
কুকুর যে মানুষের কতটা প্রভুভক্ত আর আপন! হাজার বছর ধরে সে নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে যাচ্ছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জফির সেতু স্যারের এই অভিজ্ঞতাটি পড়লে সেটা অনুধাবন করতে পারবেন। নিজের পরিবার বা মুনিবকে বাঁচানোর জন্য সাপের সাথে যুদ্ধ করে প্রাণটাই দিয়ে দিলো কুকুরটি।
নিশ্চয় এই গ্রুপে অনেকের এরকম অনেক অভিজ্ঞতা ও গল্প আছে।
তিনি তিনটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন:
কুকুর অকৃতজ্ঞ নয়; প্রয়োজনে প্রাণ বিসর্জন দেয়
আমাদের পরিবারের জন্য আজ শোকের একটা দিন। আমাদের দুই কুকুরের একটি ‘লিটন’, সাপের সঙ্গে লড়াই করে নিজের জীবন দান করল। আব্বা-আম্মা ও আমার ভ্রাতৃবধূর কান্না এখনো থামছে না। শিমুল ও আমার মনও ভীষণ ভারাক্রান্ত।
ঘটনা এই : দুপুরে ভাতৃবধূ সাজনা আঙিনার পাশের বাগান থেকে আঙিনায় উঠে এলে হঠাৎ দেখে চোখের সামনে বিশাল গোখরাটি ফনা তুলে এগোচ্ছে। দৃশ্যটা দেখে সে শ্বশুরের উদ্দেশ্যে ‘আব্বা’ শব্দে চিৎকার করে পাথর হয়ে যায়। সেই চিৎকারে লিটন দৌড়ে এসে গোখরাকে দেখতে পায় এবং তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।
গোখরাকে লিটন যত আঘাত করে গোখরা তত সাজনার দিকে এগোয়। কিন্তু লিটন মরিয়া হয়ে নখে-দাঁতে তীব্রভাবে আঘাত করতে থাকে। গোখরাও লিটনকে বাবরবার ছোবল মারে। একসময় সাপটি ধরাশায়ী হয়, নেতিয়ে পড়ে। তারপর সাপটিকে রেখে লিটন ঘরের পেছনের দিকে চলে যায়। এর মিনিটকয়েক বাদে সাজনা লিটনকে নাম ধরে ডাকে। কিন্তু সাড়া না পেয়ে ঘরের পেছনের দিকে সন্ধান করে। দেখে লিটন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। লিটন আর নেই!
লিটন ও তার ভাইকে আমরা ভালোবাসি। কারণ এরা আমাদের পরিবারের সদস্য হয়েই আছে দীর্ঘদিন ধরে। সারাক্ষণ ওরা পরিবারের কারো না কারো সঙ্গেই কাটায়। আশেপাশে থাকে। দিনের বেলা আঙিনায়, ঘরের কলাপসেবল গেটের কাছে শুয়ে-খেলে কাটায়। রাত হলে বাড়ি পাহারা দেয়। বাড়িতে কেউ পা রাখলে ওরা জানান দেয়। এদের জন্য বাড়িতে চোর বাটপার উঠতে পারে না।
আমি ওদের ওপর খুব ভরসা করি। কারণ নানা বিপদে ওরা আমাদের সাথে থাকে। বাইশ সালের বন্যায় সব ভেসে গেলেও ওদের আমরা ভেসে যেতে দিইনি। বাড়ির ছাদে আলাদা জায়গা করে দিয়েছিলাম। বাড়ির সবাই যা খেত ওদেরও খাদ্য ছিল তা।
এমনিতে ওদের যত্নের অভাব হয়না। আমার বোনেরা বাড়িতে বেড়াতে গেলে ওদের আলাদা খাতির করে। আত্মীয়স্বজনকেও চেনে ওরা। ওরাই স্বাগত জানায়, বিদায় দেয়।