স্ত্রীর কাছে একজন স্বামীর নিঃশব্দ চাওয়া


স্ত্রীর কাছে একজন স্বামীর নিঃশব্দ চাওয়া:
বিবাহিত জীবনে একজন পুরুষের চাওয়া-পাওয়া খুব জটিল কিছু নয়। অধিকাংশ সময়েই এগুলো মুখে আসে না, বড় কোনো চাহিদার রূপ নেয় না, কিন্তু ভেতরে জমে থাকে গভীরভাবে। পুরুষের ভালোবাসা শব্দে প্রকাশ পায় না, যেমন তার চাওয়াগুলোও আসে নিঃশব্দে—হৃদয়ের ভেতর থেকে, ছোট ছোট মুহূর্তের মাধ্যমে। সমাজ, সংসার, কর্মক্ষেত্র—সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হাঁটা পুরুষটির কাছে স্ত্রীর কাছ থেকে চাওয়াগুলো আসলে খুবই সূক্ষ্ম, কিন্তু অসাধারণভাবে আবেগময়।
সে চায়, দিনের শেষে কেউ তার অপেক্ষায় থাকুক। অফিস থেকে ফিরেই দরজা খুলে যেন একটা চেনা গন্ধে মাখামাখি হয়ে উঠুক চারপাশ—সেই ঘ্রাণ হয়তো রান্নাঘর থেকে আসা ভাতের গন্ধ, বা স্ত্রীর চুলে লেগে থাকা নারকেল তেলের ঘ্রাণ। সে চায়, কেউ এক কাপ চা এগিয়ে দিক, কোনো কথা না বলে পাশে বসে থাকুক, কেবল চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে দিক—“আমি জানি তুমি ক্লান্ত।” পুরুষটি জানে, এই এক কাপ চা-ই সারাদিনের সমস্ত ধকল ভুলিয়ে দিতে পারে।
পুরুষেরা চায় প্রশংসা, যদিও সেটা তারা মুখ ফুটে বলে না। কিন্তু স্ত্রীর মুখে একটি ছোট্ট কথা—“তুমি কত কষ্ট করো আমাদের জন্য”, অথবা “তুমি ছাড়া আমি এত কিছু পারতাম না”—এই একবাক্যই তার সমস্ত আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়। কখনো কখনো স্ত্রী রেগে যায়, অভিমান করে মুখ গোমড়া করে বসে থাকে। কিন্তু সেসব অভিমানেও থাকে এক মিষ্টি প্রেম—একটা মুঠোফোনের বার্তায় লেখা থাকে, “তাড়াতাড়ি বাসায় এসো, রাগ তো চা বানিয়ে ঠান্ডা করে ফেলেছি।” এই অভিমান, এই মিষ্টতা, পুরুষটি আজীবন লালন করে হৃদয়ের গভীরে।
সকালবেলা অফিসে বের হবার সময়ের মুহূর্তটাও তার খুব প্রিয়। স্ত্রীটি এসে শার্টের কলার ঠিক করে দেয়, বোতাম লাগিয়ে দেয় নিঃশব্দে। তার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে যায় স্বামীর গলার নিচে। সদ্যস্নাত চুলের গন্ধে মোহিত হয়ে পড়ে সে। আর তখনই যেন অনুভব করে, এই ছোট্ট মুহূর্তে পৃথিবীর সমস্ত প্রেম তার জীবনে একত্র হয়েছে। এ এক অনুপম ছোঁয়া, যা হাজার শব্দেও বোঝানো সম্ভব নয়।
আরো এক জিনিস পুরুষেরা চায়—ভরসা। এমন একজন মানুষ, যার সামনে নিজের দুর্বলতাগুলো খুলে ধরতে পারে। যে শুনবে, পাশে থাকবে, বিচার করবে না। স্রেফ বলবে—“সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি আছি।” এই “আমি আছি” কথাটা পুরুষের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশ্বাস। কারণ বাইরে সে হয়তো শক্ত, সাহসী, দায়িত্ববান; কিন্তু ভেতরে সে ঠিক একজন মানুষ, যে চায় একটু নির্ভরতা, একটু আশ্রয়।
এসব চাওয়াগুলো কখনো দামি উপহারের মতো দেখায় না, কিন্তু এদের ওজন অনন্ত ভালোবাসার থেকেও বেশি। সংসারে, প্রতিদিনের ছুটে চলায় এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই একজন পুরুষকে টিকিয়ে রাখে, তার সমস্ত ক্লান্তি মুছে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয়—সে একা নয়।
স্ত্রীর স্পর্শ, একটি হাসি, কিছু নিঃশব্দ ভালোবাসা—এইসবই একজন বিবাহিত পুরুষের কাছে প্রকৃত প্রাপ্তি। এবং এসবের মাঝেই সে খুঁজে পায় জীবনের সবচেয়ে গভীর প্রেম।