চিকিৎসা প্রতারণা
কালীগঞ্জে ‘হযরত আলী ক্লিনিকে’ ১ লক্ষ টাকা জরিমানা
ফজলুর রহমান নামে এক রুগীর সঙ্গে চিকিৎসা প্রতারণার অভিযোগে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের মালিক কথিত ডাঃ সিরাজুল ইসলামের নিকট থেকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত ৭ টা থেকে সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডলের নেতৃত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ বুলবুল কবিরকে সাথে নিয়ে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভিযান শেষে হাসপাতালের নানান অসংগতি, প্রতারণা ও ভোক্তা অধিকার ২০০৯ এর আইনবলে এ জরিমানার টাকা আদায় করা হয়। এ সময় ক্লিনিক মালিক চিকিৎসা প্রতারণা ও হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স না থাকা সহ বিভিন্ন অসংগতির বিষয়ে ভুল স্বীকার করলে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনুজা মন্ডল ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের জেল ঘোষণা করেন। ঐ সময় ক্লিনিক মালিক নগদ ১ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে এ যাত্রায় রেহাই পায়। গত ১৯ অক্টোবর রবিবার “কালীগঞ্জে হযরত আলী ক্লিনিকের বিরুদ্ধে রোগীর ভুয়া রিপোর্টের অভিযোগ” এবং ২০ অক্টোবর সোমবার “কালিগঞ্জ উপজেলা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো মানহীন ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি” দু,টি শিরোনামের খবর” বিভিন্ন দৈনিক”পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ পায়। উক্ত সংবাদ প্রকাশের ফলে জেলা, উপজেলা প্রশাসনের টনক নড়ে। যার প্রেক্ষিতে গত সোমবার রাত থেকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার প্রথম দিনেই হযরত আলী ক্লিনিক ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর পর হতে ধারাবাহিক অভিযান চলবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল সাংবাদিকদের জানান। রতনপুর ইউনিয়নের গডুই মহল গ্রামের ফজলুর রহমান নামে গরীব অসহায় রোগী পেট ব্যথা নিয়ে ডাঃ হযরত আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবে ভর্তি হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ডাঃ আকছেদুর রহমানকে ডেকে এনে অ্যাপেন্ডিসাইড অপারেশন করায়। অপারেশনের পরেও ঐ রোগী পেট ব্যথায় ছটফট করতে থাকলে তাকে পুনরায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করায়। ঐ আল্ট্রাসোনোগ্রাম রিপোর্টে ডাঃ গোলাম মোস্তফা নামে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের স্বাক্ষর থাকলেও আদতে ওই হাসপাতালে কোন ওই নামে ডাক্তার ছিল না। ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী রোগী বিষয়টি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তবে অভিযান পরিচালনার সময় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ গোলাম মোস্তফা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন এ ধরনের রিপোর্টে তার স্বাক্ষর জাল বলে বলে জানান । এর আগে গত ২৫ নভেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে তারালি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের সঙ্গীতা মন্ডল নামে এক প্রসূতিকে প্রসব বেদনা নিয়ে ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে ডাঃ হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করে। ঐ সময় ডাঃ তানিয়াকে ডেকে নিয়ে এসে অপারেশন করালে ভুল অপারেশন ও রক্তশূন্যতায় অপারেশন টেবিলে ঐ প্রসূতি মারা যায়। খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত জনগণ ক্লিনিক ঘেরাও করে বিক্ষোভ চলাকালীন অবস্থায় জীবন বাঁচাতে ক্লিনিক মালিক কথিত ডাঃ সিরাজুল ইসলাম এবং ডাঃ তানিয়া পিছনের প্রাচীর টপকে পালিয়ে সে যাত্রায় রেহাই পায়। এর পরও থামেনি হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের দৌরাত্ম্য। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদনবিহীন ডাঃ হযরত আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হর হামেশা চলছে এই অপ চিকিৎসার নামে হত্যাযজ্ঞ। শুধু ডাঃ হযরত আলী ক্লিনিক না উপজেলা জুড়ে অনুমোদনবিহীন ১৯ টি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার চললেও টনক নড়েনা স্বাস্থ্য বিভাগের। এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বললে উনি জেলা প্রশাসকের উপর দায় চাপিয়ে নিজে দায়মুক্ত হওয়া জন্য মাসোহারার পাঁয়তারায় ব্যস্ত থাকেন।











