হারিয়ে গিয়েছিলেন সোনু


তিনি মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন, এরপর ১৯৮৫ সালে মিস ইউনিভার্সের ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া অন্য মডেলদের মতো তিনিও নাম লেখান অভিনয়ে। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় ‘খুন ভরি মাঙ্গ’। ছবি সুপারহিট, ফিল্মফেয়ারে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কারও পান। এমন স্বপ্নের শুরুর পরও থমকে যায় তার ক্যারিয়ার! কে এই অভিনেত্রী ? কেনইবা শুরুতেই শেষ হয়ে যায় তার বলিউড ক্যারিয়ার ?
এই মডেল – অভিনেত্রী আর কেউ নন, তিনি দীর্ঘকায় সোনু ওয়ালিয়া। অনেকে মনে করেন বেশি লম্বা হওয়ার কারণেও তার ক্যারিয়ার থমক যায়! ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ ছবির সাফল্যের পরও বলিউডে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি সোনু। ‘খান’দের তুলনায় একটু বেশি লম্বা, তাই নাকি ছবিতে সনুকে নিতে চাইতেন না নির্মাতারা। অথচ তার অভিনয়দক্ষতা, গ্ল্যামার, নাচের তারিফ করেছেন সাধারণ দর্শক থেকে সমালোচকেরা। এক সময় দর্শকদের মনে দাগ কেটে যাওয়া এই অভিনেত্রী আজ প্রায় বিস্মৃত।
‘খুন ভরি মাঙ্গ’ সিনেমায় নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেন সোনু। রেখার প্রতিশোধের আখ্যান কিংবা কবীর বেদির খলচরিত্র নয়, অনেকের কাছেই ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ মানেই সনু ওয়ালিয়ার দুর্দান্ত অভিনয়। নন্দিনীর চরিত্রে তার গ্ল্যামার ও কবীর বেদির সঙ্গে ‘ম্যায় তেরি হুঁ জানম’ গানে অনবদ্য রসায়ন আজও সিনেমাপ্রেমীদের স্মৃতিতে গাঁথা। এই অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কারও জেতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নন্দিনী চরিত্রটি ছিল সময়ের তুলনায় ব্যতিক্রমী। এটি ছিল ধূসর চরিত্র। সে খারাপ ছিল না, শুধু এমন কিছু করেছিল, যা সমাজ গ্রহণ করেনি। কারণ, সে সত্যিই ওই মানুষটিকে ভালোবাসতো। আজকাল এই ধরনের চরিত্র সাধারণ হলেও তখন তা ছিল বিরল।
নন্দিনীর চরিত্রে সুযোগ পাওয়া প্রসঙ্গে সোনু বলেন, আকর্ষণ আর মহাদেব ছবির কাজ চলছিল তখন। রাকেশ রোশন একটু দ্বিধায় ছিলেন, কারণ এর আগে তিনি নতুন কাউকে সুযোগ দেননি। কিন্তু আকর্ষণ এর কিছু রিল দেখানোর পর বুঝলেন আমি অভিনয় করতে পারি। তবু নাচ নিয়ে সন্দেহ ছিল, তখন আমি মহাদেব এর নাচ দেখাই। তখন তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত হন। এভাবেই সুযোগ মেলে।
ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ তার প্রথম ছবি নয়। ১৯৮৬ সালে কেতন আনন্দ পরিচালিত থ্রিলার ‘শর্ত’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। এর আগে ‘আকর্ষণ’ নামে আরেকটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, যা পরে মুক্তি পায়। তবে এই ছবি দুটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পাননি সোনু।
দারুণ শুরু, এরপর ছন্দপতন
পাঞ্জাবি পরিবারে জন্ম সনু’র বাবা সতিন্দর সিং ওয়ালিয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, মা গৃহিণী। ‘সোনু’ ছিল তার শৈশবের ডাকনাম, যা থেকেই চলচ্চিত্রের নাম হয়ে ওঠে। মিস ইন্ডিয়া জয় ছিল বড় সাফল্য। কিন্তু তার পরপরই শুরু হয় ব্যর্থতার ধাক্কা। মনমোহন দেশাইয়ের ‘তুফান’ এ অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে কাজ করলেও, ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এর পাশাপাশি তাকে এক ধরনের নেতিবাচক চরিত্রেই বারবার কাস্ট করা হতে থাকে।
তিনি বলেন, অন্তত ৫০টা ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি; কারণ, সেগুলোতে শুধু খলচরিত্র ছিল। এই ইন্ডাস্ট্রিতে একবার টাইপকাস্ট হয়ে গেলে সেখান থেকে বের হওয়া ভীষণ কঠিন।
বলিউডে সোনু ওয়ালিয়া’র এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার উচ্চতা। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির এই অভিনেত্রী তখনকার তরুণ তিন খান, আমির, সালমান ও শাহরুখ এর চেয়ে লম্বা। ফলে রোমান্টিক নায়িকার চরিত্রে কাস্টিং নিয়ে নির্মাতারা দ্বিধায় পড়েন। অমিতাভ, ধর্মেন্দ্র, বিনোদ খান্নার মতো লম্বা নায়কদের সঙ্গে মানালেও, তখন তারা ক্যারিয়ারের শেষ ধাপে। ফলে নতুন যুগের বলিউডে সোনু’র জায়গাটা ক্রমেই ছোট হয়ে আসে।
টিভি, অতঃপর সরে যাওয়া
সিনেমার কাজ কমে যাওয়ার পর সনু ওয়ালিয়া টেলিভিশনের দিকে ঝোঁকেন। ‘ঘুটন’, ‘যুগ’ এবং বি আর চোপড়ার ‘মহাভারত’ এ দেখা যায় তাকে। পরে বিয়ে করেন যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল ব্যবসায়ী ও প্রযোজক সূর্য প্রতাপ সিংকে। বিয়ের পর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। স্বামীর প্রযোজনায় সোনু অভিনয় করেন ‘কসম’ (২০০১), ‘সূর্যকান্ত’ (২০০৫) ও ‘জয় মা শেরাওয়ালি’ (২০০৮) ছবিতে। শেষ ছবিটিতে তাকে প্রধান চরিত্রে দেখা যায়। কিন্তু ২০০৯ সালে স্বামীর মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। দেশে ফিরে বোন মনু ও ভগ্নিপতি বিনীত শর্মার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সালে আবার চলচ্চিত্রে ফেরেন, তবে এবার পর্দার আড়ালে কীর্তি কুলহারি অভিনীত ‘জোগিয়া রক্স’ ছবির সহপ্রযোজক হিসেবে।সোনু অবশ্য অভিনয়ে ফেরার আশা পুরোপুরি ছাড়েননি। ওটিটি’র এই যুগে নানা ধরনের সিরিজ হচ্ছে, কে জানে সেখানে তার ডাক আসলে আসতেও পারে!