শোয়েব হোসেন
ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমে আওয়ামী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
গাধা চেয়ার পেয়ে গেলে সে নিজেও সমস্যায় পরে, অন্যদেরও সমস্যায় ফেলে–২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে এভাবেই নিজের ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন
ফ্যাসিবাদ
আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক ও অঙ্গ সংগঠনের সক্রিয় কর্মী তাজুল ইসলাম সোহাগ। ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে বর্তমান সরকারকে কটাক্ষ করে এমন পোস্ট দেয়ার পরও তাকে বাংলাদেশ বেতার ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার সুযোগ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) এ এস এম জাহিদ।
বাংলাদেশ বেতারের গুরুত্বপূর্ণ সেকশন ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমের ডিরেক্টর সায়েদ মোস্তফা কামাল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে পারিবারিকভাবে জড়িত থাকার কারণে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও জুলাই যোদ্ধা এবং বর্তমান সরকার বিরোধীদের বেতারে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন নানাভাবে নানা উপায়ে। সায়েদ মোস্তফা কামাল সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া বাজারে তার বাড়ি। পিতা- মোঃ মোখলেসুর রহমান। তার মা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
দেশের বিশিষ্ট আইনজীবী, জুলাই আন্দোলনে রাজপথের অগ্রপথিক জোবায়দুল ইসলাম বুলেট ফ্যাসিবাদের সমর্থক ও দোসর হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বেতারের বেশ কয়েকজন শিল্পী সম্পর্কে বেতার কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও কঠোর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ বেতার। এর নেপথ্যে রয়েছে ডিজি এ এস এম জাহিদ ও সায়েদ মোস্তফা কামালের চরম অনীহা ও উদাসীনতা। বাংলাদেশ বেতারে ঊর্ধ্বতন বেশকিছু অফিসার ফ্যাসিবাদের ঘোর সমর্থক হওয়ায় আওয়ামীপন্থী শিল্পীরা এখনো বেতারে অনুষ্ঠান করছে বহাল তবিয়তে।
অতি মেধাবীদের ভারে দেশ নাকি ভারাক্রান্ত– ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে জুলাই যোদ্ধাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে এমন একটি পোস্ট দিয়েছিলেন বাংলাদেশ বেতার ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমে কর্মরত অনুষ্ঠান উপস্থাপক তাজুল ইসলাম সোহাগ। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত তাজুল ইসলাম সোহাগের বেশকিছু ফেসবুক পোস্ট রয়েছে বর্তমান সরকার এবং জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাজুল ইসলাম সোহাগের এমন আচরণের বিষয়ে বেতার কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, জুলাই যোদ্ধা এমনকি বর্তমান সরকারের কেউই বেতারের অভ্যন্তরে আওয়ামী সিন্ডিকেট সম্পর্কে না জানার কারণে আওয়ামীপন্থী বেতারের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আওয়ামীপন্থী শিল্পীদের পুনর্বাসনে একজোট হয়ে কাজ করছে গোপনে গোপনে।
অথচ ২০২১ সালে বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে বাংলাদেশ বেতারের উপস্থাপক ও সাংবাদিক নিশাত শাহরিয়ারকে চার বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বেতারের সদর দপ্তরসহ সকল আঞ্চলিক কেন্দ্রে নিষিদ্ধ করে রেখেছিল বেতার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসসহ জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে তীব্র সমালোচনা করার পরও বহাল তবিয়তে বাংলাদেশ বেতার ট্রাফিক সম্প্রচার কার্যক্রমে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন তাজুল ইসলাম সোহাগ। সপ্তাহের প্রতি শনিবার দ্বিতীয় পালায় উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ বেতারের আওয়ামীপন্থী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন এই অনুষ্ঠান উপস্থাপক।
বর্তমান সরকার এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আদর্শে বিশ্বাসী মহলের উচিত বাংলাদেশ বেতারের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া এই বিষয়গুলোকে গুরত্বসহকারে দেখা এবং ফ্যাসিবাদ নির্মূলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দেশের সর্বোচ্চ প্রচার মাধ্যমে যদি ফ্যাসিবাদের উপস্থিতি সর্বদা পরিলক্ষিত হয় তাহলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা। এর দায় কোনোভাবেই বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ বেতারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না।











