লেখক: আশিকুর সরকার (রাব্বি)
বৃষ্টির দিনে


অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে ঢেকে গেছে চারিদিক,থমথমে হয়ে উঠেছে আঁকাশ।আর এই বৃষ্টিতেই দির্ঘদিনের অল্প অল্প করে গড়ে উঠা একটা সম্পর্কের যেনো এক নিমিষেই সমাপ্তি হয়েছিল।যেখানে দুজনের মধ্যে ছিল এক আকাশ সমান অভিযোগ।
-নির্জন বয়স ১৮ মাত্র কলেজে সদ্য ভর্তি হয়েছে। সেদিন কলেজ লাইফে তাঁর প্রথম দিন ছিল।তাই সেইদিনের জন্য তাঁর পেপারেশন টা অনেক বেশিই ছিলো। নির্জন কলেজে প্রবেশ করার পর,তাঁর কাছে সবকিছুই নতুন নতুন লাগছিল, প্রথম ক্লাস শেষে,সব নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হওয়া ও কথা বার্তা হওয়ার পর সে কলেজের ফুলের বাগানের দিকে ঘুরতে গেলো,এবং সেখানে হঠাৎ করেই সে দেখতে পেল একটা অপুর্ব মায়াবী চোখের একটা মেয়ে,মেয়েটি বাগান থেকে একটা ফুল নিয়ে তাঁর মাথায় গেঁথে নিচ্ছিল,তখন নির্জন মেয়েটির দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বললো হাই,মেয়েটি আস্তে বললো হ্যালো,তখন নির্জন কাঁপা কাঁপা গলা দিয়ে বললো তোমার নামটা জানতে পারি কি?
তখন মেয়েটি বললো হুম অবশ্যই, আমার নাম রাধিকা। তোমার নাম কি? নির্জন বললো আমার নাম নির্জন,আমি এই কলেজে নতুন,এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি। তখন রাধিকা বলে উঠলো আমিও তো নতুন আচ্ছা আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারি? নির্জন বললো কেনো নয় অবশ্যই তাতে আমি বেশি খুশি হবো। এরপর বেশ কয়েকদিন দুজনের সময় অনেক ভালো কাটছিল এরপর ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে একটা আলাদা অনুভুতি তৈরি হয়। ভাললাগা,ভালবাসা এবং দুজন দু’জনকে অনেক টা ভালোবাসতে শুরু করে এবং এভাবেই কেটে যায় প্রায় ৩ মাস। হঠাৎ একদিন নির্জন বললো রাধিকা চলো আমরা কোথাও ঘুরতে জাই,রাধিকা বলে উঠলো তাহলে তো ভালই হয়। এবং দুজনে একটা পার্কে গেলো এবং অনেক আনন্দ করলো। এভাবে চলতে থাকে তাদের নিত্যদিনের ভালবাসা ও এক অপূর্ব প্রেম কাহিনী।
তাঁরা দুজন দু’জনের হাতে হাত রেখে কথা দেয় যে জিবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে তাঁরা একে অপরের সাথেই থাকবে, এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাঁরা কখনো কাউকে ছেড়ে যাবে না। এইভাবে তাদের অনাগত দিনগুলো খুব মধুময় ভাবেই কাটছিল।একদিন হঠাৎ করেই নির্জন রাধিকার ফোন ব্যাস্ত পেলো এবং মেসেজ দিলেও তাঁর কোনো উত্তর পায়না,এইভাবে প্রায় ৭ দিন অতিবাহিত হলো কিন্তু নির্জন রাধিকাকে কলেজেও পায়না এবং ফোনেও পায়না, নির্জনের মনটা অনেকটা খারাপ হয়ে আছে,৮ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই নির্জনের ফোনে একটা মেসেজ আসে এবং মেসেজটি রাধিকার ছিল। এবং মেসেজে লেখা ছিলো যে নির্জন তুমি আমাদের কলেজের পাশেই যে পার্কটি আছে ওখানে কালকে দুপুরে চলে আসবে। নির্জন বললো আচ্ছা ঠিক আছে,আর তোমার ফোন এতো দিন বন্ধ কেন?আর এতো দিন তোমার কোন খোঁজ খবর নেই কিন্তু এর কারণ কি? এতো কিছু প্রশ্ন করার পরেও রাধিকা কোনো উত্তর দেয়নি।
সেদিন আকাশ টা কেমন জানি মেঘলা ছিল, মনে হয় এই যানি বৃষ্টি নামবে,নির্জন কলেজের পাশেই পার্কে গেলো এবং সেখানে রাধিকাকে অনেক টা চিন্তিত ও হতাশা দেখা যাচ্ছে। নির্জন,রাধিকা তোমাকে এই রকম দেখাচ্ছে কেন? তোমার কি হয়েছে?আর এতো দিন তোমাকে ফোনে অথবা কলেজ পাওয়া যায় নাই কেন? রাধিকা অনেক টা চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মেঘলা আকাশে হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে,এবং দুজনে একটা ছাদনাতলায় গিয়ে দারালো,এবং রাধিকা হঠাৎ বলে উঠল নির্জন আমাদের দুজনের সম্পর্কে আমার বাবা সব জেনে ফেলেছে এবং আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে,সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে,এখন এই পরিস্থিতিতে আমরা কি করবো নির্জন?চলো আমরা পালিয়ে কোথাও চলে গিয়ে সেখানে আমাদের একটা ছোট্ট সংসার তৈরি করি। এই কথা শুনে নির্জন রিতিমত নিরুপায় হয়ে রাধিকাকে বললো, রাধিকা আমার মায়ের ক্যান্সার এবং ডক্টর বলেছেন যেকোনো সময় কিছু একটা হয়ে যেতে পারে এবং তুমি তো জানো রাধিকা যে আমার বাবা এক্সিডেন্ট এ মারা যাওয়ার ৫ বছর হলো।আর এই পরিস্থিতিতে তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।
রাধিকা বললো যে নির্জন তোমাকে যেকোনো একটা বেঁচে নিতে হবে,হয় ফ্যামিলি না হয় আমাকে,এখন তুমি কি করবে বলো,নির্জন অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে গেলো -চারিদিকে যেন বৃষ্টিতে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। রাধিকা অনেক টা চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর চোখে মুখে যেন অনেকটা অভিমান ও অভিযোগের ছাপ ছিল, নির্জন বলে উঠলো,আমার পহ্মে এই মুহূর্তে তোমাকে নিয়ে পালানোটা সম্ভব নয়। এরপর রাধিকা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর অশ্রু ঝরা চোখে বললো,তাহলে ঠিক আছে থাকো তুমি তোমার ফ্যামিলি নিয়ে,তবে নির্জন তুমি কিন্তু আমাকে সারাজীবনের জন্য হারালে। এই কথা বলার পর রাধিকা কিছুক্ষণ কান্না করার পর রাধিকা চলে গেলো। কিন্তু নির্জন কিছু সময় ভাবার পর সেও চলে গেলো। এরপরে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ঘুরতে শুরু করলো,এইভাবেই সমাপ্ত হলো তিল তিল করে গড়ে তোলা একটা সম্পর্ক যার সামনে ছিল শুধুই কষ্ট কান্না আর অনুসচনা।
-আমরা খুব সহজেই একটা মানুষ কে খুব আপন ভেবে নেই, এবং সেখানে থেকেই শুরু হয় ভালোলাগা,ভালবাসা,কিন্তু শেষে নিয়তির নির্মম পরিহাসে আবার সেখান থেকেই অনেকটা কষ্ট পাই। তবে আমরা জদি জানতাম যে একটা সম্পর্কের শেষে থাকবে ব্যাথা, কষ্ট,কান্না আর অনুসচনা, তাহলে হয়তো প্রতিটা সম্পর্ক গড়ার আগে একবার হলেও ভাবতাম। আসলে নিয়তির নির্মম পরিহাস যখন তখন যে কোনোভাবে একটা তিল তিল করে গড়ে উঠা সম্পর্ক এক নিমিষেই সমাপ্তি ঘটাতে পারে। তবে নিয়তির সাথে লরতে হলে,ও পৃথিবীতে বাঁচতে হলে এখানে প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ,এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদের আরো শক্তিশালী করে তুলবে।