⚫বিমান দুর্ঘটনায় নিহত, আহত ও দগ্ধদের স্মরণে লেখা⚫
আকাশ থেকে ঝরলো আগুন


বিমানবাহিনীর এক প্রশিক্ষণ-বিমান
বিধ্বস্ত হলো শহরের প্রাণকেন্দ্রে।
আকাশে নয়—
ধুলোবালির এই মাটিতে,
নেমে এলো আগুনের বিভীষিকা,
ভেঙে পড়ল জীবনের কাঠামো,
গড়ে উঠল মৃত্যু-নির্মিত এক দৃশ্যপট।
উত্তরার দিয়াবাড়ি—
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে,
যেখানে স্বপ্ন ফুটত কোমল হাতে,
হাসি ঝরতো শিশুর কণ্ঠে,
সেইখানে আজ ছাইয়ের স্তূপ,
জ্বলন্ত ভবন, ছিন্নভিন্ন খাতা,
ভস্মীভূত ব্যাগ আর পুড়ে যাওয়া শৈশব—
সবই রয়ে গেল নিঃশব্দ স্মৃতিচিহ্ন।
শিশুরা পোড়ল দগ্ধ আগুনে,
রক্তে ভেজা মাটি, বই কাঁদে—
ভেসে গেছে অশ্রুতে হাজারো প্রার্থনা।
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় গোটা জাতি—
আবাসিক এলাকায় প্রশিক্ষণের অনুমতি কে দিলো?
পোড়া শরীর নিয়ে কাতর শিশুরা
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে লড়ছে নিঃশব্দে।
এই কষ্ট কি সহ্য করা যায়?
পিতা-মাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন—
সবাই আজ অন্ধকারে, কান্নায় ভেঙে পড়া,
হাসপাতালের আঙিনা ভারী হয়ে উঠেছে
নিস্তব্ধ আর্তনাদে।
কে আনলো আগুনবাহী সেই উড়ন্ত ছায়া?
কার অবহেলায় সাজানো হলো
এই গণমৃত্যুর নির্মম মঞ্চ?
এই কি উন্নয়ন?
নাকি দায়িত্বহীনতার এক নিষ্ঠুর পরিণতি?
চোখের জলে ফুটে ওঠে জ্বলন্ত প্রশ্ন—
এই দায় কে নেবে?
পুড়ে যাওয়া মুখ, নিস্তেজ হাত,
হাসপাতালের বিছানায় আজও লড়ছে
শত শত শিশুর প্রাণ।
নিখোঁজ সন্তানের ছবি হাতে
বিধ্বস্ত বাবা-মায়ের আহাজারি—
জাগিয়ে তুলছে ঘুমন্ত বিবেক,
কাঁপিয়ে দিচ্ছে জাতির হৃদয়।
নিহত: শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও পাইলটসহ ২২ জন।
আহত ও দগ্ধ: ১৭১ জনের বেশি।
কিন্তু শোকের পরিমাপ কি,
কোনো পরিসংখ্যানে মাপা যায় না!
আমরা চাই তদন্ত— আজই, এখনই,
চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার।
না হলে থামবে না কান্না,
আরও শিশুরা হারাবে ভবিষ্যৎ,
আরও স্বপ্ন ভস্ম হবে ভুলের আগুনে।
এই শোক যেন শুধু কান্না না থাকে—
এই শোক হোক জাগরণের আগুন।
আকাশ থেকে যেন আর না ঝরে মৃত্যু,
আর কোনো শিক্ষালয় যেন না হয় শ্মশান।
আবাসিক এলাকার আকাশে
নিষিদ্ধ হোক উড়ন্ত প্রশিক্ষণের আগুন।
আর যেন বাজে না রক্তে রাঙানো
কোনো মৃত্যুর ঘূর্ণিঝড়ের গান।