পানির ঢেউয়ের শব্দ আর সূর্যাস্তের সময় আকাশের লাল আভা পানিতে পড়তেই রক্তিম হয়ে ওঠে চারপাশ। নয়নাভিরাম এই দৃশ্যের দেখা মেলে হাঁসাইগাড়ী বিলে। বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকাবাঁকা সড়ক। নির্মল বাতাস আর লাল শাপলা দর্শনার্থীদের মন কাড়ে। এখানে সময় কাটাতে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। নওগাঁ জেলা শহর থেকে সড়ক পথে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ ও পশ্চিমে গেলে দেখা মিলবে হাঁসাইগাড়ী বিলের। শহরের গোস্তহাটির মোড় থেকে যে কোনো যানবাহনে চড়ে সেখানে যাওয়া যায়। নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত হাঁসাইগাড়ী বিল। এ উপজেলার দুই ইউনিয়ন হাঁসাইগাড়ী ও শিকারপুর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা। এ বিলে বছরে অর্ধেকের বেশি সময় পানি থাকে। এ বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেকের জীবন জীবিকা। প্রতিনিয়ত দূরদূরান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসেন বিনোদনপ্রেমীরা। আবার শুষ্ক মৌসুমে চলে ইরি- বোরোসহ বিভিন্ন রবিশস্যের আবাদ। তবে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে এ স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পাবে। পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর হবে। শিকারপুর ইউনিয়নের খামারবাড়ি মোড় থেকে হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়নের কাটখৈইর বাজারের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে গুটার বিলের মাঝ দিয়ে যাওয়া এ ৬ কিলোমিটার (হাঁসাইগাড়ী, হামরা পাড়া, ভুতলিয়া এবং কাটখৈইর) পথে মানুষের জীবন-যাপন ছিল কষ্টের। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য নওগাঁর কৃতিসন্তান মরহুম আব্দুল জলিলের স্বপ্ন ছিলো রাস্তা তৈরি করাসহ পাকাকরণ করে তার নির্বাচনি এলাকার মানুষের যোগাযোগসহ জীবন-যাপন সহজ করা। ২০১০ সালে প্রায় ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দে রাস্তাটির কাজ শুরু হয়। রাস্তাটি শিকারপুর এবং হাঁসাইগাড়ী ইউনিয়ন ইউনিয়নের সংযোগ হয়। তারপর থেকে এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা পরিবর্তন হতে থাকে। রাস্তাটি হওয়ার পর বিলের পাশে থাকা গ্রামের নাম অনুসারে বর্তমানে এ বিলটি হাঁসাইগাড়ী বিল নামে পরিচিত পেয়েছে। রাস্তাটি নির্মাণের পর থেকেই এ বিলের অবারিত সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়। বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা সড়ক বর্ষায় নয়না ভিরাম দৃশ্য। আবার শুষ্ক মৌসুমে সড়কের দুইপাশে সবুজ ধানের ক্ষেত সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। সারা বছরই এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা থাকে। প্রতি বছর বর্ষায় এ বিলে পানিতে থাকে টইটম্বুর। বাতাসে ঢেউ সড়কে এসে আছড়ে পড়ে। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। বিলের রুপালী জলের অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করাই নয়, ব্যবস্থা রয়েছে নৌকা ভ্রমণেও। সূর্যাস্তের সময় পশ্চিম আকাশের লাল আভা পানিতে পড়ায় সৃষ্টি হয় নয়নাভিরাম দৃশ্যের। বছরে প্রায় ৬ মাস পানি থাকে এ বিলে।স্থানীয়দের কাছে এটি মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত। বাড়তি আনন্দ পেতে শ্যালোমেশিন চালিত নৌকা নিয়ে ঘুরেন পর্যটকরা। অন্তত ২০০টি নৌকা রয়েছে এ বিলে। শুষ্ক মৌসুমে তারা অন্য পেশায় চলে যান। এ বিল কেন্দ্র করে নৌকা মাঝি ও ক্ষুদ্র দোকানি মিলে অন্তত ২৫০ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এদিকে বিলকে কেন্দ্র করে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন দর্শনার্থীদের জন্য এ বছর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেলফি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। বিনোদন শেষে দর্শনার্থীরা ভ্রাম্যমান খাবারের দোকানে মুখরোচক অন্যান্য খাবার উপভোগ করেন। নেই ভাল কোন রেস্টুরেন্টে। একটি নলকুপ ও টয়লেট থাকলেও যা পর্যাপ্ত নয়। তারপরও প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন। তবে ছুটির দিনগুলোতো অন্তত ৫-৬ হাজার দর্শনার্থী হয়ে থাকে। এ বিলের আয়তন প্রায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর।