প্রিন্ট এর তারিখঃ রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

উখিয়ার দু’ কলেজের এইচ.এস.সির ফলাফল বিপর্যয় হওয়ার আসল কারণ কি হতে পারে

কামরুন তানিয়া ( উখিয়া প্রতিনিধি)

 

গতকাল (১৬/১০/২৫ইং) এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলে উখিয়া কলেজ ও উখিয়া মহিলা কলেজে যে বিপর্যয়কর চিত্র দেখা গেছে, তা নিয়ে স্থানীয় সমাজে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। অনেকেই এর জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক এনজিও চাকরিকে দায়ী করছেন।পাশাপাশি বর্মান সময়ে সাড়া জাগানো রাজনৈতিক অঙ্গনকেও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— এসবই কি একমাত্র কারণ?সেই ক্ষেত্রে আমি একজন উখিয়ার বাসিন্দা পাশাপাশি একজন নারী অভিভাবক হয়ে আমার
ব্যক্তিগত মতামত হলো— না,এসবই মূল কারণ নয় শুধু এর চেয়ে আরও অনেক বেশি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত যা
বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইচ.এস.সি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ খুবই সীমিত। বরং দেখা যাচ্ছে, উখিয়া উপজেলার অনার্স, মাস্টার্স এমনকি বিভিন্ন টেকনিকেল পার্সন ও অসংখ্য তরুণ-তরুণী এখনো বেকার অবস্থায় রয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এইচ.এস.সি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের চাকরির সংখ্যা যে অত্যন্ত নগণ্য, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
কাজেই এসব দিক বিবেচনা করে
দেখা যায় যেখানে ২০২৫ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কতজন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক এনজিওতে কর্মরত ছিলেন?

তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে

ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে একাধিক সামাজিক, পারিপার্শিক, প্রযুক্তিগত, শিক্ষাগত কারণ রয়েছে।যেগুলো আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিৎ বলে মনে করেন সচেতন মহল।

১:- শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি।
বিশেষ করে টিকটক, ফেসবুকের মধ্যে ডুবে সময় কাটানো, চায়ের দোকানে আড্ডা, অনলাইন গেমিংয়ে অযথা সময় নষ্ট করে পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাওয়া অন্যতম কারণ।

২:- অভিভাবকদের না মানা,শ্রদ্ধা ভক্তি কমে যাওয়া। অভিভাবকদের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব।
অনেক অভিভাবক সন্তানদের পড়ালেখার অগ্রগতি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেন না।ছেলে মেয়ের খায়েস পুরণে তৎপরতা, কিসের জন্য তাদের এই আবদার তা তদারকি না করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পাঠদানে যোগদান করছে কিনা তা তদারকি করা।

৩:- একাডেমিক পরিবেশ ও সুপারভিশনের দুর্বলতা
বেশ কিছু কলেজে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হয় না, শিক্ষক উপস্থিতিও অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মিত। শিক্ষকরা শিক্ষতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে সংযুক্ত থাকায় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের হক আদায়ে বিরত থাকাটাও অন্যতম কারণ।

৪:- বিগত আমলে যে অটো পাশ দেওয়া হয়েছিলো সেই মনোভাব পোষণ করে পড়াশোনা থেকে বিরত থাকাটাও অন্যতম কারণ।

৫:- দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের ঘাটতি।তৎকালীন সময়ের শিক্ষকরা এতোটা আপডেট না হওয়াটাও একটা বিশেষ কারণ।

৬:- শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা
শিক্ষার চেয়ে মিছিল-মিটিং ও সংগঠনকেন্দ্রিক ব্যস্ততা। রাজনৈতিক দলকে ইসু করে পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করাটাও অজুহান।

৭:-মাদকাসক্ত, পরকীয়া —–বর্তমান সময়ে পারিবারিক ভাবে, একক ভাবে নেশায় আসক্ততাও এর অন্যতম কারণ।পাশাপাশি পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে থাকাটাও একটা কারণ।

৮:- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরী আছে, তবে এটার উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান চর্চার পরিবর্তে বাইরে সময় নষ্ট করছে। পার্শ্ববর্তী দোকানে গল্প গুজব করে সময় কাটাচ্ছে এবং এতে নৈতিক অবক্ষয় ও ঘটছে।

৯:- অল্প শিক্ষায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীতে চাকরি পাওয়ার আসক্তিতে পড়াশোনায় অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রী।

১০:-পিতা মাতার প্রতি অবাধ্যতা এবং উচ্চ বিলাসীতা অল্প বিদ্যায়।

১১:- ছাত্র রাজনীতির এবং ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতে পরীক্ষায় পাশ করার করার মন মানসিকতা তৈরিতেও প্রভাব বিস্তার করে।

১২:– ছাত্র রাজনীতি—পড়াশোনার ক্ষতির ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ।

১৩:- পণ্য গ্রাফিক্স — অল্প বয়সে হাতে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিভিন্ন পণ্য গ্রাফিক্সে বিশেষ করে প্রেমরিলেটেড পণ্য গ্রাফিক্স, সেক্সসুয়েল রোমান্টিক বিভিন্ন সিনেমা,গান ইত্যাদিতে সময় কাটানোটাও অন্যতম কারণ।

১৪:- টিকটক এটাও অন্যতম কারণ।

উপরোক্ত চিত্র পরিদর্শনের

আলোকে সমাধান কোথায় বা কেমনে হবে এর উত্তরণ?

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল এতোটা বিপর্যয় হওয়ার কারণ তরান্বিত করতে গেলে দেখা যায় যে,ফলাফল বিপর্যয়ের দায় একক কোনো কারণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সমাধান নয়। আমাদের প্রয়োজন সমন্বিত বিশ্লেষণ ও উদ্যোগ দরকার।
অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসন এবং সমাজের সচেতন নাগরিক— সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে শিক্ষার পরিবেশ পুনর্গঠনের জন্য।অভিভাবকদের আরও বেশি নজরদারি হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বর্তমান প্রযুক্তির ব্যবহার বহুবিধ ভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।বয়সে বড় ছোটদের মধ্যে শ্রদ্ধা, সম্মান, স্নেহময় অবস্থা বেদে আচরণবিধি, শাসন ব্যবস্থা বলবৎ রাখতে হবে। তবেই আগামী প্রজন্ম আবারও ভালো ফলাফল দিক দিয়ে উখিয়ার শিক্ষার গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবে বলে আমার ব্যক্তিগত মতামত।

প্রতিষ্ঠাতা, ক্যাপশন নিউজ এবং ভিডিও এডিটরঃ মো: রাজিবুল করিম রোমিও, এম, এস, এস (সমাজ কর্ম-রাজশাহী), প্রধান উপদেষ্টাঃ মো: সাদেকুল ইসলাম (কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংগঠক), প্রকাশকঃ কামরুন নেছা তানিয়া, সম্পাদকঃ রুবিনা শেখ, নির্বাহী সম্পাদকঃ অঞ্জনা চৌধুরী

প্রিন্ট করুন