দাড়ির আগে প্রেম


সুজন তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। বয়স মাত্র পনেরো, গালে হালকা পাতলা গোঁফের রেখা দেখা যায়—তাও সূর্যের আলোয় উল্টোদিকে তাকালেই। দাড়ি তো এখনও “অ্যাভেইলেবল” না। কিন্তু বুকের ভেতর প্রেমের দহন? পুরাই অপ্রতিরোধ্য!
সাথী — ক্লাসের সেরা ছাত্রী, মেয়েটা যেন হাঁটলে কবিতা পড়ে। চোখে বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, আর ঠোঁটে এমন এক দৃঢ়তা—যা দেখে মনে হয়, দুনিয়ার সব অ্যাসাইনমেন্ট ওর আয়ত্তে। কিন্তু এই দৃঢ়তার আড়ালে একটা নরম কাচের জানালা লুকানো ছিল, যেটা শুধু সুজন দেখত। আর সাথীও দেখত, সুজন তাকিয়ে আছে কিনা—মাঝে মাঝে চুলে হাত দিলেই বুঝে যেত।
একদিন বৃষ্টি পড়ছিল। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, সবাই দৌড়ে বাসায় ফিরছে। সুজন ছাতা আনেনি। আর সাথী? সে তো এমনিতেই বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালোবাসে। হঠাৎ করেই সাথী সুজনকে বলল—
“তোমার দাড়ি উঠেনি এখনও, তাই না?”
সুজন তো থমকে গেল। মনে হলো, দুনিয়ার সবচেয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্ন এটা!
সে কেবল মাথা নেড়ে বলল, “না… এখনও না।”
সাথী হেসে বলল,
“তাতে কী? দাড়ি না উঠলেও মানুষ বড় হয়ে যেতে পারে।”
সে মুহূর্তে সুজনের মনে হলো, কোনো সিনেমার হিরো হয়ে গেছে। হুট করে ঝোপের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা প্রেম-ফুল ফুটে উঠল।
এরপর থেকে তারা একসাথে টিফিন খেত, একসাথে লাইব্রেরিতে পড়ত, আর মাঝে মাঝে একসাথে হাঁটত—যেখানে কেউ কিছু বলত না, তবু মনে হতো পুরো মহাবিশ্ব কথা বলছে।
তবে গল্পটা সরল রেখায় চলেনি। একদিন হঠাৎ সাথীর বাবা বদলি হয়ে যায় শহরের বাইরে। বিদায়ের দিন সাথী একটা চিরকুট দিয়ে যায় সুজনকে—
“যখন তোমার দাড়ি উঠবে, তখন আবার দেখা হবে। কিন্তু তার আগেই যদি মনে করো তুমি বড় হয়ে গেছো, তাহলে চলে এসো একদিন আমাদের পুরোনো লাইব্রেরির সামনে। আমি হয়তো অপেক্ষা করব…”
সুজন আজও ওই লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে—দাড়ি উঠেছে বহু আগেই। কিন্তু সেই মেয়েটা, যে দাড়ি না উঠলেও মানুষকে মানুষ ভাবে—সে কী এখনও বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটে?
শেষে কেবল এটুকু বলা যায়:
দাড়ি উঠা মানেই বড় হওয়া না, আর প্রেম পাওয়া মানেই প্রেম বোঝা না।
কিছু সম্পর্ক থাকে কিশোর বয়সের কবিতা — অসম্পূর্ণ, তবু হৃদয়ছোঁয়া।
চাইলে এটার পার্ট ২ লিখে দিতে পারি—যদি সাথী আবার ফিরে আসে, বা সুজন নতুন কারও মুখোমুখি হয়।