যত্ন যত মধুর হবে সম্পর্ক তত বঁধুর হবে


যে মানুষটি একান্তভাবে আপনার নিজস্ব মানুষ, যে মানুষটির সম্মান ও সুখ-দুঃখ আপনার আচরণ-বিশ্বাসের সাথে জড়িয়ে থাকে, তাকে মন ও মগজ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা উচিত। তার অপছন্দের ইশারা, মান-অভিমানের ভাষা এবং চাওয়া-পাওয়ার গভীরতা না বুঝলে তো সারাজীবন পস্তাতেই হবে। রাজ্যের সকল মানুষের মুখে হাসি ফোটানো আপনার জন্য মুখ্য নয়, যদি প্রিয়জন গোমড়ামুখে দুঃখের নাটাইয়ে ক্ষোভের সুতা কাটে!
সারাজীবন বিশ্বাস অটুট রাখলে, আমানতের খেয়ানত না করলে এবং প্রতিশ্রুতি না ভুললে সে জীবন গোলাপের পাপড়ির মতো সৌন্দর্যে শোভিত হবে। আকাশের তারাদের মতো জ্বলজ্বল করবে। দুই পাঁচজন মানুষ সেই সম্পর্ক দেখে ঈর্ষায় জড়াবে।
জীবনকে সুন্দর করতে বিপুলা অর্থ-বিত্তের প্রাচুর্যে থাকতে হয় না বরং সুন্দর মন-মানসিকতা পুষতে হয়। নিজের পছন্দের বাইরেও যে অন্যের পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে— সে মতের প্রাধান্য দিতে হয়। ভরা জোছনা দেখার ইচ্ছা মরে গেলে, পূর্ণিমায় চাঁদের দিকে তাকাতে কৃপণতা করলে, হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির স্পর্শে অলসতা দেখালে, সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরতে বের না হলে কিংবা দুজনের একান্ত আলাপনে ইচ্ছা-অনিচ্ছা, স্বপ্ন-আশা এবং পছন্দ-অপছন্দের গল্প না জমলে ভালোবাসাবাসির আসর জমে না।
যে জীবন ক্ষণিকের সেখানে অভিমানে দমবন্ধ রাখলে, ক্রোধ-অহংকারে নিজেকে মনের আড়াল করলে সে শোক পরাবাস্তব জগৎ অবধি নাড়া দেয়! জীবন উপভোগ্য করে নানান আয়োজনের সমাহার হোক। বিস্মিত বিছানায় এক বালিশে এক ফালি চাঁদের কথা হোক!
সম্পর্কে প্রশংসা এবং মুগ্ধতার দৃঢ়তা শক্ত গাঁথুনির ভূমিকা নেয়। যে সম্পর্কে সম্মান থাকে না, অভিযোগে পাহাড় উঁচু হয় এবং জিম্মি দশায় স্বার্থ হাসিলের স্বার্থপরতা মাথাচাড়া দেয়, সে সম্পর্ক অবশেষে মরে যায়। সম্পর্কে যত্ন না থাকলে, বিশ্বাস বাঁচিয়ে না রাখলে মনের সাথে মনের যে দূরত্ব হয় তা বঙ্গোপসাগরের প্রশস্ততা দিয়েও মাপা যায় না।
দুজনার মধ্যে অবহেলা এবং অবিশ্বাসের দেয়াল মজবুত হলে দুজন দুই পারের অচেনা মানুষে বদলে যায়। তখন কণ্ঠ কর্কশ শোনায়, আচরণ বাঁকা দেখায় এবং ছায়াতেও বিষ ছড়ায়। দুজনের এক পৃথিবীতে অশুভের বহু পর্যায় এসে ভর করে। তখন ক্ষতির গতি উপকারের রেখা ছাপিয়ে যায়।
যখন সময়কে খুন করতে ইচ্ছা করে, তখন সে সম্পর্কের দাফন হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষটি একদিনে ব্যাপক অপছন্দে নিশ্চয়ই বদলে যায় না। সেখানে বিশ্বাসঘাতকতার বহু চিহ্ন থাকে, অবহেলার পুরু গল্প জমে কিংবা ইচ্ছা মূল্যায়নের মানসিকতায় ব্যাপক বৈপরীত্য আঁকে।
মনের যত্ন ছাড়া, ভরসার বাহু ছাড়া কিংবা বিশ্বাসের গভীরতা ছাড়া প্রিয়জনকে আগলে রাখা যায় না। অসংখ্য বৈপরীত্য সামলে নিয়েও, পছন্দের পার্থক্য সত্ত্বেও মিলেমিশে থাকা যায়। তবে অযত্ন আর অসত্যে মাখামাখিতে সে সম্পর্ক বেশিদিন টেকে না; বরং ছিঁড়ে গেলেই দুজনেই বেঁচে যায়! দুজন দুদিকে হারিয়ে যায়।
যত্ন যত মধুর হবে সম্পর্ক তত বঁধুর হবে! যে মানুষটি সারাজীবন আপনাকে কেন্দ্র করে থাকবে, আপনাকে ভরসা করে বাঁচবে, তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে কেবল একটি সম্পর্কের যবনিকাপাত ঘটে না বরং একটি গোটা মানুষ মানসিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। তখন দুঃস্বপ্ন ডালপালার গল্প হয়ে রটে।
সে মানুষ আর নতুন করে বাঁচার আশা পায় না। সমাজ তাকে অশুভ হাত ও ইশারায় ঝাপটে ধরে। কাউকে দ্বিতীয়বার বিশ্বাসের ভরসা হয় না। কারো সরল বিশ্বাস ভাঙার ক্ষতি তাকে খুন করার ক্ষতির চেয়েও অধিক।
মন যদি মরে যায়, ইচ্ছা যদি পুড়ে যায় কিংবা আশা যদি ফুরিয়ে যায়, তার বাঁচা-মরা সমান কথা! বুকের বাম পাশের ওজন আর কোনোদিন কমে না। বিশ্বাস হারিয়ে বেঁচে থাকে—কোনো এক জিন্দা লাশ!