মায়ের ভূমিকায় এক অনন্য কিংবদন্তি ডলি জহুর


বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের এক অবিস্মরণীয় নাম ডলি জহুর। মায়ের ভূমিকায় তিনি শুধু অভিনয় করেন না, বরং সেই চরিত্রে একেবারে মিশে যান। তাঁর চোখের ভাষা, মুখের অভিব্যক্তি, আর সংলাপের গভীরতায় দর্শক কখনো হাসে, কখনো কাঁদে। যেন পর্দার মা হয়ে তিনি দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেন।
ডলি জহুরের আসল নাম হামিদা বানু। অভিনয়ের অঙ্গনে পা রাখার পর ‘ডলি জহুর’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি একাধারে মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের শক্তিমান শিল্পী। মঞ্চে জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’, মামুনুর রশীদের ‘মানুষ’ — এসব নাটকে অনবদ্য অভিনয় দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
টেলিভিশনের পর্দায় ডলি জহুরের জনপ্রিয়তা পৌঁছায় শীর্ষে, বিশেষত হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের নীলু ভাবির চরিত্রে অভিনয়ের পর। এরপর ‘জননী’ নাটকে শাওনের মায়ের চরিত্রে তিনি যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি নব্বই দশকের ক্রেইজ সালমান শাহ’র ‘নয়ন’ নাটকে তার মায়ের ভূমিকাও দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।
চলচ্চিত্রে ডলি জহুরের বিচরণ আরও বিস্তৃত ও শক্তিশালী। আগুনের পরশমনি, শঙ্খনীল কারাগার, বিক্ষোভ, দেশপ্রেমিক, দেশদ্রোহী, লাভস্টোরি, শেষ সংগ্রাম, স্বপ্নের ঠিকানা, স্বপ্নের নায়ক, প্রিয়জন, আনন্দ অশ্রু, বিচার হবে, প্রেম শক্তি, চাওয়া থেকে পাওয়া, শুধু তুমি, অন্ধ ভালোবাসা— এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, মায়ের চরিত্র হোক বা যে কোনো চরিত্র, তিনি সবসময়ই সেরা।
এই মহান অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল সাংবাদিক এস এম সালমান হৃদয়ের, যার অভিনয় দেখে সায়ন ডলি জহুর প্রশংসা করেছিলেন। একজন নবীন অভিনেতার প্রতিভা দেখে একজন কিংবদন্তি শিল্পীর সরাসরি প্রশংসা নিঃসন্দেহে বড় প্রাপ্তি।
ডলি জহুর শুধুই একজন অভিনেত্রী নন, তিনি বাংলা অভিনয় জগতের এক জীবন্ত ইতিহাস। তাঁর শিল্পীসত্তা, অভিনয়ের মাধুর্য আর মমতায় ভরা প্রতিটি চরিত্র আজও দর্শকের মনে জ্বলজ্বল করে।