সুপারি চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পেটালেন সনাতন ধর্মালম্বি নারায়নকে


লালমনিরহাটে সুপারি চুরির অপরাধে বাড়ি থেকে নারায়ন চন্দ্র (৪৫) নামে সনাতন ধর্মালম্বি এক গরীব অসহায়কে ধরে নিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে জাপা নেতা আলমগীর মন্ডল নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট জজ আদালতে দুইজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নারায়ন চন্দ্র।
আহত নারায়ন চন্দ্র সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মোস্তফি পন্ডিতটারী এলাকার মৃত হরেন চন্দ্রের ছেলে। অভিযুক্ত আলমগীর মন্ডল একই এলাকার মৃত কান্দু মন্ডলের ছেলে এবং প্রভাবশালী একজন জাপা নেতা।
অভিযোগে জানা যায়, প্রভাবশালী আলমগীর মন্ডল উল্লেখিত পন্ডিতটারী এলাকার একজন প্রভাবশালী এবং প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক। তার বাড়ির পাশে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের সাথেই একটি বিশাল চাতাল আছে। চাতালের পাশেই কিছু গরীব ও সনাধন ধর্মালম্বি সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে বসবাস করে আসছে। চাতালের পাশে সেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কিছু জমি আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের সেই জমিটুকু নেয়ার উদ্দেশ্যেই প্রভাবশালী আলমগীর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে তাদের হয়রানি করে আসছে। ঘটনার আগেরদিন (২২ এপ্রিল)নারায়ন চন্দ্র রাত ১০টার দিকে তার এক পাওনাদারকে টাকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে মহাসড়ক দিয়ে পাশের ফকিরের তকেয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। নারায়ন চন্দ্র হাটতে হাটতে চাতালের সামনে আসতেই তাকে ধরে অভিযুক্ত আলমগীর মন্ডল পুলিশের মতো বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে থাকে। পরে বাড়িতে এসে বিষয়টি নারায়ণ তার পরিবারের লোকজন ও আশপাশের সবাইকে অবগত করেন।
এর পরই রাত ১১টার দিকে অভিযুক্ত আলমগীর মন্ডল ও তার ছেলে তনু মন্ডল তার বাড়িতে প্রবেশ করে বাড়ির সবাইকে ধাক্কাধাক্কি করে নারায়নকে তাদের বাড়িতে ধরে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে বেধরক মারপিট করে। পরে এলাকার অন্যান্য সনাতন ধর্মালম্বীরা এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় এবং বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানান।
পরদিন সকালের দিকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অভিযুক্ত আলমগীর মন্ডলের বাড়িতে একটি শালিস বৈঠকের আয়োজন করে। আলমগীর মন্ডল ওই এলাকার একজন প্রভাবশালী হওয়ায় শালিস বৈঠকে পরিকল্পিত ভাবে দোষি সাভ্যস্ত করা হয় এবং তাকে চরথাপ্পর মেরে আলমগীরের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। শালিস শেষ হলে নারায়ণ বাড়িতে ফিরে আসবে এমন সময় আলমগীরের ছেলে তনু মন্ডল হাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসে নারায়নের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে শালিস বৈঠকে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনেই বেধরক মারপিট করে। এ সময় নারায়ন গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ৬/৭ থেকে সুস্থ হয়ার পর সোমবার লালমনিরহাট জজ আদালতে আলমগীর মন্ডল ও তনু মন্ডল নামে দুইজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন নারায়ন।
উল্লেখ্য, এর আগেও আমিনুল নামের একজনকে গরু চুরির অপরাধে ধরে নিয়ে তাকেও বেধরক মারপিট করে থানায় সপর্দ করে ওই প্রভাবশালী আলমগীর মন্ডল। পরে নিজেদের অন্যায় ঢাকার জন্য তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা চুরির মামলা দেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আলমগীর মন্ডল জানান, আমার বাড়ির সুপারি বাগানের সমস্ত সুপারি নারায়নসহ তার লোকজন চুরি করেছে। এছাড়াও তার বাড়ির ৫টি গরু চুরি হয়েছে। এসব চুরির সাথে তারাই জড়িত। তিনিও গরু ও সুপারি চুরি যাওয়ার ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এসব চুরি নারায়নই করেছেন চুরির সময় তাকে দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তার সদুত্তর দিতে পারেন নাই।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) বাদল কুমার জানান, চুরি এবং মারপিটের অভিযোগে উভয়পক্ষই অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।