জন্মদিনের শুভেচ্ছা মোহাম্মদ আশরাফুল!


গ্রায়েম স্মিথকে তখন বেশ অসহায়ই লাগছিল। বোলার বদল করেন, ফিল্ডিং পাল্টান। কিন্তু বলের গন্তব্য সেই বাউন্ডারিতেই। আন্দ্রে নেল আছেন, বল করছেন মাখায়া এনটিনি, এরপর চার্লস লাংগেভেল্ড। কিন্তু বাইশ গজে ওইপ্রান্তে ছোটখাটো এক বাংলাদেশী যেন সৃজনশীলতার চূড়ান্ত দেখাবেন বলে পণ করেছেন। কখনো অফসাইডে তুলে মারছেন, পুল শটে বল পাঠিয়ে দিচ্ছেন সীমানায়। একটু সরে আসে দারুণ দক্ষতায় স্কুপ করছেন ইচ্ছেমতন। নিজের দিনে মোহাম্মদ আশরাফুলকে ঠেকাবে সাধ্য কার!
আফসোস, সেই “নিজের দিন” বছরে আসতো দু’বার। কার্ডিফে সেই অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া বধ। নটিংহামে ট্রেমলেটের হ্যাট্ট্রিক বলে বাঁচার পর ৫২ বলে ৯৪। এরপর ক্রিকেট এগিয়েছে, টি-টোয়েন্টির ছোঁয়ায় স্ট্রাইক রেট এখন আকাশছোঁয়া। তবুও ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো বাংলাদেশীর এমন মারকুটে ব্যাটিং কল্পনা করা যায় না। কিংবা চট্টগ্রামে “ওয়ান ম্যান আর্মি” হিসেবে ১৫৮ বলে ১৪০? ইরফান, জহিরদের হুক-পুল শটে নাজেহাল করছিলেন বারবার।
শুধু প্রতিভা দিয়ে কিছু হয় না, আশরাফুল তাঁর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। নিখুঁত টাইমিংয়ে যখন তাঁর ড্রাইভগুলো হতো সীমানাছাড়া – শিল্পীর নিপুণ তুলির ছোঁয়ার কথা মনে পড়তো। আবার পরের বলে এমন বাজে শট খেলে আউট হতেন, পুরো ইনিংসটাকেই মনে হতো কার্টুনের হাস্যকর ক্যারিকেচার। দ্বিচারিতা থাকে সবকিছুতে – তবুও ভালোটা এমন আকাশছোঁয়া, খারাপটা প্রপাত ধরণীতল হলে হতো না।
ছেলেবেলায় আশরাফুল ছিল এক আবেগের নাম। বাংলাদেশের উইকেট পড়তো টপাটপ। এর মাঝে আশরাফুল ছিলেন রোমাঞ্চ। বেশিক্ষণ টিকতেন না হয়তো, কিন্তু ক্রিজের সময়টায় শট খেলে যেতেন। আউট হয়ে আফসোস নিয়ে ফিরতেন প্যাভিলিয়নে, কিন্তু ঐ শট দুটোই মনে থাকতো। স্রষ্টা ঐ প্রতিভার সাথে যদি দু’ফোঁটা টেম্পারমেন্ট দিতেন। কোচিংয়ে কি শেখা যেত কিছু?
আশরাফুল এমনই। নিজের দিনে তাঁকে ছোঁয়া যায় না। বাকি দিনগুলোতে পাই না খুঁজে। কিন্তু লোক আশরাফুলকে দেখার জন্য ঠিকই টিভির সামনে ভিড় জমাতো। হতাশ হবে জেনেও। কিছু ভালোবাসার আসলে নাম থাকে না। ঐ যে আশা। “আশার ফুল” অবশ্য প্রস্ফুটিত হতে পারেনি, কলি হয়েই ঝরে গেছে। তবুও বছরে দু’বার সুবাসের সেই লোভ…
জন্মদিনের শুভেচ্ছা মোহাম্মদ আশরাফুল!