রাজনীতি:
জনগণের জন্য না শুধু ব্যবসা?


বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি যেন ক্রমেই একধরনের পেশা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জনগণের জন্য সেবার ব্রত নিয়ে যে রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠছে—রাজনীতি কি আজ সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণের জন্য, নাকি শুধুই একটি লাভজনক ব্যবসায় রূপ নিয়েছে?
রাজনীতি হচ্ছে একটি রাষ্ট্র বা সমাজ পরিচালনার সর্বোচ্চ মাধ্যম। এর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণের চাহিদা ও অধিকার রক্ষা করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আজকাল রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশ শুধু ক্ষমতার মাধ্যমে আর্থিক ও পারিবারিক স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত।
একসময় রাজনীতিকরা ছিলেন নীতিবান, ত্যাগী, এবং জনসেবায় নিবেদিত। তারা মানুষের দুঃখ-দুর্দশার অংশীদার হতেন। আজ সেই জায়গা দখল করেছে ক্ষমতা ও সম্পদের লালসা। নির্বাচনের সময়ে জনসেবা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর সেই প্রতিশ্রুতি থাকে শুধু কাগজে-কলমে। জনপ্রতিনিধিরা হয়ে ওঠেন “ভিআইপি”, যাদের নাগালের বাইরে থাকে সাধারণ মানুষ।
রাজনীতিকে অনেকেই এখন “ইনভেস্টমেন্ট” হিসেবে দেখে থাকেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করে নির্বাচন করে পরবর্তীতে সেই অর্থ কয়েকগুণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা দেখা যায় বিভিন্ন অনৈতিক মাধ্যম থেকে—দুর্নীতি, কমিশন, অবৈধ নিয়োগ, প্রকল্প চুরি ইত্যাদি তার চরম দৃষ্টান্ত। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গন পরিণত হয়েছে এক প্রকার লাভের খাতায়।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে—জনগণ কোথায় যাবে? যে রাজনীতি তাদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা, সেটাই আজ হয়ে উঠেছে তাদের শোষণের মাধ্যম। এ অবস্থার পরিবর্তন একান্ত প্রয়োজন। রাজনীতিকে আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে সেবার জায়গায়। জনগণকেই সচেতন হতে হবে, যোগ্য ও সৎ নেতৃত্ব বেছে নিতে হবে, এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
রাজনীতি কোনো পণ্যের বাজার নয়; এটি একটি পবিত্র দায়িত্ব। যারা রাজনীতির নামে ব্যবসা করছেন, তারা শুধু জাতির নয়, নিজের বিবেকেরও ক্ষতি করছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে রাজনীতিকে ব্যবসার মঞ্চ নয়, সেবার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই সত্যিকারের গণতন্ত্র এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।