
বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব শুধুমাত্র নৈতিক বা সামাজিক নয়, এটি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশও বটে। বাবা-মা আমাদের জন্য তাদের পুরো জীবন উৎসর্গ করেন, তাই তাদের শেষ বয়সে আমরা যদি তাদের পাশে না থাকি, তাহলে সেটি শুধু অবহেলা নয়, বরং মানবতার বিরুদ্ধেও যায়।
বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব:
১. ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা – তাদের প্রতি ধৈর্যশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। কখনো তাদের কথায় বিরক্ত না হয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত।
2. মানসিক ও শারীরিক সাপোর্ট প্রদান করা – তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও মানসিক চাহিদাগুলো বোঝা এবং সেগুলো যত্ন নেওয়া।
3. অর্থনৈতিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা – যদি তারা আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হন, তবে তাদের চাহিদা পূরণ করা সন্তানের দায়িত্ব।
4. সঙ্গ দেওয়া ও সময় কাটানো – বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়েরা একাকীত্ব অনুভব করেন, তাই তাদের সাথে সময় কাটানো, গল্প করা, হাসিখুশি পরিবেশ তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
5. উপযুক্ত যত্নের ব্যবস্থা করা – যদি বাবা-মা অসুস্থ হন, তবে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে তাদের সাথে থেকেই যত্ন নেওয়া।
বৃদ্ধাশ্রম শব্দটি চিরতরে দূর করার উপায়:
1. সচেতনতা বৃদ্ধি করা – পরিবারে ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের শেখাতে হবে যে বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন করাই প্রকৃত মানবতা।
2. জয়েন্ট ফ্যামিলি সিস্টেম পুনরায় প্রচলন করা – একসঙ্গে বসবাসের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা, যাতে পরিবারের বড়রা কখনো একাকীত্ব বোধ না করেন।
3. বৃদ্ধদের জন্য পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করা – বাবা-মায়ের সাথে সম্মানজনক আচরণ করা, যেন তারা বোঝেন যে তাদের পরিবারেই যত্ন নেওয়া হবে।
4. আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা – সরকার যদি সন্তানদের বাধ্য করে বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়ার আইনি ব্যবস্থা করে, তবে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা কমবে।
5. সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া – পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা বাড়াতে হবে, যেন সন্তানরা বুঝতে পারে বাবা-মাকে ফেলে যাওয়া কোনো সমাধান নয়।
বৃদ্ধাশ্রম না থাকার সমাজ গড়তে হলে পরিবারই প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। বাবা-মাকে বোঝা না ভেবে তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করলেই আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।