মোঃ শাহজাহান বাশার
অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর
সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার ইতিহাসে অন্যায় ও শোষণ এমন এক কালো ছায়া, যা কখনোই সম্পূর্ণ মুছে যায়নি। যুগে যুগে নানা রূপে, নানা মুখোশে ফিরে এসেছে এই শোষণ—কখনো অর্থনৈতিক আধিপত্যে, কখনো রাজনৈতিক নিপীড়নে, আবার কখনো ধর্মের অপব্যাখ্যা বা ক্ষমতার দম্ভে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিটি অন্ধকার যুগেই কিছু নির্ভীক মানুষ তাদের কলম, কণ্ঠ ও কর্মের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন প্রতিবাদের ভাষা। তাদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরই সমাজকে জাগিয়েছে, মানুষকে অধিকার ও মর্যাদার পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়েছে।
আজও আমরা এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি—যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুললে অনেকেই বিপদের আশঙ্কায় নীরব থাকে। প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক বৈষম্য—সব কিছু মিলে সাধারণ মানুষের জীবনে গড়ে তুলেছে এক অদৃশ্য শৃঙ্খল। কিন্তু এই নীরবতার মধ্যেই প্রয়োজন এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর—যে কণ্ঠ অন্যায়ের মুখোশ উন্মোচন করবে, শোষিতের পক্ষে কথা বলবে, আর মানুষের বিবেককে নাড়া দেবে।
একজন সাংবাদিক, একজন লেখক কিংবা একজন সচেতন নাগরিক—যে-ই হোন না কেন, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো মানেই ঝুঁকি নেওয়া। কিন্তু ইতিহাসের প্রতিটি পরিবর্তনের পেছনে এমন মানুষই ছিলেন যারা আপসহীনভাবে সত্য বলার সাহস দেখিয়েছেন। কারণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরবতা মানে অন্যায়ের পক্ষ নেওয়া।
আজ আমাদের সমাজে দরকার এমন কণ্ঠস্বর, যারা দুর্নীতিবাজদের নাম উচ্চারণ করতে পারে নির্ভয়ে, যারা নির্যাতিতের কান্না শুনে কলম ধরতে পারে, যারা জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করবে না। কারণ সত্যের শক্তি যত ক্ষণ দমিয়ে রাখা যায়, ততই তা পরবর্তীতে বিস্ফোরণের মতো ফিরে আসে।
আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই লুকিয়ে আছে প্রতিবাদের সেই আগুন। শুধু প্রয়োজন সাহসের—নিজেকে জাগিয়ে তোলার সাহস, সমাজকে প্রশ্ন করার সাহস। কারণ সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে একবার কণ্ঠ তোলা মানেই একটি পরিবর্তনের সূচনা।
অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হওয়া মানে শুধু প্রতিবাদ করা নয়; বরং মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো, ন্যায়বিচারের দাবিতে অটল থাকা। এই কণ্ঠস্বরই একদিন নির্মাণ করবে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, যেখানে মানুষ হবে মুক্ত, সম্মানিত ও ন্যায়সঙ্গত জীবনের অধিকারী।











