
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি কার্যত নতুন একটি যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে পুরনো পদ্ধতি আর কার্যকর হচ্ছে না। তিনি বলেন, “রাজনীতির সব হিসাবগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আগে আমরা ভোটকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার রাজনৈতিক শক্তি এবং আপাত জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে বোঝার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখন সেই নিয়ম আর প্রযোজ্য নয়।”
রনি উল্লেখ করেন, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে, সেখানে গুণ্ডামি, চাঁদাবাজি বা পেশিশক্তি ব্যবহার করে ভোট কেন্দ্রে ভোটার আনা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই করা—এগুলো আর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “এই যুগে প্রযুক্তি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। তাই পুরনো ধাঁচে ভোট পাওয়া আর সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে দু’টি সংগঠন প্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে। এগুলো হলো—প্রকাশ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং অপ্রকাশ্যে হিজবুত তাহরীর, যারা আধুনিক প্রচার ও প্রোপাগান্ডায় সক্রিয়।
রনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমি যে বিল্ডিংয়ে থাকি, তার একজন বাসিন্দা আজীবন বিএনপি সমর্থক ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তার আচরণ ও কথাবার্তা যেন জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করছে। একইভাবে, আমার নির্বাচনী এলাকার একজন কট্টর আওয়ামী লীগ যুবকও হঠাৎ করে জামায়াতি দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তিত হয়েছে। এটি প্রমাণ করছে যে মানুষের মনোজগতে রাজনৈতিক প্রভাব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “চরমোনাই পীর ও জামায়াতের মধ্যে পূর্বে নীতিগত দ্বন্দ্ব ছিল, কিন্তু এখন তারা একত্রিত হয়েছে। ফলে সবার ভাষা, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনেও পেশিশক্তি, গুণ্ডামি বা চাঁদাবাজি কাজে আসবে না। মানুষ সচেতন ও সাহসী হয়ে উঠেছে। ফলে আমাদের দেশে ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি হুমকির মুখে পড়েছে।”
রনি’র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বর্তমান প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং প্রযুক্তি-সচেতনতা দেশের রাজনীতিকে নতুনভাবে গড়ে তুলছে, যেখানে পুরনো প্রভাব ও ক্ষমতার দাপট আর কার্যকর হচ্ছে না।