃণমূলের হতাশা ও বিভক্তির কারণে ভোটারদের আস্থাও ক্ষুণ্ণ হবে—যা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলকে সুবিধা এনে দেবে।
তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় এখনো আছে, যদি বিএনপি দলীয় আত্মসমালোচনা ও গবেষণাভিত্তিক সংস্কারের পথে হাঁটে। নিচে কয়েকটি গবেষণামূলক পরামর্শ উল্লেখ করা হলো—
১. দলীয় কাঠামোর পুনর্গঠন: কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের মধ্যে স্বচ্ছ যোগাযোগ স্থাপন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
২. মনোনয়ন নীতির সংস্কার: ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, যোগ্যতা ও জনআস্থাভিত্তিক প্রার্থী নির্ধারণের মানদণ্ড প্রবর্তন।
৩. প্রবাসী নেতৃত্বের কার্যকর সম্পৃক্ততা: বিদেশে থাকা নেতৃত্বের অনলাইন কাউন্সিল বা ভার্চুয়াল নীতিনির্ধারণী সভার নিয়মিত আয়োজন।
৪. রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সেল: তরুণ কর্মীদের জন্য রাজনৈতিক শিক্ষাক্রম চালু করা।
৫. দলীয় গণতন্ত্র জোরদার: নিয়মিত অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ও মতবিনিময় সভা আয়োজন।
৬. ডিজিটাল যোগাযোগ কাঠামো: কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক গড়ে দলীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রচার।
৭. নারী ও তরুণ নেতৃত্বের উত্থান: নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে আনতে সংরক্ষিত পদ ও সুযোগ।
৮. গণআন্দোলন পুনর্গঠন: দলীয় কর্মসূচিকে জনগণের মৌলিক সমস্যা—মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, দুর্নীতি—এর সঙ্গে যুক্ত করা।
৯. মিডিয়া ব্যবস্থাপনা: নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় তথ্যভিত্তিক ও গবেষণামূলক প্রতিক্রিয়া টিম গঠন।
১০. ঐক্যের জন্য ‘সংলাপ ফোরাম’: দলের প্রবীণ ও তরুণদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্ম তৈরি।
বিএনপির সামনে এখন সময় অল্প, কিন্তু সুযোগ যথেষ্ট। যদি তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একক লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের আস্থা পুনরায় অর্জনের—তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু তাদের জন্য নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও এক নতুন সূচনা হতে পারে।

এম. এ. কাদের (শিক্ষক ও গবেষক)