গাজী মনি
পুরুষদের সৌন্দর্য


পুরুষদের সৌন্দর্য নিয়ে খুব কম কথা বলা হয়। অথচ, ঠিক আমাদের চারপাশেই কিছু পুরুষ আছেন, যাঁরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নিঃশব্দে ভালোবাসা, দায়িত্ব আর সহানুভূতির পরিচয় দিয়ে যান। তাঁরা হয়তো কোনো দিন কবিতার পঙক্তিতে উঠে আসেন না, গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হন না, অথচ তাঁদের উপস্থিতিই আমাদের প্রতিদিনের জীবনটাকে সুরেলা করে তোলে।
পুরুষ মানেই কেবল রুটিরোজগারের যন্ত্র নয়। সে একান্ত একজন মানুষ—যার নিজের কষ্ট আছে, না-পাওয়া আছে, চোখে জল আছে, ভেতরে গভীর ভালোবাসা আছে। সমাজ তাকে শিখিয়েছে, ‘তুমি ছেলে, তোমার কাঁদা সাজে না’। অথচ তার মনেও তো ব্যথা জমে, তারও তো ভেঙে পড়ার অধিকার থাকা উচিত।
একজন বাবা যখন সন্তানকে নিজের কাঁধে তুলে নেয়, তখন সে শুধু দায়িত্ব পালন করে না, সে ভালোবাসার সীমানা ছুঁয়ে যায়। একজন স্বামী যখন স্ত্রীর ক্লান্ত চোখ দেখে জিজ্ঞাসা করে, “সব ঠিক আছে তো?”, তখন সেই প্রশ্নের ভেতরে থাকে নিঃশব্দ আশ্বাস। যখন একজন ভাই বলে, “তুই আগে খা, আমি পরে খেয়ে নেবো”—সেই মুহূর্তে ধরা পড়ে তার নিঃস্বার্থ হৃদয়। আর একজন প্রেমিক যখন একটুখানি অভিমান ভাঙাতে মনের কোণে সাজিয়ে রাখা শব্দগুলো খুঁজে আনে—সেই সময়েই বোঝা যায়, ভালোবাসা কোনো এক তরফের আবেগ নয়।
যখন সে দোকানে ভিড় দেখে আপনাকে বলে, “তুমি দাঁড়াও, আমি নিয়ে আসছি”—সে তখন কেবল দায়িত্ব নিচ্ছে না, সে ভালোবাসার একটা নিরাপদ ঘেরাও তৈরি করছে। অথবা যখন সে আপনার চোখে জল দেখে বলে ওঠে, “কে কষ্ট দিয়েছে বলো তো, আমি কথা বলি তার সঙ্গে”—তখন বোঝা যায়, শক্তির সংজ্ঞা কেবল কঠোর চেহারায় নয়, নরম চোখের আশ্রয়েও থাকে।
সমাজে নারী-পুরুষের স্বীকৃতি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, অনেক বলা হচ্ছে। তবে পুরুষদের মনের কোণটা যেন কোথাও চাপা পড়ে যাচ্ছে। তারা নিজের অনুভবের কথা সহজে বলে না, কিন্তু প্রতিটি ছোট ছোট কাজে, আচরণে, তারা বলে যায়—তারা পাশে আছে, আগলে রাখে, ভালোবাসে।
পুরুষদের এই নিঃশব্দ সৌন্দর্যকে সম্মান জানানোর সময় এসেছে। তাদের প্রশংসা করুন, ধন্যবাদ দিন, ভালোবাসুন। কারণ তারাও মানুষ। তারা শুধু দায়িত্বের ভার বইতে নয়, ভালোবাসা দিতে ও পেতে পৃথিবীতে এসেছে।