মারা গেছে অসংখ্য ছানা ও নষ্ট হয়েছে শতশত ডিম
ঝালকাঠিতে একটি তালগাছ কর্তনে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস


ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকায় একটি বিশাল তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা শতশত ছানা ও ডিম ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৭ জুন-২০২৫) বিকেলে মোবারেক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির পার্শ্ববর্তী সড়কের পাশে তালগাছটি কাটেন মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। গাছটিই ছিল এলাকাজুড়ে বাবুই পাখিদের নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র ও একমাত্র আশ্রয়স্থল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মোবারক আলী ফকির তার জমির পাশে থাকা তালগাছটি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। তবে তাল গাছের মালিক তিনি না সরকার এ বিষয়ে আমরা জানি না। গাছটিতে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা ছিল। গাছ কাটার সময় বাসা থেকে অনেক ছানা পড়ে মারা যায়, আর ডিমগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। এমন নিষ্ঠুরতায় এলাকাবাসী ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পূর্ব গুয়াটনের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, এই গাছটি শুধু গাছ না, একটা বাস্তুসংস্থানের কেন্দ্র ছিল। যারা এটা কেটেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তবে ঘটনা জানার পরও স্থানীয় প্রশাসন বা বন বিভাগ শুরুতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ঝালকাঠি নেটওয়ার্ক মেম্বার আল-আমিন বাকলাই বলেন, বাবুই পাখি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পৃথিবীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম নিদর্শন। তাদের বাসা তৈরির কারুকাজ ও সামাজিক আচরণ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। এমন নির্মমতা শুধুই পরিবেশের ক্ষতি নয়, বরং মানবিকতার অপমৃত্যু বলেও মন্তব্য করেন তারা। বাবুই পাখি পরিবেশবান্ধব ও সংরক্ষিত প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তাদের আবাস ধ্বংস করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই আইনের আওতায় আনা উচিত।
সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, আমরা আজকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তালগাছটি বন বিভাগের আওতাধীন নয় তবে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা বন বিভাগকে জানিয়েছি। ঘটনাস্থলে বন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে মামলা করা হবে।