বাবা


পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরব, সবচেয়ে শক্ত অথচ সবচেয়ে ভাঙা মানুষটির নাম “বাবা”। তিনি কান্না লুকিয়ে রাখেন, দুঃখ গিলে ফেলেন, ক্লান্তি চেপে রাখেন। বাবারা কাঁদেন না—এটা সমাজ শেখায়। কিন্তু প্রতিটি বাবার মনেও লুকানো থাকে এক সমুদ্র গোপন ক*ষ্ট।
একজন বাবা সারাজীবন পরিশ্রম করেন পরিবারের জন্য, বিশেষ করে সন্তানের জন্য। তার নিজের কোনো চাওয়া থাকে না, থাকলেও তা মুখ ফুটে বলেন না। শখের জামা কেনেন না, প্রিয় খাবার খেতে পারেন না, কখনো ক্লান্ত হলেও অফিসে যান সময়মতো—শুধু যেন সন্তানের মুখে হাসি থাকে। বাবার জীবনটা যেন একটা ছায়ার মতো। দিনের আলোয় দেখা যায় না, কিন্তু সূর্য ডোবার পর যখন অন্ধকার নামে, তখন টের পাওয়া যায় সেই ছায়া কতটা আপন ছিল।
একটা সময় আসে, যখন সন্তানেরা বড় হয়, নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন অনেক বাবা চুপচাপ হয়ে যান। তারা ফোন করে না, শুধু অপেক্ষা করেন একটুখানি খবরে। রাতে খাবার টেবিলে বসে বলেন না, “তোমার কথা খুব মনে পড়ে”—শুধু চুপচাপ চেয়ে থাকেন খালি চেয়ারের দিকে।
এই সমাজে মায়ের অনুভূতি নিয়ে অনেক কথা হয়, গল্প হয়, কবিতা লেখা হয়। কিন্তু বাবারা যেন চিরকাল উপেক্ষিত এক নায়ক। অথচ তিনিই তো পরিবার নামক নাট্যমঞ্চের সবচেয়ে বড় চরিত্র।
বাবাদের ক*ষ্ট প্রকাশহীন, ভাষাহীন, কিন্তু তীব্র। তাঁরা বলেন না—“আমার শরীরটা ভালো না”, বলেন—“তুই ভালো থাক, আমি ঠিক আছি।” তাঁরা বলেন না—“আমি আজ খুব একা”, বলেন—“তোর মা আছে তো, আমি ঠিক আছি।” এই “ঠিক আছি” শব্দের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে বাবাদের সব না-বলা কান্না, সব গোপন ক*ষ্ট।
তাদের জন্য বেশি কিছু হয়তো করা যায় না, কিন্তু একটিবার ফোন করে বলা যায়—“বাবা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।” এই ছোট্ট কথাটাই হয়তো হয়ে উঠতে পারে তার সমস্ত ক*ষ্টের বিদায়।